• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫২ অপরাহ্ন

অম্লীয় শরীরকে ক্ষারীয় করবেন যেভাবে

নিউজ রুম / ২০৬ ভিউ টাইম
আপডেট : বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৯

-রাজিব আহমেদ

মানবদেহ রাসয়নিক উপাদানে ভরপুর। দেহকে পরিচালনার জন্য নানারকম রাসয়নিক উপাদানের প্রয়োজন। এসব উপাদানের মাত্রা যদি সঠিক না থাকে, তখনি আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। Potential of Hydrogen বা pH লেভেল হচ্ছে এই রাসয়নিক উপাদান পরিমাপের একক। আমাদের শরীরে pH লেভেল ৭.২ থেকে ৭.৫ পর্যন্ত নিরপেক্ষ জোন হিসেবে চিহ্নিত। এর নিচে থাকলে সেটাকে অম্লীয় (acidic) বলে আর উপরের মাত্রাকে ক্ষারীয় (alkaline) বলা হয়। শরীরের pH মাপার জন্য এক ধরনের pH পেপার পাওয়া যায়, তা জিহবা’র নিচে দুই মিনিট রেখে দিলেই pH মাপা যায় অতি সহজে।

আমরা যখন পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হই, তখন ক্ষারীয় শরীর নিয়েই জন্মাই। কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের খাদ্যাভ্যাস আর জীবনধারার প্রভাবে দেহখানি অম্লীয় হয়ে যায়! শরীর অম্লীয় হয়ে গেলে নানা রকম রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়, বিশেষত যেসব রোগের পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য কোনো চিকিৎসা নেই। কিন্তু দেহ ক্ষারীয় থাকলে সুস্থ ও নিরোগ থাকা সম্ভব। বিশ্ববিখ্যাত কিছু স্বাস্থ্য গবেষণায় বলা হয়েছে : ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিও কোনো ধরনের ওষুধ ছাড়াই নিরাময় করা সম্ভব, যদি কিনা রোগাক্রান্ত দেহটিকে ক্ষারীয় করা যায়। এমনকি যারা ক্রনিক রোগে আক্রান্ত, একই সঙ্গে অনেক সমস্যায় ভূগছেন, তারা যদি শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে শরীরকে ক্ষারীয় করতে পারেন. তাহলেই সব রোগ সেরে যাবে!

প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী, আমাদের খাবারের ৮০% হবে ক্ষারীয় (যেমন : সব ধরনের টাটকা ফলমূল ও শাকসবজি) আর বাকি ২০% হতে পারে অম্লীয় (যেমন : সাদা চাল, ময়দা, মাছ, মাংস, দুধ, ফাস্টফুড, ভাজা-পোড়া, চিনি ও সকল প্রকার ওষুধ)। কিন্তু বর্তমানে আমরা অম্লীয় খাবারই খাই ৮০% আর ২০% ক্ষারীয় খাবারও খাই কি-না সন্দেহ। পরিণামে আমাদের শরীর ধীরে ধীরে অম্লীয় হয়ে সহজেই রোগ বাসা বাঁধার সুযোগ পাচ্ছে। সুতরাং শরীরের রোগ দূর করতে ওষুধের উপরে নির্ভর না করে শরীরকে ডিটক্সিফিকেশন করুন (মানে অম্লের মাত্রাকে কমান) আর টাটকা ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া বাড়িয়ে দিন। দেখবেন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন।

শরীরকে ক্ষারীয় করতে পারলে শরীরে কোনো ব্যাথা থাকবে না, পেট পরিষ্কার থাকবে, মাথা ঠান্ডা থাকবে, ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, মন থাকবে প্রশান্তিময় আর আপনি হয়ে উঠবেন উদ্যমী ও প্রাণবন্ত। বিশেষভাবে মনে রাখবেন- শরীরের অম্লীয় পরিস্থিতি হচ্ছে অসুস্থতার জন্য দরজা খুলে রাখা আর ক্ষারীয় পরিস্থিতি হচ্ছে সারাজীবন সুস্থ থাকার পূর্বশর্ত। যদি দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়ায় সামান্য পরিবর্তন এনে নিজেই নিজের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে চিকিৎসা-বাণিজ্যের ফাঁদে ধরা দেওয়ার দরকারটা কী?!?

যেসব খাদ্য শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগান না দিয়ে বরং জটিল ক্রিয়া করে আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে তোলে, সেগুলোই টক্সিন বা বিষ। আমাদের অসুস্থ হওয়ার পেছনে টক্সিন নাম নীরব ঘাতকের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সুস্থতার আশায় আমরা যখন ডাক্তারের কাছে যাই, তিনি কখনো বলেন না যে, শরীর থেকে টক্সিন বের করা না গেলে আমরা কখনো সুস্থ হবো না। বরং আরো কিছু ওষুধ খেতে দেন, যা আমাদের দেহে টক্সিন-এর মাত্রাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়!

বাজারে ডিজেলের চেয়ে অকটেন-এর দাম বেশি। তাই বলে ডিজেল চালিত গাড়িতে অকটেন ঢাললে কি গাড়ি আদৌ চলবে? একইভাবে মানবদেহ যেসব খাবারের উপযোগী, তার বাইরে অন্যকিছু খাবার হিসেবে গ্রহণ করলেই দেহের ভেতরে গন্ডগোল হয়ে যাবে। তথাকথিত অনেক দামি খাবার সে কারণে আমাদের জন্য স্বাস্থ্যোপযোগী নাও হতে পারে। আবার একই পরিবারের সবার একই রকম খাবারের প্রয়োজন নাও থাকতে পারে। এভাবে দিনের পর দিন যখনি আমরা স্বাস্থ্যহানিকর খাবার খেতে থাকি, তখনি সমস্যার শুরু হয়, শরীরে বিষ জমে নানা রোগ আকারে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। প্রাকৃতিক চিকিৎসকেরা বলছেন : শরীর থেকে টক্সিন যদি বের করে দেওয়া যায়, তাহলে শরীরের যে কোনো টিউমার, ব্লকেজ, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

এবারে বলে দিচ্ছি শরীরকে ডিটক্সিফিকেশন করবেন (মানে অম্লের মাত্রাকে কমাবেন) কিভাবে? এজন্য আপনাকে ৭২ ঘণ্টা ব তিনদিনের একটি খাদ্যাবিধি পুরোপুরি মেনে চলতে হবে। প্রথম দিন শুধু লেবু পানি আর মধু পান করে সারাদিন থাকতে হবে। দ্বিতীয় দিন শুধু টক ফলের রস পান করতে হবে আর তৃতীয় দিন শুধু টক ফল খেয়ে থাকতে হবে। এই তিনদিন আর কোনো সলিড খাবার (রান্না করা বা প্রসেসড ফুড) খাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র ৭২ ঘণ্টা এই নিয়ম মেনে চললেই জীবনে অনেক বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে যাবে। শরীর থেকে টক্সিন বের হতে শুরু করবে এবং আপনি প্রাকৃতিক নিয়মে সুস্থতার প্রথম ধাপ অতিক্রম করে ফেলবেন!

আমরা যদি উপরোক্ত নিয়ম পুরোপুরি মেনে চলি, তাহলে আমাদের পাচনক্রিয়া বিশ্রামের সময় পাবে এবং তিনদিন পর থেকে নতুন করে পুর্ণোদ্যমে কাজ করতে শুরু করে দেবে। একইসঙ্গে মস্তিষ্ক থেকে শরীরের প্রত্যেকটি কোষে শিহরণ জাগাবে, যা শরীরকে সক্রিয় করতে বিশাল ভূমিকা পালন করবে।

এই ৭২ ঘণ্টায় যে সকল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, তাহলো ভারি খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা, মাথা ঝিমঝিম করা, শরীরে হালকা কাঁপুনি, রাতে ঘুমাতে দেরি হওয়া ইত্যাদি। দ্বিতীয় দিনে কারো দু’-চারবার পাতলা পায়খানা হতে পারে, কিন্তু তা আপনাআপনিই ঠিক হয়ে যায়। সুতরাং বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আপনি ভিন্নভাবে পূর্ণ খাবারই গ্রহণ করছেন, যা ব্যতিক্রম বলে শরীরের মানিয়ে নিতে সাময়িক অসুবিধা হতে পারে, তবে সবার ক্ষেত্রে ঘটবে না।

খাবার যখন রোগ সারায়!

তিনদিনের বিশেষ ডিটক্সিফিকেশন কোর্স সম্পন্ন করার পর আপনি নিচের খাদ্যবিধি সারাজীবন মেনে চললে অন্তত চিকিৎসা বাবদ কখনো কোনো অযাচিত ব্যয়ভার বহন করতে হবে না- সে কথা জোর দিয়ে বলতে পারি।

• প্রত্যেক দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে জেগে বাসি মুখে দুই-তিন গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানি পান করুন। দ্বিতীয় গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ লেবুর রস আর সামান্য মধু মিশিয়ে নিন। পানি পান করবেন অবশ্যই বসে, দুই হাতে, তিন ঢোকে ধীরে ধীরে, যেন পর্যাপ্ত মুখের লালা মিশতে পারে। আগের রাতে পানিতে ভেজানো কাঁচা ছোলা আর এক টুকরা আদা খেতে পারেন। এরপর নামাজ/প্রার্থনা, মেডিটেশন/প্রাণায়াম, হাঁটাহাটি/দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম সেরে নিন।

• আরেক গ্লাস পানি পান করে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে গোসল করুন। তারপর ভরপেট খাওয়ার নিয়তে নাস্তার টেবিলে বসুন। যার যার শরীরের ওজনের ১০০ ভাগের এক ভাগ পরিমাণ পাঁচ রঙের/ধরনের দেশীয় ফল খান। একসঙ্গে এতো ফল খেতে মন না চাইলে বাকিটুকু বক্স-এ ভরে সঙ্গে নিয়ে নিন যেন দুপুর বারোটার মধ্যে খেয়ে শেষ করতে পারেন। শুধু ফল খেয়ে নাস্তার অভ্যাস করতে পারলে এক মাসের মধ্যে ডায়বেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পাবেন। ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

• সারাদিনের মধ্যে যখনি সম্ভব হয়, সামান্য পরিমাণে কালোজিরা আর এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খাবেন।

• দুপুরের খাবার হিসেবে প্রথমেই সাত রঙের টাটকা শাকসবজি (শসা, টমেটো, গাজর, বিট, পাতাকপি, পেঁপে, মূলা, ব্রোকলি, সিমের বিচি, ধনেপাতা, লেটুস পাতা, পুদিনা পাতা, কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা ঝাল. মটরশুঁটি ইত্যাদি যখন যেটা পাওয়া যায়) দিয়ে তৈরি এক বাটি (শরীরের ওজনের ২০০ ভাগের এক ভাগ পরিমাণ) সালাদ খান। সঙ্গে গোলমরিচের গুঁড়া মিশয়ে নিতে পারেন। হরেক রকম পাতা দিয়ে রসুন বেটে চাটনি হিসেবেও খেতে পারেন। এতে শরীরের রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। শরীরে কোনো ধরনের রক্ত জমাট, ব্লকেজ, টিউমার থাকবে না। তারপর লাল চালের ভাত, মিক্সড সবজি (১:৩ অনুপাতে) আর এক বাটি ডাল (মূগসহ তিন/চার রকমের মিশিয়ে রান্না করা) খান। মাছ অথবা মাংস সপ্তাহে চারদিনে সীমিত রাখুন; তাও অল্প পরিমাণে। অসুস্থ থাকলে প্রাণীজ আমিষ পুরোপুরি বর্জন করবেন।

• বিকেলের নাস্তা হিসেবে পাঁচ-ছয় রকমের বাদাম এক মুঠি পরিমাণে খান। এক কাপ গ্রিন-টি পান করতে পারেন।

• রাতের খাবার অবশ্যই খেতে হবে মাগরিব আর এশার নামাজের মাঝের সময়টুকুতে। খাদ্য তালিকায় সালাদ হবে শাকপাতা আর শসা-বিহীন। রাতে ডালসহ সকল আমিষ খাবার এড়িয়ে চলুন। দুধ- লাল চালের ভাত খেতে পারেন। রাতে ঘুমানোর আগে এক কাপ কুসুম গরম পানিতে একদিন আধা চা-চামচ হলুদের গুঁড়া আর তার পরের দিন ইসুবগুলের ভুষি মিশিয়ে খেতে থাকুন। সঙ্গে একটি এলাচ দানা চিবিয়ে খেতে পারেন।

• সারাদিনে এক ঘণ্টা পরপর সামান্য পানি পান করবেন। মুখে সব সময় গরম মশলা (যার যেটা ভালো লাগে) রাখতে পারেন।

এই খাদ্যবিধি মাত্র ছয় মাস মেনে চললে সকল ক্রনিক রোগ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসতে পারবেন। এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মুখ থেকে আরো বিস্তারিত জানতে ও বুঝতে চাইলে আগামী ৩০ আগস্ট ২০১৯; শুক্রবার গুলশান নিকেতনের ডি ব্লকে ১০/২নং সড়কে ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার-এ চলে আসুন। চারবেলা খাবারসহ প্রশিক্ষণসামগ্রী বাবদ জনপ্রতি শুভেচ্ছা মূল্য ৯৯৯/- মাত্র। বুকিং দিতে যোগাযোগ করুন ০১৮১৭-১৮০১৮৮ নম্বরে। #


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ