• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২০ পূর্বাহ্ন

ইয়াবার ছড়াছড়ি : র‍্যাবের নাম ভাঙিয়ে লক্ষাধিক ইয়াবা আত্মসাৎ করল পুলিশের সোর্স!

Md. Nazim Uddin / ৩১ ভিউ টাইম
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০

বিশেষ প্রতিবেদক:

মেজর (অব:) সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডকে কেদ্র করে এক যোগে কক্সবাজার জেলার সব পুলিশের বদলীর পর জেলার সব থানার চিহৃত দালালরাও আত্মগোপনে চলে যায়। তবে আবারও সুযোগ বোঝে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দালালরা। থানার আশেপাশে চিহৃত দালালদের অবস্থান এমনটাই জানান দিচ্ছে।

শুধু তাই নয়, এবার কক্সবাজারে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান র‍্যাবের নাম ভাঙিয়ে একটি বাস কাউন্টারে ইয়াবা উদ্ধারের অভিযান পরিচালানা করে লক্ষাধিক ইয়াবা আত্মসাৎতের অভিযোগ উঠেছে থানার চিহৃত দালাল নুরুল ইসলাম প্রকাশ থানার দালাল নুরুর বিরুদ্ধে।

গত শনিবার (২১ নভেম্বর) রাতে কক্সবাজারের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এর ইউনিক বাস কাউন্টার এই ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনক কারনে ইউনিক পরিবহণের সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি চেপে রাখার চেষ্টা করেন।

পরে এ বিষয়ে প্রতিবেদক অনুসন্ধানে নামলে ঘটনায় জড়িতরা রবিবার গভীর রাতে কক্সবাজার সদর থানায় হাজির হয়ে নাম মাত্র এক হাজার ৭৯০ পিস ইয়াবা জমা দিয়ে বাকি সব ইয়াবা আত্মসাৎ করে চক্রটি। বিষয়টি স্বীকার করেছেন কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ।

এর আগে ইয়াবা আত্মসাৎ এর বিষয়টি প্রতিবেদকের নজরের দেন মাস্টার শাহাদাত হোসাইন।

অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম প্রকাশ থানার দালাল কক্সবাজার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত ভেইটখাইয়া (প্রকাশ) বারমাইয়া ভেইটখায়ার ছেলে। নুরু একজন চিহৃত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীরদের গডফাদার বলে জানাগেছে।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, গত শনিবার (২১ নভেম্বর) কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ইউনিক কাউন্টার থেকে রাত সাড়ে ১১টার ঢাকাগামী শেষ বাসটির টিকেট কাটেন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একটি চক্র। পরে ইয়াবা পাচারকারী চক্রের একজন ইয়াবা ভর্তি কাটুন নিয়ে বাস উঠার জন্য কাউন্টারে অপেক্ষা করছিলেন।

ওই সময় অপর আরেকটি স্থানীয় ইয়াবা সিন্ডিকেটের কয়েকজন ইয়াবার কাটুনটি ছিনতাইয়ের উদ্দ্যেশে কাউন্টারে হানা দেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে ইউনিক কাউন্টারে ম্যানেজারের কাছে ইয়াবা ভর্তি কাটুনটি জমা রেখে সেখান থেকে ছটকে পড়েন ইয়াবা বহনকারী।

বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কাউন্টারে ম্যানেজার রাকিব বিষয়টি কক্সবাজার ইউনিক পরিবহণের জিএম রহিমকে অবগত করেন। পরে রহিম তৎকালিক থানার চিহৃত দালাল নুরুকে নিয়ে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হন।

জানাগেছে, থানার চিহৃত দালাল নুরুকে দেখে সাদা পোশাকে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিত থাকতে পারে ভেবে সেখান থেকে পালিয়ে যায় ইয়াবা পাচারকারী ও ছিনতায়ে উদ্দ্যেশে হানা দেয়া চক্রের সদস্যরা।

ঘটনা প্রত্যক্ষকারীদের দেয়া তথ্যমতে,নুরু সেখানে উপস্থিত হয়ে প্রথমে ইয়াবার কাটুনটি নিজের আয়ত্তে নেন। এর পর মোবাইল কানে দিয়ে র‍্যাবের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে স্যার সম্ভোধন বড় গলায় কথা বলার অভিনয় করেন। তাৎক্ষণিক ইয়াবা ভর্তি কাটুনটি কক্সবাজার র‍্যাব ১৫ এর কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ওইদিন রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ঘটনা স্থল ত্যাগ করেন নুরু ও আবদু রহিম।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে কাটুনটিতে কমপক্ষে ১০ কার্ড অর্থাৎ এক লাখ পিস বা তার বেশি ইয়াবা ছিল।

ঘটনার সত্যতটা স্বীকার করে নিয়েছেন জিএম আবদু রহিম। তিনি বলেন, বাস টার্মিনালের কাউন্টারের ম্যানেজার রাকিব ইয়াবা ভর্তি কাটুনটির বিষয়টি আমাকে অবগত করলে আমি পুলিশের কারো সাথে পরিচয় না থাকায় তৎকালিন ফোনে যোগাযোগ করে পুলিশের সোর্স নুরুল ইসলামকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই।

পরে ইয়াবা ভর্তি কাটুনটি উদ্ধারের পর র‍্যাবকে দেয়ার কথা বলে নুরু তার হেফাজতে নেয়। ওইদিন রাত দেড়টার দিকে ইয়াবা র‍্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে- র‍্যাব পরিচয় দানকারী এক ব্যক্তির সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দেন।

কিন্তুু পরেরদিন রাতে অর্থাৎ রবিবার (২২ নভেম্বর) গভীর রাতে নুরু আমাকে ফোনে বলেন, ইয়াবা অল্প হওযায় র‍্যাব তা গ্রহণ না করে পুলিশকে দিতে বলেছে। পরে আমিসহ কক্সবাজার থানায় উপস্থিত হয়ে আনুমানিক চার হাজার পিস ইয়াবা হস্তান্তর করি।

সরাসরি পুলিশকে ফোন না করার ভুল হয়েছে জানিয়ে-ইয়াবা লুট করার প্রশ্নও আসে না বলে দাবি করেন আবদু রহিম।

র‍্যাবের নাম ব্যবহার করে ইয়াবা উদ্ধারের কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইয়াবা উদ্ধার করতে গিয়ে আমি ভয়ে র‍্যাবের নাম ব্যবহার করেছি। কারন সবাই আমাকে ইয়াবার ভাগ দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছিল।

নুরু দাবি করেন, সেখানে ১লাখ ইয়াবা ছিলনা। কাটুনের ভিতরে দুটি ইট, কিছু কাগজ ও একটি লুঙ্গি ছিল। তাই ইয়াবা বেশি মনে হয়েছে।

ওইদিন সাথে সাথে পুলিশকে কেন খবর দেয়া হয়নি এবং একদিন পর কেন ইয়াবা গুলো থানায় জমা করা হয়েছে এমন প্রশ্নে জবাবে নুরু বলেন, ইয়াবার মালিককে খোঁজার জন্য তা জমা করিনি। পরে জমা করে দিয়েছি।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি তদন্ত বলেন, রবিবার রাতে সদর থানার ওসি স্যারের উপস্থিতিতে নুরু ও আবদু রহিম একটি কাটুন নিয়ে থানায় হাজির হয়। সেখানে গণনা করে এক হাজার ৭৯০পিস ইয়াবা পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, র‍্যাবের নাম ব্যবহার, ইয়াবা আত্মসাৎ ও একদিন পরে ইয়াবা জমা দেয়ার বিষয়টি পুলিশের জানা ছিলনা।

আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে না নিয়ে পুলিশের সোর্স ইয়াবা উদ্ধার করে থানায় জমা করতে পারে কিনা জানতে চাইলে, তিনি দাবি করে বলেন, নুরু থানার দালাল কিনা তা আমার জানা নাই। পরিত্যক্ত অবস্থায় ইয়াবা পেয়ে তা স্বপ্রণোদিতভাবে থানা জমা দেয়া হয়েছে ভেবে তা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন বিস্তারিত ঘটনা আপনার কাছে শুনেছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।

তিনি বিষয়টি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবগত করার অনুরোধ জানান।তবে মুঠোফোনে একাধিকবার রিং দেয়ার পরও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে অবগত করে জানতে চাইলে কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের এভাবে ইয়াবা জমা নেয়ার কোন সুযোগ নাই। তবে বিষয়টি কতটুকু সত্যি আমার জানা নাই। তিনি বলেন, আমি আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। বিষয়টি বিস্তারিত জেনে আইনানুগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় তিনি প্রতিবেদককে বিস্তারিত তথ্য গুলো দেয়ার অনুরোধ জানান।

বিষয়টি কক্সবাজার র‍্যাব ১৫ এর উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ এর নজরে আনা হলে তিনি ঘটনার বিস্তারিত দিয়ে র‍্যাব সহযোগীদা করার জন্য অনুরোধ জানান।

এদিকে নুরুর বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কক্সবাজার পৌসরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহাব উদ্দীন বলেন, নুরু থানার চিহৃত দালাল। সে এলাকার চিহৃত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও অপহরণ, ছিনতাইকারী চক্রের গডফাদার। পৌরসভার ৫টি পয়েন্টে নুরুর ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা সক্রিয়।

তিনি আরও বলেন, নুরু কিছুদিন আগেও
একজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেছিল।পরে আমি গিয়ে তাকে উদ্ধার করি। নুরু একজন পুরাতন রোহিঙ্গা এবং থানা পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্ম করে বলে জানান তিনি। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে বলে জানান তিনি।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ