কক্সবাজার থেকে পরিচালিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ‘মুক্তি কক্সবাজার’ এর সভাপতি শিবু লাল দেবদাস বাংলাদেশ ও ভারত (পশ্চিমবঙ্গ) উভয় দেশের নাগরিকত্ব বহন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর আইন পেশায় জড়িত হয়ে এবং এনজিও থেকে আয় করা বিপুল পরিমাণ টাকা অবৈধপথে ভারতে পাচারের অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কক্সবাজার পৌর এলাকার লালদীঘির পশ্চিমপার বঙ্গবন্ধু সড়কের বাসিন্দা মৃত উজ্জল পালের ছেলে স্বরূপম পাল।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোলদীঘির পশ্চিমপার এলাকার হরিদাস দেবদাসের ছেলে শিবু লাল দেবদাস (৬১) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাসিন্দা। ২০১৯ সালে প্রণীত ভারতের (৫২৫) পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-২৪ পরগনা জেলার বারাসাত (সদর) মহকুমার মধ্যগ্রাম থানা ও পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুনগর এলাকার (৭০০১২৯) ভোটার তিনি। তার ভোটার নম্বর ২২৪ ওয়াইসিডাব্লিউ ১৫০৩৩১৭, বাড়ি নম্বর# এন০২৬৬। একই ভাবে তার স্ত্রী সীমা দেবদাস (৫১) এবং ছেলে অমর্ত্য দেবদাসও সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। স্ত্রীর ভোটার নম্বর-২২৫ ভিএইচএম ১৭৪৯৪৪৯, বাড়ি নম্বর-এন ০২৭৬, আর ছেলের ভোটার নম্বর-২২৩ ওয়াইসিডাব্লিউ ১৯৬৪৯৭২, বাড়ি নম্বর-এন ০৩৬১।
একই সঙ্গে শিবু লাল দেবদাস বাংলাদেশের নাগরিক। তার জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) নম্বর-১৯৫৮২২২২৪০৯৩৬৭৮৮৮। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ভোটার লিস্টে ৩৬৭৮৮৮ নম্বর ফরম মূলে তার নাম রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার গোলদিঘীর পশ্চিমপাড় (১৩৭৭) এলাকার ১১৭ সিরিয়ালের ভোটার নম্বর-২২১৩৭৭৩৬৭৮৮।
স্বরূপম পাল আরও উল্লেখ করেছেন, শিবু লাল দেবদাস একজন শিক্ষিত ব্যক্তি ও দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে অভিজ্ঞ। কিন্তু তিনি দ্বৈত ভোটার হওয়ার ব্যাপারে দেশের প্রচলিত আইনের বিধি-বিধান অনুসরণ না করে তথ্য গোপন করেছেন। এরই মাঝে তিনি সেরকারি সংস্থা মুক্তি কক্সবাজারের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে মুক্তি কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থার একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে বরাদ্দ পাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এসব ব্যয়ের লভ্যাংশ বা কাজ ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল টাকা অবৈধভাবে ভারতে পাচার করছেন। সেখানে (ভারতে) তিনি নিজের, স্ত্রী ও সন্তানের জন্য আলাদাভাবে বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছেন বলে খবর রয়েছে। সেখানে ভোটার তালিকায়ও তাদের আলাদা বাড়ি নম্বর উল্লেখ রয়েছে। দ্বৈত নাগরিকত্ব ও তথ্য গোপন করে এখানকার আয় বিদেশে পাচার করা রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের স্বার্থ বিরোধী কাজ। তাই তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেছেন স্বরূপম পাল।
এ বিষয়ে জানতে অ্যাডভোকেট শিবু লাল দেবদাসের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে বলেন, আমার বড় ভাই ও তার ছেলেরা ভারতের নাগরিক। বড় ভাই সেখানেই মারা গেছেন। আমার স্ত্রী কক্সবাজারেই অবস্থান করেন। আর ছেলে ভারতে পড়ালেখা করে।, ছেলেকে দেখতে আমার স্ত্রী মাঝে মাঝে ভারতে যান।
প্রশাসন চাইলে আমার সবকিছু তন্ন তন্ন করে তদন্ত করে দেখতে পারেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ সম্পাদক। কোরবানি ঈদে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিতরণ করা ২২টি পশুর টেন্ডার তিনি নিজের পছন্দের লোকদের দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টেন্ডারের নিয়মানুসারে না পাওয়ায় সংস্থার বিরুদ্ধে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে দাতা সংস্থার লোকজনের সামনে হামলা করায়। এটি এনজিও ব্যুরোসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্থরে জানাজানি হলে তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।
তিনি বলেন, আমি ও আমার পরিবার শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিক। আমি মুক্তি কক্সবাজারের অবৈতনিক সভাপতি, সংস্থা থেকে এক টাকাও নেই না। সংস্থার ভালমন্দ দেখভাল করলেও আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। বাকিটা প্রশাসন তদন্ত করে বের করুক।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মুক্তি কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি বলেন, সবাই জানেন তিনি (অ্যাডভোকেট শিবু লাল দেবদাস) প্রায় সময় পরিবারসহ ভারতে অবস্থান করেন। তবে, সেখানে নাগরিকত্ব নিয়েছেন কি না জানা নেই। এছাড়া মুক্তি কক্সবাজারের আর্থিক লেনদেনে অ্যাডভোকেট শিবু লাল দেবদাসের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলেও জানান তিনি।
উপদেষ্টা সম্পাদক : সরোয়ার আজম মানিক, সম্পাদক ও প্রকাশক : মনছুর আলম,
অফিস : হোটেল আল-আমিন কমপ্লেক্স, ৩য় তলা (দৈনিক মেহেদী ) মেইন রোড,, কক্সবাজার।