• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৫:০৬ অপরাহ্ন

মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী ভাই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি ১০ মহল্লা

নিউজ রুম / ১০৯ ভিউ টাইম
আপডেট : বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৯

ক্রাইম রিপোর্টার :
কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা এলাকায় মাদক কারবার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিন দিন বাড়ছে। বাসাবাড়ি কেন্দ্রিক বসানো হয় জোয়ারবোর্ড। কালো টাকায় অট্টালিকা বানাচ্ছে এককালের পথের ভিখারীরাও।
খরুলিয়া পূর্ব বাজারপাড়া, মুন্সির ডেইল, হিন্দুপাড়া, সুতারপাড়া, বড়ুয়াপাড়া, পূর্ব খরুলিয়াসহ অন্তত ১০ টি মহল্লার ১০ হাজার মানুষ সন্ত্রাসী সন্ত্রাসী ভাই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা না পারছে প্রতিরোধ-প্রতিবাদ করতে, না পারছে সইতে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব অপরাধ কর্ম চলছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, খরুলিয়া বাজারপাড়ার ইউছুপ আলীর পুত্র শওকত আলী পুতুর নেতৃতে প্রায় একযুগ ধরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলছে। গড়ে ওঠেছে কথিত ‘পুতু বাহিনী’। এ বাহিনী রয়েছে তার দুইভাই- লিয়াকত আলী ও দেলোয়ার। তিন ভাইয়ের রাম রাজত্ব কায়েম হয়েছে খরুলিয়া এলাকায়। এমন কোন কাজ নাই, যা তারা করে না।
খরুলিয়া জেলার ঐতিহ্যবাহী গরুর বাজার। এই বাজারের দোকানদার ও গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে। চাঁদা না দিলে গরু ছাগল ইত্যাদি পশু বিক্রি করা দায় বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে।
লিয়াকত আলী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। দেলোয়ারকে সম্প্রতি ইয়াবাসহ আটক করে র‌্যাব। কারান্তরীণ এই দুই ভাইয়ের আরেক মায়ের দুই সন্তান সাদ্দাম হোসেন ও রাজা মিয়াও নানা অপরাধের সাথে জড়িত। ৫ সন্ত্রাসী ভাইয়ের কাছে জিম্মি এলাকাবাসী। তবে কোনোভাবে গ্রেপ্তার হচ্ছে না অপরাধীদের গডফাদার শওকত আলী পুতু।
স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, টার্গেট কিলিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মোটর সাইকেল ও গরু চুুরিসহ নারা অপরাধ কর্ম সংঘটিত করে আসছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, সম্প্রতি সময়ে এক গরু ব্যবসায়ী থেকে ১৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় পুতু বাহিনী। ঘাটপাড়ার এলাকার ডেকোরেশন ব্যবসায়ী সিরাজের ভাগিনা নানার বাড়িতে বেড়াতে গেলে অস্ত্রের মুখে তার ১৭ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। হোটেল ব্যবসায়ী গফুরের বোন একটি টমটম বিক্রি করে টাকা নিয়ে যাওয়ার পথে দিনদুপুরে অস্ত্রের মুখে টাকাগুলো ছিনিয়ে নেয়। সুতারচরের তরকারি ব্যবসায়ী আবদুল মালেকের ১৬ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। মুন্সিবিলের মোজাম্মেলের এক ছেলের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এক ভ্রাম্যমান হকার থেকে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। এক হিন্দু পরিবারে তান্ডব চালিয়ে সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়। আরো একটি হিন্দু পরিবারের ১ একর ৪০ শতক জমি দখল করেছে।
খরুলিয়াবাজারের বাদশা মিয়ার গ্রিলের দোকানও ডাকাতি করেছে দিনদুপুরে। আকস্মিক অনেক ব্যক্তিকে আটকে রেখে জিম্মি করে টাকা আদায় করে। খামারপাড়ার একটি বাড়িতে টাকা পাওনার দাবি করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। আরমানের বাড়িতে কর্মরত এক শ্রমিক থেকে পোলট্রি খাদ্যের ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। প্রবাসী শামসুল আলমের নির্মাণাধীন কমিউনিটি সেন্টার থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পুতুসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী ওই ভবনে ইট-পাটকেল ছুড়ে।
পুতু বাহিনীর সন্ত্রাসীরা গত আট বছর আগে সাবেক জেলা প্রশাসকের গাড়ি ডাকাতির করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারান্তরীণ ছিলো পুতু।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে, বিভিন্ন স্থান থেকে মোটর সাইকেল চুরি করে এলাকায় নিয়ে আসে চিহ্নিত সিন্ডিকেটের সতস্যরা। ঘরে ঘরে বসাই মাদকের হাট। প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথেও তাদের হাত রয়েছে বলে জানা গেছে। যে কারণে পুকুর মতো চিহ্নিত অপরাধীরা বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘পুতু বাহিনী’তে ডজনখানেক সদস্য রয়েছে। রাজা মিয়া, সাদ্দাম প্রকাশ সাউদ্দ্যা, লিয়াকত আলী, দেলোয়ার ও মেহেদি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
ঝিলংজা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শরীফ উদ্দীন জানান, পুতুর পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে বাজারের পূর্বপাশের এলাকাকে জিম্মি করে রেখেছে। এসব মানুষ পুতু বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। ফলে যুগের পর জিম্মি অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছে তারা। তবে দীর্ঘদিন পরে হলেও চেয়ারম্যানের সহায়তায় সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু হয়েছে।
ঝিলংজা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুর রশিদ জানান, পুতু বাহিনীর অত্যাচার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। অতীতে বিভিন্ন সময় এই বাহিনীর সন্ত্রাসী পুতু, রাজা মিয়া ও সাদ্দামসহ অন্যদের আটক করে জনগণ পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিল। কিন্তু কয়েকদিন কারাগার থেকে বেরিয়ে আবার মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায়। এদেরকে নির্মূল করতে হলে পুলিশকে কার্যকর এ্যাকশন নিতে হবে।
ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান জানিয়েছেন, ঐতিহ্যবাহী খরুলিয়া বাজারের দিনদুপুরে ডাকাতি ও লুটপাট চালায় পুতুর লোকজন। ব্যবসায়ী থেকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। যেভাবে হোক এই সন্ত্রাসী বাহিনী দমন করতে হবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) খাইরুজ্জামান জানান, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। চিহ্নিত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ