• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন

বিগত এক বছরে কক্সবাজারে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কোভিড -১৯ এর প্রভাব হ্রাসে সফল হয়েছে বাংলাদেশ

Md. Nazim Uddin / ১৭ ভিউ টাইম
আপডেট : মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

কক্সবাজার, মঙ্গলবার ৯ মার্চ ২০২১- বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ সনাক্ত রোগীর এক বছর পার হয়ে গেল। এই জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা অব্যহত রাখতে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব হ্রাসে সফল হয়েছে বাংলাদেশ।

কক্সবাজারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপকার্যালয় প্রধান ড. কাই ভন হারবু বলেন- “বিগত এই বছরটি বিভিন্ন দিক দিয়ে ব্যতিক্রম ছিল। প্রথমত, স্বাস্থ্যসেক্টর প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও সেক্টরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে জরুরি সাড়াদান কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়েছে। সামনের সারি থেকে কক্সবাজারের মানবিক সাড়াদানকারী কর্মী ও স্বাস্থ্যসেবীরা ত্যাগ স্বীকার করে মানবিক ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিরলসভাবে পালন করেছেন। মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এবং জরুরি স্বাস্থ্য সেবা বজায় রাখতে বাংলাদেশ সরকার, দাতা সংস্থা এবং সারা বিশ্বের অংশীদাররা রোহিঙ্গা জনগণকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে যারা রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় আমাদের সহযোগিতা করছেন তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা এবং আন্তরিক ধন্যবাদ।”

কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ সরকার এবং কক্সবাজারের মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতিতে প্রস্তুতিসহ সাড়াদানের কাজ পরিচালনা করেছে।

২০২০ সালের মার্চ থেকে স্বাস্থ্য সেক্টরের সমন্বয়ে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রযুক্তিগত দক্ষতায় কক্সবাজারে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো ক্যাম্প ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কোভিড-১৯ পজিটিভ কেইসের চাহিদা পূরণে আইসোলেশন কেন্ত্র (সারি আইটিসি) স্থাপনে সহযোগিতা করে। এই আইসোলেশন কেন্দ্রগুলো কোভিড-১৯ আক্রান্ত মৃদু, মাঝারি এবং গুরুতর রোগীর গুণগত চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় আইসোলেশন কেন্দ্রগুলোতে অক্সিজেন জেনারেটর এবং অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয় যাতে আক্রান্ত রোগীদের জীবনরক্ষাকারী অক্সিজেন থেরাপি নিশ্চিত করা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য সেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলো সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত প্রায় ৩০০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং প্রায় ৮০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে কোভিড-১৯ এর ক্লিনিক্যাল কেইস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সারি আইটিসিগুলো গুণগত মানের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর সহযোগিতায় ২০২০ সালের জুন মাসে কক্সবাজারের সদর হাসপাতালে প্রথম ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) এবং হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) স্থাপন করা হয়। যেখানে সারি আইটিসি থেকে আইসিইউতে রেফার করা স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী উভয়েই সেবা পাচ্ছেন।

ত্রাণ সংস্থাগুলো কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যহত রেখেছে। ট্রান্সলেটর উইদাউট বর্ডার্স, বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন, আইওএম, ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী, ইউএনএইচসিআর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য ও পানি স্যানিটেশন সেক্টরের সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগের জন্য একটি কমিউনিটি আউটরিচ কৌশল বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং গুজব কমানোর জন্য সকল মাধ্যম ব্যবহার করে সবার জন্যস্বাস্থ্য এবং সুস্থতা নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।

ক্যাম্পের র‌্যাপিড ইনভেস্টিগেশন এন্ড রেসপন্স টিম ২৪ ঘন্টার মধ্যে সাড়া প্রদানের কাজে নিয়োজিত ছিল। যারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে যোগাযোগ এবং রেফারেল ইউনিটের সাহায্যে কোভিড-১৯ রোগীদের সারি আইটিসিতে রেফার করেন, যা এই ভাইরাসের সংক্রমন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

কোভিড-১৯ ট্রান্সমিশনের শৃঙ্খল ভাঙ্গার জন্য পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ ফিল্ড ল্যাবরেটরিতে সকল নমুনা প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে দ্রুত একটি সেন্টিনেল সার্ভাইলেন্স সিস্টেম স্থাপিত হয়। পাশাপাশি, কমিউনিটি ভিত্তিক নজরদারির অধীনে, প্রায় ১,৫০০ স্বেচ্ছাসেবকের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক কোভিড-১৯ এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে অবদান রাখে। লক্ষণ থাকা ব্যক্তিদের নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অথবা সরাসরি ২৬টি নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রের যে কোন একটিতে রেফার করা হয়।

কক্সবাজারের সামগ্রিক সাড়াদান কার্যক্রমে, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সবসময়ই অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। ইউএনএফপিএ এবং অন্যান্য সংস্থার সাথে যারা স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছেন তারা মহামারীর কারনে সৃষ্ট সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নিয়মিত সেবাগুলো যেমন- রুটিন টিকা, যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা বিষয়ক সাড়াদান, এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোঃসামাজিক চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছেন।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কোভিড-১৯ সংক্রমনের ঝুঁকি কমানোর জন্য রোগীদের ব্যবস্থাপনা, শারিরীক দুরত্ব, মাস্ক পরা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সংক্রান্ত কাজগুলো করছেন।

সারাবিশ্বে যে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে তা মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় এক বছরেরও কম সময়ে করোনাভাইরাসের টীকা তৈরি, পরীক্ষা এবং অনুমোদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে। কক্সবাজারে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো সবার জন্য নিরাপদ ও কার্যকর কোভিড-১৯ টিকা প্রদানে সরকারকে সহযোগিতা করতে সংকল্পবদ্ধ। বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জাতীয় কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশী নাগরিকদের মত রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে টিকা প্রদানেও অগ্রধিকার দেওয়া হবে। এপিডেমিওলজিক্যাল সার্ভেইলান্স ডেটার উপর ভিত্তি করে রোহিঙ্গা শরণার্থী, সম্মুখসারিতে থাকা রোহিঙ্গা স্বাস্থ্যকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক, শিক্ষকসহ বয়স্কদের (৪০ বছর বয়সী) অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ