• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৭ অপরাহ্ন

মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর মহাজলাশয় — আনম রফিকুর রশীদ

নিউজ রুম / ২৪ ভিউ টাইম
আপডেট : সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর নাব্যতাহীন জলাশয়। আমাদের অভিভাবকেরা সন্তানদেরকে ভাগাড়ে পাঠিয়ে পরিতৃপ্ত।

শিক্ষার্থীরা গ্রেট ওয়ালের অভ্যন্তরে ফিবছর একই কয়েদির কাছে নিরানন্দ দীক্ষা গ্রহণে মহাব্যস্ত। ভেতরের পাঠদান পদ্ধতির মহড়া দেখার ওয়ালভেদি দৃষ্টিক্ষমতা অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ কারও নেই। সবাই অন্ধ সমর্থক।

আমার ধারণা, উপরিযুক্ত অংশে কী বলা হলো, হয়তো, অনেকেই বুঝেননি। বোঝার কথাও না। কারণ, আমরা প্রবন্ধ বললে রচনা বুঝি, উৎকৃষ্ট ভাবের বন্ধন বুঝি না। “গরু গৃহপালিত প্রাণী। দুটি কান, চারটি পা ও একটি লম্বা লেজ আছে”– এভাবে বোঝাতে হয়। সত্যিকথা বলতে কী, গরুর কানে রাখালের বাশির সুর আর কর্তৃপক্ষ বা অভিভাবকের নিকট পাঠ্যসূচি বরাবরই অভিন্ন।

৩০ হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকুরি রত ৫ লক্ষাধিক শিক্ষক। সংখ্যানুপাতে সরকারি সংখ্যা স্বল্প, অনুল্লেখযোগ্য। সিংহভাগ শিক্ষার্থীর আস্তানা এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ে। যেখানে শিক্ষকদের বদলির কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে তাদের কয়েদির মতো বন্দি জীবন।

চিড়িয়াখানার খাঁচাবদ্ধ বাঘ আত্মতেজ ও শৌর্যবীর্য হারিয়ে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে অলস সময় কাটায়। অভ্যস্ততার কারণে বাইরের মুক্তাঙ্গনের পরিবর্তে খাঁচাকেই আনন্দলোক মনে করে। বেসরকারি শিক্ষকেরাও একই বিদ্যালয়ে থাকতে থাকতে আত্মসম্মান ও মূল্যবোধ কী তা একেবারেই ভুলে গেছেন। বদলির কথা শুনলে হীনমন্যতায় ভোগেন আর ভয় পান। নতুন পরিবেশে, নতুন শিক্ষার্থীর কাছে নিজেকে উপস্থাপনের লজ্জা, ছলচাতুরী অজুহাতে ঢাকেন। বদলির কল্যাণে একঘেয়েমি দূর হয়, কর্মোদ্দীপনা ও প্রাণচাঞ্চল্যতা বাড়ে, তা বিশ্বাস করতে অসামর্থ্য তারা। তবে, দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক যে একেবারে নেই, তা নয়। এখানে সমস্যা আরও জটিল। তারা এমন কিছু কারবারে জড়িয়ে গেছেন, যে কারণে শিক্ষকতা তাদের কাছে সেকেন্ড বিজনেস। প্রয়োজনে শিক্ষকতা ছাড়বেন, তবু, বদলিতে না।

কখনও কখনও তরুণ ও স্বাধীনচেতা শিক্ষকেরা বদলির দাবি তুলেন। তাদের বন্দিশিবির গুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়, বদলি বিরোধী অদৃশ্য শক্তির দোর্দণ্ড প্রতাপে। এক্ষেত্রে শিক্ষক সমিতিগুলোর নেতারা গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারতেন, কিন্তু তারা দ্বিধাবিভক্ত।

শিক্ষক সমিতির সংখ্যা অর্ধ সেঞ্চুরি প্লাস। শিক্ষাদান যাদের ব্রত, তাদের এতো দ্বিধাবিভক্তর কারণ সহজে অনুমেয়। অধিকাংশ নেতা অবসরপ্রাপ্ত, সুবিধাভোগী। বয়োবৃদ্ধ, জগদ্দল পাথর। উনাদের নিকট পদপদবি যেনো যক্ষের ধন। কল্যাণকর কোনো কর্মসূচি নেই, একে অপরের সমালোচনা করেই সময় পার।

শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর একই বিষয়গুলো একই শিক্ষকদের কাছ থেকে গতানুগতিক পদ্ধতিতে গলাধঃকরণ করে। বৈচিত্র্য ও ভিন্নতর স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ রুদ্ধ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মননশীল ও সৃজনশীল প্রতীভার বিকাশ না হওয়ার মৌলিক সমস্যা এখানেই। তাই, বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরকে মহাজলাশয় বললে অত্যুক্তি হবে না । ভাগাড়ে মৃত পশুর মতো সন্তানদেরকে আমরা জলাশয়ে নিক্ষেপ করছি।

এই মহাসমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে অভিভাবক সচেতনতা। সন্তানদের ভবিষ্যত বিনির্মাণ কল্পে আমরা সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করছি শিক্ষায়। শিক্ষকদের শতভাগ বেতন দিচ্ছে সরকার। অভিভাবকেরা আজ চাইলে, শিক্ষকদেরকে বদলি করতে, আগামীকালই বাধ্য হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অদৃশ্য গোপনীয় ডেরা নয়, নয় কারাগার। এখানে চৌসীমানায় গ্রেট ওয়ালের দরকার কী! আনন্দলোকে আলোক যাত্রীদের চলাচলের পথ থাকুক, বাধাবিঘ্নহীন মুক্ত-স্বাধীন।

আনম রফিকুর রশীদ
কবি


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ