• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন

কক্সবাজারে ঘুষের টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ! ChannelCox.com

নিউজ রুম / ১৭ ভিউ টাইম
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

জসিম উদ্দীন:

স্বেচ্ছায় কেউ ঘুষ দিলেও নিচ্ছে না উল্টো মামলার হুমকি ধমকি দিয়ে আদায়কৃত ঘুষের টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছে অনেক পুলিশ সদস্য। কেউ বা টাকা ফিরিয়ে দিতে না পারলেও নিজের অতীতের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অনুতপ্ত হয়ে মাফ চাইছেন ভুক্তভোগীদের কাছে।

অবিশ্বাস্য হলেও সাম্প্রতিক এ ধরনের কয়েকটি ঘটনার তথ্য পাওয়াগেছে। তাও আবার প্রদীপকাণ্ডে শত অভিযোগে জর্জরিত কক্সবাজার জেলা পুলিশ সদস্যদের।

গত ৩১জুলাই মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খান নিহত হবার পর পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হওয়ায় অতীত কর্মকাণ্ডের কারনে আতংক বিরাজ করছে জেলা পুলিশের অনেক সদস্যদের মাঝে।

সিনহা হত্যার পর থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ থানার ওসিসহ কক্সবাজার জেলার শতাধিক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগীরা।

মামলার এজহারে বেশির ভাগ বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা, মিথ্যা মামলা, চাঁদাবাজিসহ নানান ধরনের হয়রানির অভিযোগ আনা হয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

একদিকে মামলা অন্য দিকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের সুনাম ফিরিয়ে আনতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। এর ফলে পরিস্থিতির অমূল পরিবর্তন আসছে।

জানাগেছে, সাম্প্রতিক যেসব স্পর্শ কাতর ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মামলা করতে থানায় হাজির যাচ্ছেন জেলার যে কোন থানায় সহজে মামলা রেকর্ড করছে থানা পুলিশ। এসময় মামলার জন্য কোন টাকা চাওয়া হচ্ছেনা। এমনকি স্বেচ্ছায় ঘুষ দিতে চাইলেও পুলিশ তা ফিরিয়ে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার সদরের বাসিন্দা আমেনা বেগম জানান, তিনি প্রতিবেশির হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হলেও টাকার জন্য সদর থানা তার অভিযোগ গ্রহণ করেননি। তবে কয়েকদিন আগে টাকা ছাড়াই তার অভিযোগ গ্রহণের পর ঘটনাস্থলে গিয়েছেন পুলিশ। এসময় পুলিশ সদস্যরা তার কাছে কোন টাকা দাবি করেনি। গাড়িভাড়া কথা বলে কিছু টাকা দিতে চাইলেও পুলিশ তা ফিরিয়ে দেন বলে জানান এই নারী।

টেকনাফের বাসিন্দা আবুল কালাম পেশায় তিনি টমটম চালক। তিনি জানান, গত ১৮ জুলাই তাকে ইয়াবা দিয়ে চালান করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নেয় টেকনাফ থানার সাগর নামে এক পুলিশের কনস্টেবল। পুলিশ সদস্যের সঙ্গে ছিল স্থানীয় এক দালাল।

আবুল কালামের ভাষ্যমতে সিনহা হত্যার পর পুলিশের বিরুদ্ধে যখন একের পর এক মামলা হচ্ছে তখন ডকুমেন্ট থাকায় তিনিও ওই পুলিশ সদস্যকে মামলার হুমকি দেন। এরই প্রেক্ষিতে কয়েকদিন আগে তাকে ১৫ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে তার পায়ে ধরে মাফ চান কনেস্টেবল সাগর ও দালালচক্রের সদস্য।

টেকনাফের বাসিন্দা স্থানীয় সাংবাদিক রহমত উল্লাহ জানান, সিনহা হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপের ছত্রছায়ায় টেকনাফ পুলিশ সদস্যরা যে যার মতই চাঁদাবাজি করেছেন। এখন মামলা ও পত্রিকায় ছবিসহ সংবাদ প্রকাশিত হবে এ ভয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আদায়কৃত ঘুষের টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছে বলে শুনা যাচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, টেকনাফে মাদক নির্মূলের নামে হত্যাকাণ্ড জানতে পেরে আমরা বিস্মিত হতবাক। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা মনে করি যা হয়েছে তা বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড। এসবের কারনে পুলিশের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। এখন পুলিশ বাহিনীকে স্ব উদ্যোগে সাধারণ মানুষের আস্তা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিতে হবে। সেবা প্রদানের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করে পুলিশের যে অতীত গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা তা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করতে হবে।

কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবি আবদুল মান্নানের মতে পুলিশ সদস্যদের ঘুষ বানিজ্য ও অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত রাখতে হলে উন্নত নীতিনৈতিকতার প্রশিক্ষণে আরও জোর দিতে হবে। পাশাপাশি বাহিনীর সুনাম ধরে রাখতে যে কারোও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে পুলিশ কর্তৃক আক্রান্ত হলে নির্ভয়ে অভিযোগ করতে পারেন সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে পুলিশ বাহিনীকেই।

কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাসুম খান বলেন, সদর থানায় প্রতিদিন যেসব অভিযোগ নিয়ে ভুক্তভোগীরা আসেন অর্থ এবং ভোগান্তি ছাড়াই যাচাই-বাছাই করে অভিযোগ এবং মামলাগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অপরাধ কর্মকান্ড বা ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এমন পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশ বাহিনীর সুনাম ধরে রাখতে যা করা দরকার সবই করা হচ্ছে। কক্সবাজার পুলিশের ভালো কর্মকাণ্ড গুলো অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অপরাধকর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, এরমধ্যে আমি চট্টগ্রাম রেঞ্জ যোগদানের পর থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন থানা পরিদর্শন করেছি, কল্যাণ সভা করেছি। সেখানে পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক ও হয়রানি ছাড়াই সেবা প্রদানের গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

ডিআইজি বলেন, পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কেউ পুলিশ দ্বারা আক্রান্ত হলে নির্ভয়ে অভিযোগ করুন। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Channel Cox News.


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ