• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৯ অপরাহ্ন

আলিশান জীবন যাপনে তালিকাভুক্ত দালাল মুহিবুল্লাহ মুহিব

নিউজ রুম / ১৩ ভিউ টাইম
আপডেট : বুধবার, ৮ জুলাই, ২০২০

বিশেষ প্রতিবেদক:

সাগর পথে ইয়াবা পাচারে জড়িত থাকার গুঞ্জন থাকলেও কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় দালালি করে আলোচনায় আসেন ইনানীর মুহিবুল্লাহ মুহিব। ইতিমধ্যে মুহিবুল্লাহ নিজেকে শীর্ষ দালাল হিসেবে বেশ পরিচিত করেছে জেলাজুড়ে। নিজ এলাকা ইনানীতে মুহিব ওরফে দালাল মুহিব নামে বেশ খ্যাতিও রয়েছে তার। প্রশাসনের একটি তালিকায়ও দালাল মুহিবের নাম রয়েছে সামনের কাতারে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় র‌্যাবের আলোচিত অভিযানের পর গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান তালিকাভুক্ত শীর্ষ দালাল মুহিব। কিন্তু সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ভাটা পড়ায় ফের সামনে আসতে শুরু করেছে মুহিব। করোনা মহামারীতেই এলএ শাখায় তৎপরতা বেড়েছে মুহিবের। খোদ দালাল মুহিব নিজে দাবী করেছেন, বুধবার (৮ জুলাই) ডিসি অফিসে গিয়েছিলেন তিনি।

বরফের দেশে মুহিবের অবকাশ যাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থার একটি তথ্যেও ভূমি অফিসের চিহ্নিত দালাল মুহিবের নাম বেশ দৃশ্যমান । র‌্যাবের অভিযানে কক্সবাজার এলএ শাখার ‌দুইজন সার্ভেয়ার টাকাসহ আটকের পর নিজেকে আড়াল করে রাখে মুহিব। গ্রেপ্তার এড়াতে কক্সবাজার ত্যাগ করেছিলেন।

দালালির সেই টাকায় মুহিবের আলিশান জীবন যাপন বেশ চোখে পড়ার মতো। ভদ্রতার খোলসে কক্সবাজার এলএ শাখার আশপাশে কয়েকটি মিনি অফিসও গড়ে তুলেছেন। তবে এসব অফিস কয়েকমাস বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি ধীরে ধীরে চালু হতে শুরু করেছে। পাল্টেছে তার দালালির কৌশলও। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে এখন আলিশান জীবন যাপন করে যাচ্ছে মুহিব।

এলএ শাখায় দালালি করে ৫০ কোটি টাকারও বেশি কালো টাকার মালিক বনেছেন। খোদ নিজের এলাকায় এক সময়ের শূন্য মুহিব বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার মালিক বলে জনশ্রুতি রয়েছে। মুহিব উল্লাহ উখিয়া উপজেলার ইনানীর রুপপতি গ্রামের বাসিন্দা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূমি অধিগ্রহন শাখায় দালালি করে ইনানীতে একটি বহুজাতিক কোম্পানির সাথে পার্টনারশীপে স্টার মানের হোটেল নির্মাণ করছে মুহিব। যা ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করে ভাড়ার উপযোগী করে তুলেছে। কালো টাকা অবাধে ঢেলে বছরের ব্যবধানে স্টারমানের এই হোটেলটির প্রায় শতভাগ কাজ শেষ করেছেন।

ঢাকা শহরের ধানমন্ডি এবং নিউ মার্কেট এলাকায় তার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। কক্সবাজারে যখন এলএ শাখার বিরুদ্ধে র‌্যাবের কড়াকড়ি শুরু হয় তখন ঢাকায় গিয়ে নিজ ফ্ল্যাটে আত্মগোপনে ছিলেন দালাল মুহিব।

কক্সবাজার বাস টার্মিনাল এলাকার পাশে ইয়াবা গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত ইসলামপুর এলাকায় জমি কিনে আলিশান বাড়ি তৈরী করেছেন। যে বাড়িতে নিয়মিত অবস্থান নেন তিনি।

এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে সম্পদ কিনেছেন মুহিব। বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে কালো টাকার বিশাল সঞ্চয়। তবে শো হিসেবে ইনানী রয়েল টিউলিপ হোটেলের সামনে বিপুল টাকা খরচ করে বার্মিজপণ্যের দোকান দিয়েছে মুহিব। যে দোকান নামে মাত্র রয়েছে।

ভিআইপি অফিসে বসে এলএ শাখার দালালির লেনদেন করেন মুহিব।
দেশে চলমান করোনা ভাইরাসের সুযোগে মুহিবুল্লাহ নিজেকে ওপেন করেছে। আত্মগোপন থেকে বের হয়ে এখন নিজ এলাকায় বিচরণ শুরু করেছে দালাল মুহিব। ডিসি অফিসেও যাতায়াত আরম্ভ হয়েছে তার। ভয়েসওয়ার্ল্ডের দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে আসে দালাল মুহিবের এই চিত্র।

জানা গেছে, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ হওয়ার পর থেকে জমির মূল্য হু হু করে বেড়ে যায়। সেখানকার অনেক জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়ে। এই সুযোগে কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় আনাগোনা শুরু হয় মুহিবের। জড়িয়ে পড়ে দালালি পেশায়। কন্টাক্ট নিতে থাকে জমির এলএ মামলার ফাইলের। মেরিন ড্রাইভ ছাড়াও মহেশখালী মাতারবাড়ির ফাইলের কাজ শুরু করে ।

ধীরে ধীরে নিজেকে শীর্ষ দালালের কাতারে নিয়ে আসে মুহিবুল্লাহ। প্রশাসনের খাতায়ও তার নাম রয়েছে শীর্ষ দালাল হিসেবে। বেশ কয়েকজন সার্ভেয়ার (বর্তমানে বদলী) এর সাথে তার ছিল বেশ সখ্যতা। তাদের নিয়মিত আড্ডা বসত শহরের নামি দামি ক্যাফে ও রেস্টুরেন্টে। অগ্রিম ফাইলও কিনে নিয়েছিল অনেকের। নিজেকে কৌশলে আড়ালে রেখেই এলএ শাখার মোটা অংকের চেকগুলো তিনি কমিশনের মাধ্যমে ছাড়িয়ে নেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে নিজেকে দালাল নয় দাবী করে মুহিবুল্লাহ ভয়েসওয়ার্ল্ডকে বলেন, আমি জমির ব্যবসা করি কিন্তু দালাল নয়। জমির কাজে প্রায় সময় কক্সবাজার ডিসি অফিসে যাওয়া হয়। আজও ( ৮ জুলাই) গিয়েছিলাম ডিসি অফিসে।

কালো টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার তেমন কোন সম্পদ নেই। কোনো সময়ের জন্য আত্মগোপনে ছিলাম না। সব সময় প্রকাশ্যে ছিলাম। তাছাড়া আমার হোসেন নামে কোন সহযোগিও নেই।’

এলএ শাখার শীর্ষ দালাল মুহিবের আলিশান জীবনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ১ম পর্ব।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ