আবুল কাসেম আশরাফ:
উত্তম গুণের অধিকারী ব্যক্তিকে পছন্দ করে সবাই। সুন্দর গুণাবলীর মাধ্যমে সমাজে শান্তি, মৈত্রী ও ভালোবাসা তৈরি হয়। সুশৃঙ্খল সুখী সমাজ বিনির্মাণে উত্তম গুণাবলীর ভুমিকা অপরিসীম। হযরত মুহাম্মাদ(সঃ) এর জীবনের প্রতিটি প-রতে প-রতে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শের সন্নিবেশ। তাই বিশ্বের ইতিহাসে উত্তম চরিত্রের মূর্ত প্রতীক হলেন মহানবী (সঃ)। প্রিয় রাসূল (সঃ) বলেছেন,’ তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ও কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী থাকবে ঐ ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট সুন্দর চরিত্রের অধিকারী।’
অন্তরের সজীবতা ও তরুমনের সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটে মানুষের আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা ও কাজকর্মে। তাই ইসলাম সবার সঙ্গে সুন্দর আচার – আচরণের নির্দেশনা দিয়েছে।
তাই মানব জাতির আলোকিত জীবন গড়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উত্তম গুণাবলী নিম্নে প্রদত্ত হলঃ
সত্যবাদিতাঃ
সত্য কথা মানুষের জীবনকে আলোকিত করে তোলে। সত্যবাদিতা মুমিনের ভূষণ। সততা মানুষকে সফলতার পথে নিয়ে আসে। আর মিথ্যা ধ্বংস পথে পৌঁছে দেয়।
সেইজন্য মহান আল্লাহ তায়ালা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য কথা বলো। তিনি তোমাদের কর্ম সমুহ ত্রুটিমুক্ত করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। যারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, তারাই সফলকাম। ‘সুরা আহজাব, আয়াত-৭০
সুন্দর কথা বলাঃ
সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলা ভদ্রতা ও আভিজাত্যের পরিচায়ক। সুন্দর কথা মানুষের অন্তরে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে। হাসিমুখে কথা প্রিয় নবীজির সুন্নাত।
তাই হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সুন্দরভাবে কথা বলাকে সদকার সমতুল্য ঘোষণা করেছেন।
অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করাঃ
একজন মানুষের অনর্থক কাজে লিপ্ত হওয়া অনুচিত। মানুষের অহেতুক কার্যকলাপ, সমাজ ও বিবেকবর্জিত কর্মকান্ড নিশ্চয় গর্হিত কাজ।
রাসূল(সঃ) বলছেন,’ কোন ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক কাজ-কর্ম পরিহার করা।
বিনয় ও কোমলতাঃ
বিনয়ী ব্যক্তি সবার প্রিয় হয়ে ওঠে। বিনয় ও কোমলতার ছোঁয়ায় মানুষের হৃদয় অতি সহজেই জয় করা যায়। নম্রতা মানুষের ভালবাসা অর্জনের মহা সেতু বন্ধন।
তাই রাসূল (সঃ) বলেছেন,’ নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা কোমলতাকে পছন্দ করেন। এবং বিনয়ের অভূতপূর্ব বিনিময় প্রদান করেন।’
সবার জন্য কল্যাণ কামনা করাঃ
সবার জন্য কল্যাণ কামনা করা একজন মুসলিমের অন্যতম গুণ। পারস্পরিক লেন-দেন, কর্জ প্রদান, উপহার, দান, সদকা, শলা-পরামর্শ, আদেশ-উপদেশ, নির্দেশনা সহ অসংখ্য উপায়ে মানব সমাজের কল্যাণ সাধন করা যায়। আল্লাহর হক আদায়ের পাশাপাশি বান্দার হক আদায়ে সচেষ্ট হলে অবশ্যই এই নশ্বর দুনিয়াটা স্বর্গে পরিণত হবে।
ক্রোধ সংবরণঃ
ক্রোধ দমন করা ও প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকা মুসলিমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তা অনেক বড় পূণ্যের কাজ। রাগ দমন কারীর মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক উঁচুতে।
ঝগড়া-বিবাদ নিরসনঃ
পরস্পরের মধ্যে বিদ্যমান ঝগড়া-বিবাদ নিরসনে মানুষ এগিয়ে এলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা অটুট থাকে।
তাই, যে তা নিরসনে এগিয়ে আসে, সে অবশ্যই মহাপূণ্যের অধিকারী হয়। মহানবী (সঃ) ফেতনা-ফাসাদ, ঝগড়া-বিবাদ সমাধান করাকে নামাজ, রোজা ও সদকার চেয়ে অধিকতর উত্তম ইবাদত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বিপদাপদে ধৈর্য ধারণঃ
কঠিন সংকটাপন্ন মুহুর্তে ধৈর্য ধারণ করা একজন মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কারণ ধৈর্যের ফল অনেক সুখকর হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,’যে আল্লাহকে ভয় করল এবং ধৈর্য ধারণ করল, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নিষ্ফল করেন না। ‘সূরা ইউসুফ, আয়াত -৯০
সর্বোপরি আমরা সবাই আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত বিধি-বিধানের আলোকে মহানবী (সঃ) এর প্রদর্শিত পন্থায় নিজেদের জীবন পরিচালনা করলে, নিশ্চয়ই দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করা যাবে। ইনশাআল্লাহ।
সহকারী শিক্ষক,
খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়,
খরুলিয়া, সদর, কক্সবাজার।