• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন

পেকুয়ায় জলমহল দখল করে চেয়ারম্যানের হ্যাচারী-মার্কেট!

Md. Nazim Uddin / ২৫ ভিউ টাইম
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২১

নিজস্ব প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে পেকুয়ার উজানটিয়া সুতাচুরা এলাকায় সরকারি (জলমহল) বদ্ধ খাল অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রায় ৪ একর খাল দখল করে ব্যক্তিগত হ্যাচারী এবং আরেকটি অংশে খাল ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে জলমহলটির ইজারাদার ও স্থানীয় চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

এ ছাড়াও ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে জনসাধারণের ব্যবহৃত খালের মিটা পানি পরিবর্তন করে লবণাক্ত পানি মজুদ করায় বিপাকে পড়েছে স্থানীয় হাজারও পরিবার।

স্থানীয়রা জানান, যুগ যুগ ধরে স্থানীয়দের কাছে বন্ধা খাল নামে পরিচিত জলমহলটিতে ওই এলাকার প্রায় দেড় হাজার পরিবার গোসল, কাপড় ধুয়া ও রান্নাবান্নার জল সরবরাহ করে আসছেন। কিন্তুু চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম খালটি ইজারা নেওয়ার পর থেকে কাউকে আর ওই খালে নামতে দেওয়া হয়নি। এক পর্যায়ে খালের মিটা পানিও পরিবর্তন করা হয়। এই কারনে তারা এখন তীব্র মিটা পানির সংকট রয়েছেন।

উজানটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি তোফাজ্জল করিম বলেন, চেয়ারম্যান খাল দখল করে ব্যক্তিগত চিংড়ি ঘের ও দোকানপাট নির্মাণ করলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। একজন জনপ্রতিনিধি কতটা অমানবিক হলে হাজার হাজার পরিবারের পানির ব্যবহার বন্ধ করে দিতে পারে? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

অবিলম্বে ইজারা বাতিল করে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের কব্জা থেকে খালটি দখল মুক্ত ও পূর্বের রূপ ফিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তোফাজ্জল করিম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে গত ২০১৮ সালে ৪২ একের জলমহলটি নাম মাত্র ৯০ হাজার টাকামূল্যে তিন বছরের জন্য ইজারা নেয় উজানটিয়ার চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম। কিন্তুু কিছুদিন সময় যেতে না যেতে দখলের মাধ্যমে জলমহলের রূপ পরিবর্তন করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই সময় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন। উক্ত তদন্ত কমিটি গত ২০১৯ সালের ১৭ জুন ঘটনাস্থলে পরির্দশন করে অভিযোগের সত্যতা পায়।

এরই প্রেক্ষিতে তৎকালীন পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুবউল করিম অবৈধ নির্মিত বাঁধ কেটে জলমহলটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে -৩০ এপ্রিল ২০১৯- সাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে একটি লিখিত আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তুু প্রায় দুই বছরে হতে চললেও নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি।

স্থানীয়দের দাবি, রহস্যজনক প্রশাসন নীরব থাকায় নিজের সুবিধামতো উল্টো দখলের পরিধি বাড়িয়েছেন চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম। খাল ভরাট করে নির্মাণ করেছেন ডজনখানিক দোকানও।

অভিযোগের বিষয়ে স্বীকার করে উজানটিয়ার চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম দাবি করেছেন প্রথমে তাকে দোষী করা হলেও পরবর্তীতে দায় মুক্তি দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। মার্কেট ও বেড়িবাঁধ উচ্ছেদ না করে কিভাবে দায় মুক্তি পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে লিখিত দায় মুক্তির ডকুমেন্ট রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি দখল করিনি, উন্নয়নের জন্য খালটিতে যা করা দরকার সেটি করেছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ কারীরা মিথ্যাবাদী, ইয়াবা কারবারী।

উপজেলা প্রশাসন থেকে দায়মুক্তি পাওয়ার স্বপক্ষের ডকুমেন্ট দেখতে চাইলে যেখানে দেখানোর প্রয়োজন পড়বে সেখানে তা দেওয়া হবে বলে জানান শহিদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোতাছেম বিল্লাহ বলেন, দখলকৃত জলমহল উচ্ছেদ না করে দায় মুক্তি বিষয়টা বিশ্বাস যোগ্য না। বিষয়টা যেহেতু এখন জেনেছি, খতিয়ে দেখা হবে। উজানটিয়ার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একই ধরনের আরেকটি অভিযোগেরও তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।

বিষয়টা নজরে আনা হলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন-আল পারভেজ খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।

এ ছাড়াও চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে করোনাকালে রাতের আধাঁরে মাতামুহুরী খরস্রোতা নদী থেকে উজানটিয়ার হাজারও পরিবারের সুরক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি বেড়িবাঁধ কেটে পাইপ বসানোর অভিযোগ উঠে। এ কারনে বেড়িবাঁধটি আসন্ন বর্ষায় বৃষ্টিতে যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট পাউবোর এক কর্মকর্তা।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ