• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

সামাজিক মাধ্যমে নারী ও শিশুদের ছবিতে কারা খারাপ মন্তব্য করে? কেন করে?ChannelCox.com

নিউজ রুম / ২৭ ভিউ টাইম
আপডেট : সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০২০

তারকা বা জনপ্রিয় ব্যক্তিদের বাইরেও ফেসবুকে অরুচিকর মন্তব্যের শিকার হয়েছেন অনেক সাধারণ মানুষও।

চ্যানেল কক্স ডটকম ডেস্ক:

বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কন্যার ছবিতে খারাপ মন্তব্যকারীদের পুলিশ খুঁজতে শুরু করেছে। অরুচিকর মন্তব্যকারীদের খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে সাকিব সাকিব আল হাসানের স্ত্রী, উম্মে আহমেদ শিশির নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, পাবলিক ফিগার হিসাবে এসব বাজে মন্তব্য তারা পাত্তা দিচ্ছেন না, বরং এই ব্যাপারটিকে বড় করে আলোচনায় নিয়ে আসাটা পছন্দ হয়নি তাদের।

কিন্তু তারপরেও এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা চলছে।

তবে ফেসবুকে নারী ও শিশুদের ছবিতে খারাপ মন্তব্যের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। তারকা বা জনপ্রিয় ব্যক্তিদের বাইরেও ফেসবুকে এরকম আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষও।

সম্প্রতি কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব) সিনহার সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথের ছবি বা অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশীদ মিথিলার ছবিতেও অনেককে অরুচিকর বা খারাপ মন্তব্য করতে দেখা গেছে।

কিন্তু কারো ছবিতে কেন অরুচিকর মন্তব্য করেন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা? এর পেছনে কি মনোভাব কাজ করে?

নারী ও শিশুদের ছবিতে কেন অরুচিকর মন্তব্য?

যারা কারো ছবি বা স্ট্যাটাসে অরুচিকর মন্তব্য করেন, তাদের ভেতর কয়েকটি বিষয় কাজ করে বলে বলছেন সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. মেখলা সরকার বলছেন, যারা এই ধরণের মন্তব্য করে, তাদের মধ্যে একটা মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা থাকে। মহিলাদের নিয়ে কথা বলতে তাদের ভালোই লাগে।

”তাদের মধ্যে আত্মসম্মানের সমস্যা থাকে। যেভাবে তারা বড় হয়েছেন, সেখানে সমস্যা থাকে, এটা যে একটা নেগেটিভ জিনিস, সেটা সে বুঝতে পারে না।”

তিনি মনে করেন, এ ধরণের মানুষজন সাধারণত অন্যদের কাছে মনোযোগ পায় না। ফলে এভাবে সামাজিক মাধ্যমে তারা অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। সেটা নেতিবাচক হলেও সে মানুষের মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করে।

তবে যারা এরকম মন্তব্য করেন, তারাও আবার অনেক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর কাছ থেকে লাইক কমেন্টসও পান, সেটাও তাদের আবার একাজে উৎসাহিত করে।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. মেখলা সরকার বলছেন, যারা এরকম মন্তব্য করছেন, তারাও কিন্তু অনেকের কাছ থেকে লাইক, কমেন্ট পান। পজিটিভ-নেগেটিভ, যেকোনো ধরণের কমেন্টই তাকে উৎসাহিত করে।

”এটার সাথে তার শিক্ষা বা চাকরি বা অর্থনৈতিক অবস্থানের সম্পর্ক নেই। দেখা যাবে, সমাজের ভালো অবস্থানের একজন হয়তো এ ধরণের আচরণ করছে, কিন্তু কম শিক্ষিত একজন হয়তো সেটা করছে না। আসলে প্রকৃত শিক্ষা তো এখানে হচ্ছে না।” তিনি বলছেন।

শিশুদের জন্য মোবাইলের ব্যবহার নিরাপদ করতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সিস্টেম চালু করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সমাজবিজ্ঞানী সাদেকা হালিম বলেছেন, এক্ষেত্রে অসচেতনতা, মানসিক বিকৃতি এবং কট্টর পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ কাজ করে।

তার মতে, একজন নারী তিনি যে বয়সেই হন না কেন তাকে সমাজে এখনও যৌনবস্তু হিসেবে বিচার করা হয়।

এছাড়া তারকাদের জীবনের প্রতি ঈর্ষাবোধ ও হীনমন্যতা এই অরুচিকর মন্তব্যগুলোয় প্রতিফলিত হয় বলে তিনি মনে করেন।

“সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহজেই যা ইচ্ছা লেখা যায়। যেটা অন্য কোথাও সম্ভব না। যারা এ ধরণের মন্তব্য করে তারা নারীকে মানুষ হিসেবে দেখে না, নারী যে বয়সের হোক সে ভোগের বস্তু। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি তাদের কোন সম্মানবোধ নেই,” বলেন সাদেকা হালিম।

কোন শ্রেণীর মানুষ এ ধরণের কটু মন্তব্য বেশি করে?

বাংলাদেশের একজন সাইবার বিশেষজ্ঞ জেনিফার আলম বলছেন, আসলে সব ধরণের শ্রেণীর মানুষই এ ধরণের মন্তব্য করে। তবে সবচেয়ে বেশি করে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষজন।

”এজন্য তাদের মধ্যে হতাশা ও বিনোদনের অভাব একটা প্রধান কারণ। এছাড়া আমাদের এখানে সাধারণ সৌজন্য বোধের অনেক অভাব রয়েছে। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে মানুষের সাথে ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে, তেমনি ইন্টারনেটেও বিচরণের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। কিন্তু এই ব্যাপারে আমাদের দেশের মানুষের সেই সচেতনতা তৈরি হওয়ার আগেই অনেকের হাতে ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি চলে গেছে।

”ফলে অনেকের মধ্যে যে হতাশার ব্যাপার থাকে, দিন শেষে সে সেটা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সেই হতাশার বহিঃপ্রকাশ এসব কটু মন্তব্য। যাকে নিয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে, সে যে কষ্ট পাচ্ছে, এটা যে একধরণের সাইবার বুলিং, সেই সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। তারা মনে করেন, ফোন-ইন্টারনেট থাকলেই তারা যে কাউকে যেকোনো কিছু লিখে দিতে পারেন, ম্যাসেজ করতে পারেন। ” বলছেন জেনিফার আলম।

সাইবার অপরাধ ঠেকানোর মূল ওষুধ সচেতনতা বাড়ানো।

খারাপ মন্তব্য করার পেছনে কি যুক্তি দেখান মন্তব্যকারীরা

ফেসবুক বা সামাজিক মাধ্যমে খারাপ মন্তব্য করার কারণে বিভিন্ন সময় অনেককে আটক করেছে বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

গ্রেপ্তারকৃতরা এরকম কর্মকাণ্ডের পেছনে কি যুক্তি দেন, জিজ্ঞেস করেছিলাম ইউনিটের প্রধান আ ফ ম আল কিবরিয়ার কাছে।

তিনি বলছেন, ”নিজেদের প্রচারণা বাড়ানোর জন্য কেউ কেউ এটা করে, পেজের ভিউ বাড়ানোর জন্য। আরেক ধরণের মানুষ মনে করে, এটা একটা আলোচনার টপিক হলো। আমি একটা কমেন্ট করলাম, তাতে আমাকে গালিগালাজ করলেও অনেক মানুষ আমার প্রোফাইলে ঢুকবে। হয়তো আমার ফলোয়ার বাড়লো, ফ্রেন্ড বাড়ল। এসব উদ্দেশ্যে অনেকে করে।”

”আরেক গ্রুপ আছে এমন এমনি করে। তাদের মধ্যে কিছু স্যাডিস্ট থাকে, মেন্টালি ডিস্টার্বড থাকে, তাদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়, কিছুটা বিকৃতি থাকে।”

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকে ভাবেন, ফেসবুক বা সামাজিক মাধ্যমে এরকম কিছু মন্তব্য করলে তার কিছু হবে না। অনেক সময় তারা ফেক আইডি ব্যবহার করে এসব মন্তব্য করেন। তারা ভাবেন, তাদের কেউ ধরতে পারবে না বা পরিচয় জানতে পারবে না।

যদিও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর তাদের সেই ভুল ভেঙ্গে যায়।

সাইবার বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরকম বুলিংয়ের শিকার হওয়ার পরেও অনেকে আইনি সহায়তা নিতে চান না।

সাইবার বুলিংয়ের আইনি প্রতিকার

সাইবার বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরকম বুলিংয়ের শিকার হওয়ার পরেও অনেকে আইনি সহায়তা নিতে চান না।

ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরকম ব্যক্তিরা শাস্তির মুখোমুখিও হন না। তবে আইনি পদক্ষেপ নেয়ায় অনেককে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে।

সাইবার বিশেষজ্ঞ জেনিফার আলম বলছেন, সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েও আমাদের মানুষ যে কাজটি সহজে করতে চান না, সেটি হলো আইনি প্রতিকার চাওয়া বা আইনি পদক্ষেপ নেয়া।

”আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ সক্ষমতা আছে যেকোনো ধরণের সাইবার বুলিং বা সাইবার হ্যারাজমেন্ট ট্র্যাক করার এবং তাদের আইনের আওতায় আনা। কিন্তু যিনি ভিকটিম, তিনি যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেন, তাহলে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু করতে পারবে না। তাই হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করার ব্যাপারটা নিশ্চিত করা জরুরি।” তিনি বলছেন।

সাইবার ক্রাইম বিভাগের প্রধান আ ফ ম আল কিবরিয়া বলছেন, ‘ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী কিছু কিছু ধারা আছে কগনিজেবল অর্থাৎ পুলিশ চাইলে মামলা নিতে পারবে এবং গ্রেপ্তার করতে পারবে। আর কিছু ধারা আছে নন-কগনিজেবল, অর্থাৎ এখানে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল মামলা করতে হবে। আদালতের নির্দেশে পুলিশ তদন্ত করবে এবং ব্যবস্থা নেবে। ”

”ফেসবুকে গালি দেয়া বা কটু মন্তব্য করার বিষয়গুলো আইন অনুযায়ী নন-কগনিজেবল অপরাধের মধ্যে পড়েছে। ফলে ভিকটিমকে ট্রাইব্যুনাল বা আদালতে মামলা করতে হয়। অথবা থানায় জিডি করতে পারেন। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই প্রতিকার চাইতে হবে।” তিনি বলছেন।

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, যে কেউ সাইবার অপরাধ, হয়রানি বা বুলিং শিকার হলে অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নেবেন।

”আপনি থানায় জিডি করুন, সেটার তদন্ত করবে পুলিশ। অথবা চাইলে আপনি কোর্টেও মামলা করতে পারেন।” তিনি বলছেন।

Channel Cox News.


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ