• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২০ অপরাহ্ন

শিশু ও অপ্রশিক্ষিতরাই টমটম চালক!

Md. Nazim Uddin / ২১ ভিউ টাইম
আপডেট : সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কক্সবাজার শহরে ৩ হাজার টমটম চালকের সিংহভাগই অপ্রশিক্ষিত ব্যক্তি আর এক পঞ্চমাংশই শিশু। তারা জানেন না ট্রাফিক আইন ও সড়কের সঠিক নিয়মাবলি। অদক্ষ এসব চালকের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। আর বাড়ছে দূর্ঘটনায় আহত লোকের সংখ্যা। এ অবস্থায় অনাকাংখিত দূর্ঘটনা এড়াতে শিশু ও অপ্রশিক্ষিত এসব চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।

তবে, পৌর প্রশাসনের লাইসেন্স কর্মকর্তা নুরুল হকের দাবি, জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়া কাউকে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়নি পৌর প্রশাসন।

পৌরসভার লাইসেন্স শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, নতুন করে ৫’শ টমটম লাইসেন্স অনুমোদন দেয়া হলে কক্সবাজার শহরে ৩ হাজার টমটম চলার অনুমতি থাকবে। প্রতিটি টমটমে পৌরসভার থেকে নির্ধারিত ভাড়া তালিকা, ড্রেস, পরিচয় পত্র বহন করতে নির্দেশনাও দেয়া হয়। কিন্তু টমটম মালিকপক্ষ লোভে পড়ে শিশুসহ যাকে তাকে টমটম ভাড়া দেয়। আর চালকরা ভাড়া তালিকা, পরিচয় পত্র যেমন বহন করেনা, তেমনি তাদের গায়ে থাকেনা নির্ধারিত ড্রেসও। যারকারণে অদক্ষ চালক আর শিশুদের হাতে পড়ে নিয়মিত ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। শুধু দূর্ঘটনায় পতিত হন তা নয়, ভাড়া নিয়ে ঘটছে বাকবিতান্ডের ঘটনাও।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে দায়িত্বরত এক চিকিৎসক জানান, প্রতিদিন তিন থেকে চারটি টমটম দূর্ঘটনার কেস হাতে আসে। যাদের বেশির ভাগই পা’ ও মাথায় আঘাত থাকে।

সম্প্রতি দূর্ঘটনায় আহত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বলেন, মাস্টার্স পরিক্ষার প্রস্তুতি নিতে চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য টমটম নিয়ে বাসটার্মিনাল যাচ্ছিলাম। পশ্চিম লারপাড়া এলাকায় বিপরীত দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসা অপর একটি টমটমের কারণে আমাদেরটা উল্টে যায়। এতে আমি ও আমার ছোটভাই আহত হয়েছি। বর্তমানে আহত পা’ নিয়ে নড়াচড়া করতে পারছি না। এতে আমার পড়ালেখার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

টমটমে আহত মাদ্রাসা ছাত্র আকিব বলেন, গাড়ির বেশিরভাগ চালকই অামাদের বয়সী ও অপ্রশিক্ষিত। যারফলে ব্যাটারি চালিত এসব গাড়ি নিজেদের ইচ্ছে মতো চালায়। এতে অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দূর্ঘটনা ঘটছে।

তবে, দূর্ঘটনার জন্য সড়কের বেহাল দশাকে দায়ি করেছেন অনেক চালক। অনেকে বিভিন্ন পেশা থেকে এসে গাড়ি চালানোর কথা স্বীকার করেছেন।

টমটম চালক রহিম উল্লাহ (৩৫) বলেন, দীর্ঘদিন গার্মেন্টসে কাজ করতাম। কিন্তু আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় না হওয়ায় চাকুরি ছেড়ে এখন টমটম চালাচ্ছি।

হামিদ উল্লাহ (১৫) নামে এক শিশু বলেন, টমটম চালাতে না পারলে সংসার চলবে কি করে ? চুরি/ ডাকাতি তো করছি না।

আব্দুল্লাহ (৪০) জানান, পৌরসভা আমাদের ড্রেস আর পরিচয় পত্র দিয়েছিল। এখন কেউ সেগুলো গায়ে রাখেনা। এসব নিয়ে পৌরসভাও কিছু বলে না।

তাদের মতে, মাঝে মাঝে পৌরপ্রশাসন অযাচিত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়। তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে বিভিন্ন সময় চালক মালিকদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফলে পৌর প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তেমন একটা গুরুত্ব দেননা তারা।

পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক প্রমথ পাল বলেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ২০১৭-১৮ সালে চালকের ড্রেস, পরিচিতি পত্র, ডিজিটাল লাইসেন্স প্লেইট দিয়েছিল। আর কয়েক মাস পরে কোন চালক ড্রেস গায়ে রাখেনি। বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে সম্প্রতি পৌর প্রশাসন মালিক চালকদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করে। আইন সম্পর্কে চালকদের ধারণা দেয়া হয়। আর প্রাপ্ত বয়স্ক লোক ছাড়া শিশুদের হাতে গাড়ি না দেয়ার জন্য মালিকদের অনুরোধ করা হয়। এক কথায় আমরা চেষ্টা করছি সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আনতে। মাঝেমধ্যে অভিযানও পরিচালনা করা হয়।

তবে, যেসব টমটম জব্দ করা হয় মানবিক কারণে শর্ত সাপেক্ষে আর কাউন্সিলরদের অনুরোধে অনেক টমটম ছেড়েও দিতে হয়।

ট্রাফিক পুলিশের টিআই আমিনুর রহমান বলেন, গেল কয়েকদিনে আমরা অনেক টমটম জব্দ করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিকরা তা ছাড়িয়ে নিতে তদবির করেন।

একদিকে সড়কের বেহাল দশা অন্যদিকে অতিরিক্ত টমটমের লাইসেন্স অনুমোদন শহরে যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও চেষ্টা করছি সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে। এতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ