• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫২ অপরাহ্ন

আমাদের দেশেও একজন ডাক্তার এসেছিলেন… ChannelCox.com

নিউজ রুম / ২৩ ভিউ টাইম
আপডেট : মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০

আহমেদ আবু জাফর:

বছর বিশেক আগের কথা। তখনও ছুঁই ওয়ালা নৌকা ছিলো। নৌকার মাঝে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ভর্তি ছিলো পুরোটা। হঠাৎ একদিন টেকেরহাট বাজারে আগমন ঘটেছিল ডাক্তার কবির হোসেনের। কাঁদে ক্যামেরা আর ব্যাগভর্তি টাকা। চকলেট ছিল অজস্র। সাথে মিনারেল পানির বোতল। ভাবটা এমন ছিলযে দেশী কিছু খেতে পারেন না তিনি। শিশুরা কাছে এলেই চকলেট ধরিয়ে কাছে টানতো, ছবি তুলতো। ডাক্তারকে দেখতে লোকে লোকারণ্য। নৌকা থেকে উঠে বলেছিল ‘এখানেই আমার জন্মভুমি’।

তিনি বলেছিলেন, আজ থেকে বছর ত্রিশেক আগে আমি হারিয়ে যাই। আমি এখন লন্ডনে থাকি। পেশায় একজন ডাক্তার। কিছুদিন আগে ঢাকায় আসি। ঢাকায় ফিরলে আমাকে বারবার জন্মভুমির দিকে টানে তাইতো চলে আসা। আপনারা বলে দিতে পারবেন আমি কার ছেলে? উপস্থিত জনতা তখন তার দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। কেউ চিহ্নিত করতে পারছিলোনা। তখন বলেছিল আমি এই এলাকার গরীব কারো সন্তান হবো। আমার নাম কবির হোসেন। ছোট্টবেলায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। নামও বলতে পারিনি তখন। আমাকে তুলে নিয়েছিলেন স্বরুপকাঠীর এক ডাক্তার দম্পতি। আমি তাদের কাছেই বাবা-মার স্নেহ যত্নে বড় হই। আমাকে তারা পড়ালেখা করিয়ে ডাক্তার বানায়। আমি এখন লন্ডনের নামীদামি ডাক্তার। বাবা মা’র নামও তার স্মরণ নেই। বলেছিলো এই বাজার থেকেই কিছু দূরে আমার বাড়ি। খবর পেয়ে নারী শিশু বৃদ্ধরা তাকে দেখতে ভীড় জমায়। কানাকানি করতে থাকেন সকলে। এই সোনার টুকরো হীরেটা কার সন্তান? ওই দিন বিকেল ঘনিয়ে এলে তিনি কাল আবার আসবেন বলে রিজার্ভ করা ওই নৌকায় ওঠেন। নৌকায় উঠে হাতছানি….।

পরদিন রোববার সকাল দশটার দিকে তিনি আবার পৌঁছলেন টেকেরহাটে। আমার জন্মস্থান ঝালকাঠি। তখন আমি ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। সকলের মুখে বলাবলি টেকেরহাটে লন্ডনী ডাক্তার আইছে। কে ওই সোনার ছেলের বাবা মা। কেউই চিনতে পারছেন না। পাশেই কেএ খান মাধ্যমিক স্কুল। নৌকা থেকে নেমে এবার স্কুলে ওঠেন। কথা বলেন স্কুলের শিক্ষকদের সাথে। আমি ওই স্কুলেরই ছাত্র ছিলাম। যাই হোক। সে অনেক কথা…।

এক পর্যায়ে তিনদিন পর খুঁজে পায় তার পিতা-মাতাকে। টেকেরহাটের পাশেই চাঁদপুরা গ্রাম। ওই গ্রামের জনৈক ছোবাহান নামের এক ব্যক্তির এক শিশুপুত্রকে খুঁজে পাচ্ছিলনা। এরকম গুঞ্জনে ওই ব্যক্তিও তার স্ত্রীকে নিয়ে হাজির হলেন। একপর্যায়ে পরিচয় ঘটলো মা-বাবার। কি যে এক আনন্দঘন মূহুর্ত! কিন্তু এই আনন্দের মাঝেই বিষন্নতার ছাপ। কেউই তা বুঝে উঠতে পারছিলোনা। পরিচিতি হওয়ার পর মন খানেক মিষ্টি নিয়ে পৌঁছলো পিত্রালয়ে। সেখানে কি যে আনন্দ!!!

এরপর যে কান্ড তা কিন্তু কষ্ট এবং হৃদয় বিধারক ও করুন। হাতিয়ে নিয়েছিল অর্ধ কোটি টাকা সাথে ইজ্জত। লন্ডনী পুত্রকে দেখতে ভীড় জমায় ছোহরাবের সকল আত্মীয় স্বজন। ধীরে ধীরে দিন ঘনাতে থাকে। সকলের কাছে প্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হতে থাকেন ডা: কবির। আত্মীয় স্বজনের ছোট ছোট ছেলেমেয়ের হাতে পাঁচশ টাকার নোট দিতে থাকেন। আত্মীয়তার বন্ধন আরো গাড়ো করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিভিন্ন আত্মীয়ের ছেলে মেয়েকে লন্ডন নেয়ার কথাও বলতে থাকেন।

এরই মাঝে জন ত্রিশেক বেকার যুবক-যুবতীকে লন্ডন নেয়ার জন্য পাসপোর্ট করিয়ে ফেলেন। লাখ পঞ্চাশের মতো টাকাও পকটস্থ করেন। ইতিমধ্যে মামাতো বোন সম্পর্কীয় এক যুবতীকে ভিসা করাতে লঞ্চের কেবিনে নিয়ে ঢাকায় ওঠেন। সপ্তাহখানেক ঢাকায় একটি হোটেলে এক সঙ্গে থেকে হঠাৎ একদিন রুম থেকে চম্পট ওই ডাক্তার। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। রাত পেরিয়ে গেলেও ডাক্তার আর বোনের কাছে আসছেনা। তখন মোবাইল ফোন ছিলোনা। পরদিন মেয়েটি কোন উপায়ান্তর না পেয়ে হোটেলের ভাড়া বাকি রেখে লঞ্চে বাড়ি ফিরে আসেন। সেই থেকে আজ বিশটি বছর চলে গেলো ওই ডাক্তার আর এলোনা…। নি:স্ব করে গেছে ওই এলাকার ২০-২৫টি পরিবার।

যাইহোক। এতক্ষন তো বলেছিলাম লন্ডনী ডাক্তারের কথা। এখন বলতে চাই আমেরিকা থেকে ফেরা কুমিল্লার আলোচিত ডাক্তারের কথা। তাকে নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেশপ্রমে বেশ সরব। আসলে ঘটনাটি কি! তিনি কি বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাকের আত্মীয় নাকি অন্যকিছু? এই তথ্য পেতে হয়তো জাতিকে আরো ৪৯ বছর সময় দিতে হবে। আর সমস্যাটাই বা কি! তিনি দেশে এসে এতোটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ারইবা কি কারন! তিনিতো আমেরিকায় ছিলেন। ওখানেও হাজার হাজার বাঙ্গালী রয়েছে। বহু বাঙ্গালী করোনায় মারা গেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে দেখতে পেলাম ওনার কাছে নাকি কিছু বাঙ্গালী চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু উনি নাকি চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ওনাকে নিয়ে কত লোকের হৃদয় বিধারক লেখনিতে ফেসবকু যেনো উথলে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ওনাকে নিয়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনষ্টিটিউটেরন মহাপরিচালক জনাব জাফর ওয়াজেদ দু’কলম লিখেছেন। তাতে এক শ্রেণীর লোকের মাঝে যেন কষ্টের লেলিহান শিখা জ্বলছে। তিনি একজন প্রতিথযশা একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক। তাছাড়া ডাক্তার ফেরদৌস সাহেবের বাড়ি আর জাফর ওয়াজেদের বাড়ি একই জেলায়। ফেসবুক এবং অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারলাম ডা. ফেরদৌস বিএনপি-জামাতের নেতৃত্বাধীন আমেরিকার একটি সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত। আবার শোনা যাচ্ছে তিনি বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা ছিলেন। আসলে কোনটি সত্যি! বিষয়টি নিয়ে আমরা বেশি মাতামাতি না করে দেশের মহামারী করোনা মোকাবেলায় সরকারকে সহযোগিতা করি। সরকারী নির্দেশণা মেনে চলি অপরকে মানতে উৎসাহিত করি।

(বি:দ্র: লেখাটি কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়; শুধুমাত্র জনগনকে সচেতন করে তোলার উদ্দেশ্যই এই লেখা)।

লেখক: আহমেদ আবু জাফর
সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) কেন্দ্রীয় কমিটি।
০১৭১২৩০৬৫০১, মে ৯ ২০২০ খ্রী:

Channel Cox News.


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ