• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫০ পূর্বাহ্ন

ওষুধ প্রকৃতিতে, সুস্থতা নিজের হাতে

নিউজ রুম / ১৪৪ ভিউ টাইম
আপডেট : বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৯

-রাজিব আহমেদ

আমরা এমন এক অস্থির সময়ে বসবাস করছি, যখন কোনোকিছুই ঠিকমতো চলছে না! পচন ধরেছে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতিসহ সবকিছুর গোড়ায়। দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে চারদিক। বিবেকবোধ ও মানবতার কোনো ঠাঁই নেই, মূল্য তো নেই-ই। সবাই ছুটছে কেবল টাকার পেছনে। এই টাকা পেলে কী করবে- তাও জানে না! তবু টাকা কামাইয়ের নেশা (তা সে বৈধ অথবা অবৈধ যেভাবেই হোক না কেন) কাউকে ছাড়ছে না। অনেকে আবার কাড়ি কাড়ি টাকা ও সম্পত্তির মালিক হওয়ার পরেও তাদের মনে শান্তি নেই, দেহে নেই স্বস্তি! কেউ কি এর নেপথ্য কারণটা বলতে পারবেন?

অনেকে হয়ত অনেক কারণ খুঁজে বের করবেন, কিন্তু সবচেয়ে বড় কারণ হলো আমরা প্রত্যেকটা মানুষ কোনো না কোনো অসুখে ভুগছি! যেভাবে গণহারে আমাদের স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে, অতীতে কখনোই তা ঘটেনি। জীবনের কষ্টার্জিত সকল সম্পদ চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করেও কারো শেষ রক্ষা হচ্ছে না। দিনে দিনে ওষুধের সংখ্যা ও মাত্রা দু’টোই বাড়ছে, যাতে কিনা ওষুধ কোম্পানি ও ডাক্তারের পকেট ভারি হওয়া ছাড়া আর কোনো ফায়দা হচ্ছে না! প্রশ্ন হলো- এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পেছনে দায়ী কে বা কারা?

আসলে এমন পরিস্থিতি তৈরির জন্য দায়ী আমাদের অতিরিক্ত লোভাতুর দৃষ্টিভঙ্গি আর উল্টাপাল্টা খাদ্যাভ্যাস। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের দেহ একটি নিখুঁত যন্ত্র। স্বাভাবিক খাদ্য-রীতি, কঠোর পরিশ্রম আর বিশ্রামের দ্বারা আপনাআপনি নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা। কিন্তু দিনের পর দিন যখন আদর্শ রীতি-নীতি লঙ্ঘিত হয়, সামনে যা পাই, কোনোরকম বাছ-বিচার ছাড়া সেগুলো গোগ্রাসে গিলতে থাকি, তখনি দেহের ভেতরে বিষ (টক্সিন) জমতে শুরু করে। একপর্যায়ে শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হয়ে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, যা কিনা বিভিন্ন রোগ-এর মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আমরা এখন চোখের ভালো লাগা অনুযায়ী খাবার খাই, সে খাবার শরীরের জন্য আদৌ উপকারী কি-না, সেই চিন্তা কেউ করি না! আমরা ভুলে গেছি (অথবা জানিই না) যে, মুখে যেসব খাবার বেশি মজা লাগে, সেগুলো কম করে খাওয়া উচিত!

আজ থেকে মাত্র তিনশ’ বছর আগে পৃথিবীতে কোনো কেমিক্যাল ড্রাগ ছিল না। তাহলে তার আগের কমপক্ষে সোয়া পাঁচ হাজার বছর পৃথিবীতে মানুষ বাঁচলো কিভাবে? আমাদের পূর্বপুরুষরা আসলে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে প্রাকৃতিক খাবার খেয়েই দীর্ঘায়ূ লাভ করেছিলেন। অথচ আমাদের অধিকাংশ পরিবারে এখন খাবার কিনতে যত টাকা লাগে, তার সমপরিমাণ (কখনো আরো বেশি) টাকা লাগে ওষুধ কিনতে। গ্যাস্ট্রিক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ওষুধ এখন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। তারপরও শেষ রক্ষা হয় না। ক’দিন পরপর ডাক্তারের কাছে যেতে হয় এবং নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তিনি যেসব ওষুধ লিখে দেন, সব গোগ্রাসে গিলতে থাকি। একবারও ভাবি না- ওষুধগুলো খেলে শেষ রক্ষা হবে কি-না, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা নাই-বা বললাম।

দিনে দিনে ওষুধের সংখ্যা ও মাত্রা বেড়ে চললেও কেউ কখনো ডাক্তার সাহেবকে জিজ্ঞেস করি না- যে ওষুধ খেয়ে রোগ চিরতরে ভালো হচ্ছে না, বরং দিনে দিনে মাত্রা ও পরিমাণ দু’টোই বাড়ছে, সে ওষুধ আমরা খাচ্ছি কেন?!? এটা কি শুধুই ডাক্তার সাহেবের পকেট ভারি করা আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ওষুধ বিক্রি নিশ্চিত করে ওষুধ কোম্পানিগুলোর ফুলে-ফেঁপে লাল হয়ে ওঠা নাকি সত্যিই মানবতার কোনো কল্যাণ নিহীত আছে? যে কারণে (মিনারেল-এর ঘাটতি) আমরা ওষুধ খাই, যদি স্বাভাবিক খাবারের মাধ্যমে সেই ঘাটতি পূরণ করা যায়, সেটাই কি মঙ্গলজনক নয়? কিন্তু বাণিজ্যিক দুনিয়ায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত বিকল্পটাকে এমনভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হয়েছে যে, আমরা দেহের রোগ নিরাময়ের মূল ব্যবস্থা (প্রাকৃতিক নিয়ম)-কে ভুলতে বসেছি!

আমরা সবাই মিলে সেই ফাঁদে পা দিয়ে বসে আছি- যে সমাজে মেধাবী ছাত্রটিকে সবকিছু বাদ দিয়ে ডাক্তার হতে উৎসাহিত করা হয়। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, যেখানে মনে করা হয় ডাক্তার হতে না পারলে জীবনটাই বৃথা! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- সেই মেধাবী ছেলেমেয়েগুলোর অধিকাংশ ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে ওষুধ কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণের ‘দালাল’-এ পরিণত হচ্ছেন! আর্থিক ফায়দার বিনিময়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মন রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় একটি বা দু’টি ওষুধের পাশাপাশি অবলীলায় আরো পাঁচ/সাতটি ওষুধের নাম লিখে দিচ্ছেন আর অসহায় মানুষজন সরল বিশ্বাসে জীবনভর সেগুলো কিনে কিনে খাচ্ছেন!

শুনে অবাক হবেন- ইসরায়েল-এর মতো দেশে ডাক্তাররা ধর্মঘটে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে মৃত্যুহার কমে গিয়েছিল! সে কারণে ইদানীং শ্লোগান উঠেছে- যেখানে ডাক্তার কম, সেখানে মৃত্যুহার কম! কেননা ওষুধ কোম্পানির এজেন্ট/প্রতিনিধিরা যেভাবে ব্রিফ করছেন, ডাক্তাররা সেভাবেই একটার পর একটা ওষুধ লিখে প্রেসক্রিপশন ভরে ফেলছেন। আদৌ সেসব ওষুধের কার্যকারিতা বা প্রয়োজন আছে কি-না, খতিয়ে দেখার কেউ নেই। ডাক্তারদেরও সময় নেই পড়াশুনা করা তথা মেডিক্যাল জার্নালগুলো ঘেঁটে দেখার। ফলে অনেক ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণের আগেই বাজারে কোটি কোটি টাকার নমুনা (স্যাম্পল) বিক্রি করে ফেলা হচ্ছে।

পৃথিবীব্যাপী চিকিৎসার নামে যে মহাবণিজ্য শুরু হয়েছে, সেই ফাঁদ থেকে মানব সম্প্রদায়কে মুক্ত করা খুবই কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। এই চক্র থেকে বের হতে চাইলে আমাদেরকে নিজেদের উদ্যোগেই আরো সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। হাত দিতে হবে সমস্যার গোড়ায়। ৯০% রোগের সূত্রপাত ভুলভাল খাদ্যাভ্যাস থেকে- যেটার শুরু আবার আমাদের বাড়ির রান্নাঘরে; সেই রান্নাঘরের সঠিক ও যথাযথ ব্যবহারই পারে আমাদেরকে রোগ-বালাই থেকে রক্ষা করতে। রান্নাঘরের নিতান্ত ছোটখাটো বিষয়গুলোই পারে আমাদেরকে অনেক বড় বড় প্রাণঘাতী রোগ থেকে মুক্তি দিতে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক খাবারের উপরে নির্ভরশীলতা বাড়ালে আমরা কখনোই বড় কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়ব না।

আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ প্রাচুর্যময় একটি দেশ। এমন জলবায়ু পৃথিবীতে বিরল। রয়েছে পানযোগ্য সুমিষ্ট পানির সুবিশাল ভান্ডার। অভাব নেই শাকসবজি, ফলমূলের। অথচ খাদ্য সংরক্ষণের নামে এক মৌসুমের খাবার আরেক মৌসুমে নিয়ে বেশি দামে বেঁচছি। সেইসব কিনে অনেকেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি (একবারও ভাবছি না- অসময়ের ফল-ফসলে কোনোরূপ উপকার নিহিত আছে কিনা? জেনে রাখুন- উপকার তো নেইই, বরং অপকার রয়েছে অনেক বেশি)! অসময়ে অধিক ফসল উৎপাদনের চমক দেখাতে গিয়ে নানারকম কেমিক্যাল (সার) মিশিয়ে মাটির প্রাণ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। ফসল উৎপাদনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকাল-বিকাল নানারকম কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক খাবারেও আর আগের মতো পুষ্টিগুণ পাওয়া যাচ্ছে না; কিছু কিছু খাবার হয়ে গেছে ‘বিষের গোলা’!

আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনে ওষুধ কোম্পানি আর ডাক্তারের পকেট ভারি হওয়া ছাড়া আর কোনো ফায়দা নেই। বরং প্রাকৃতিক নিয়মেই যে কোনো রোগীকে পুরোপুরি রোগমুক্ত করা সম্ভব। কারণ হাদিসে আছে : ‘আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ পাঠাননি, প্রকৃতিতে যার নিরাময়ের ব্যবস্থা দিয়ে রাখেননি’ (সহীহ বুখারি হাদিস নং ৫৬৭৮; অধ্যায় ৭৬/চিকিৎসা)। আমাদের দায়িত্ব শুধু সেই প্রাকৃতিক সমাধানগুলো খুঁজে খুঁজে বের করে করা।

অসুখ হলে ভালো ডাক্তার আর পাঁচ তারকাযুক্ত হাসপাতালের বদলে বিশুদ্ধ খাবার খুঁজে নিন। আপনার স্বাস্থ্যরক্ষার সকল উপাদান রয়েছে আপনার রান্নাঘরেই। প্রয়োজন শুধু তার যথাযথ প্রয়োগ ও ব্যবহার। কোন রোগে কোন খাবারের যোগসূত্র আছে, জানা থাকলে আমাদের পরিবারে অসুখ-বিসুখ এমনিতেই কমে যাবে।

পরিশেষে বলতে চাই- শরীর মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। সুস্থতা স্রষ্টার দেওয়া সবচেয়ে বড় নেয়ামত। কিন্তু ততদিন আমরা এই কথার কদর দিই না, যতদিন আমরা অসুস্থ না হই! শরীর ঠিক না থাকলে পৃথিবীর তাবৎ উপকরণ কোনো কাজে আসবে না। শরীরটাকে ভর করেই আমরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকি, কিন্তু সেই শরীরের প্রতিই সবচেয়ে বেশি অবিচার করি। শরীরের ভেতরই আমাদের বসবাস এবং সুস্বাস্থ্য আমাদের একমাত্র সম্পদ- এই বোধ যতদিন পোক্ত না হবে, ততদিন কোনো উদ্যোগই আমাদেরকে আকৃষ্ট করবে না। তবু যদি আমার এই নিবন্ধটি আপনার মনে বিন্দুমাত্র রেখাপাত করে এবং ভাবনার খোরাক যোগায়, তাহলে বিশেষজ্ঞদের মুখ থেকে আরো বিস্তারিত জানতে ও বুঝতে আগামী ৩০ আগস্ট ২০১৯; শুক্রবার গুলশান নিকেতনের ডি ব্লকে ১০/২নং সড়কে ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার-এ চলে আসুন। চারবেলা খাবারসহ প্রশিক্ষণসামগ্রী বাবদ জনপ্রতি শুভেচ্ছা মূল্য ৯৯৯/- মাত্র। বুকিং দিতে এক্ষুণি যোগাযোগ করুন ¬০১৮১৭-১৮০১৮৮ নম্বরে। #


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ