• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৩ অপরাহ্ন

ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন ৫ পুলিশ

নিউজ রুম / ১৮৫ ভিউ টাইম
আপডেট : সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯
- ছবি : নয়া দিগন্ত

এক টেলিকম ব্যবসায়ীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্ঠা ও মারধোরের ঘটনায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার চারজন সহকারী উপ-পরির্দশক (এএসআই) রুহুল আমিন, আনোয়ার, কামরুল ও একজন কনস্টেবল আলামিনকে সোমবার ময়মনসিংহ পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) সাখের হোসেন সিদ্দিকী এর সত্যতা নিশ্চিত করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বলুহা গ্রামের আব্দুল কদ্দুছের ছেলে বর্ষা টেলিকমের মালিক মোবাইল ফোন ও ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী খোকন মিয়া (৩০) ইয়াবা বিক্রি করেন, এমন তথ্যের অভিযোগে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গৌরীপুর থানার থানার এএসআই আব্দুল আউয়াল, রুহুল আমিন, আনোয়ার হোসেন, কামরুল ও কনস্টেবল আল আমিন এই পাচঁ সদস্যের পুলিশ দল রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তার দোকানে অভিযান চালায়।

এসময় পুলিশ তার দোকান থেকে একটি সাদা পলিথিনে এক প্যাকেট (১০ পিস) ইয়াবা ট্যাবলেট খুঁজে পান। এসময় ব্যবসায়ী খোকনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা বাধা দেন। এ ইয়াবার প্যাকেট তার নয় দাবি করে তাৎক্ষণিক খোকন এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে উপস্থিত লোকজনের সামনে তাকে মারধর করেন পুলিশ সদস্যরা। একজন ভাল মানুষকে মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা ও মারধরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনগণ তখন পুলিশদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

এসময় এসআই রহুল আমিন ও কামরুল পালিয়ে গেলেও বাকি ৩ পুলিশ সদস্যকে স্থানীয় অটো টেম্পু মালিক সমিতির ঘরে অবরুদ্ধ করেন রাখেন জনতা। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। পরে রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে জনতার হাতে অবরুদ্ধ হওয়া তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) সাখের হোসেন সিদ্দিকীসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা।

বর্ষা টেলিকমের মালিক খোকন মিয়া বলেন, ওইদিন রাত সাড়ে ১০ টার দিকে পাঁচজন সাদা পোশাকদারী পুলিশ আসেন তার দোকানে মোবাইলে টাকা লোড করতে। এসময় একজন তাকে বলেন, ‘সাইড দাও আমরা তোমার দোকান তল্লাশি করব’। একপর্যায়ে তারা তল্লাশির নামে দোকানের সিসি ক্যামেরার চার্জার খুলে ফেলেন। তিনি তখন সিসি ক্যামেরা ওপেন করে তল্লাশির জন্য পুলিশদের অনুরোধ করেন। তার অনুরোধ না রেখেই পুলিশ দোকানে তল্লাশি শুরু করেন।

তল্লাশিকালে এক পুলিশ দোকানের সামনে কাউন্টারে রাখা ইলেকট্রনিক তারের কয়েলের ভেতর থেকে প্লাস্টিকে মোড়ানো এক প্যাকেট ইয়াবা ট্যাবলেট বের করে এনে খোকনকে হাতকড়া পড়ান। তাৎক্ষণিক খোকন এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় পুলিশ তাকে মারধর করেন। এতে সে আহত হয়ে পড়লে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়।

পুলিশের এএসআই আওয়াল জানান, স্থানীয় এক সোর্সের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে তারা খোকনের দোকানে এ অভিযান চালান। তল্লাশিকালে তার দোকানে একটি প্যাকেটের মধ্যে ১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। কিন্তু স্থানীয়রা খোকনকে ভালো লোক দাবি করে তাদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি ঘটনাস্থলে গিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ।

গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখের হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনার তদন্ত চলছে। আপাতত পাঁচজন পুলিশ সদস্যকে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।

গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমার থানার দারোগারা মাদক উদ্ধারে ব্যবসায়ী খোকন মিয়ার দোকানে তল্লাশি করে এবং মাদকও উদ্ধার করা হয়েছে এ সময় খোকন মিয়া অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) ঘটনার তদন্ত করছেন।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ