প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১১, ২০২৫, ৫:২০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ১, ২০১৯, ২:২৯ পি.এম
পেট চলাতে হলে হাত চলাতে হয়

তারেকুর রহমান : শ্রমজীবী অধিকার আদায়ের রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় দিন ১ মে। আজকের দিনটি মে দিবস হিসেবে পালন করে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষ। কিন্তু দিবসটি সম্পর্কে জানেনা এখনো কক্সবাজার পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী দীপ্তি ধর। ঝাড়ুর প্রতিটি কাঠির সাথে জীবিকা নির্বাহের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তার। ঝাড়ু হাতে শহরের ঘোনা পাড়ার দুই সন্তানের জননী দীপ্তি ধরের স্বামী নিখিল ধর দিনমুজরের কাজ করে। তাদের সংসারটি মুলতঃ দিনে আনে দিনে খায়, কাজ না পেলে অনাহারের দুশ্চিন্তায় বউ বাচ্চাকে চেহেরা দেখাবে না বলে অনেক সময় বাড়ি ফিরে না নিকিল ধর। দীর্ঘ ১৩ বছর দীপ্তি ধর পৌরসভায় ঝাড়ুদারের কাজ করছেন। কোর্ট বিল্ডিং এলাকার ময়লা আর্বজনা পরিষ্কার করা তার কাজ। পরিষ্কারের কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কাজের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখার কেউ নেই। পরিবারের দুই পুত্রের মধ্যে নয়ন ধর বর্তমানে সেন্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলের কপালে লেখাপড়া জোটেনি। মা-বাবাকে একটু সহযোগিতা করতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে লেখাপড়ার ইতি টানে শয়ন ধর। তিনিও কাজের সন্ধানে সূর্য উঠার আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে সূর্য ডুবলে যা পান পরিবারে দেন। দিনশেষে টানাপোড়নে কোন রকম সংসার চললেও বাড়ি ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলের জন্য মাস শেষে হিমশিম খেতে হয় এই অসচ্ছল পরিবারকে। অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২য় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে আজকের দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সব দেশেই আজ পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শাসন থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশেও ১৯৭২ সালে বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে মে দিবস পালিত হয়। ওই বছরই সদ্য স্বাধীন দেশে ১ মে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বছরের এই একটি দিনে বিশ্বের সমস্ত শ্রমিক ছুটি ভোগ করলেও ছুটি নেই দীপ্তি ধরের মতো গরীব দুস্থ মানুষের। ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে পৌরসভা থেকে মাসিক ২ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পান ৪২ বছর বয়সী দীপ্তি ধর। কাজ করার ফাঁকে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান এই পরিশ্রমী মহিলা। বছর তিনেক আগে ঝাড়– দেয়া অবস্থায় পেট ব্যথা করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দীপ্তি। পরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে জানতে পারে পেটে পাথর জমেছে। চিকিৎসা করার জন্য অনেক টাকার ব্যাপার, কিন্তু করার কিছু নেই সৃষ্টিকর্তা তাদের একমাত্র ভরসা। পৌরসভার একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে তৎকালীন পৌর র্কতৃপক্ষের কাছে কোন সহযোগিতা পান নি তিনি। বরং অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের বেডে যতদিন ছিলেন অর্থাৎ যতদিন কাজে আসতে পারেন নাই ততদিন তার বেতন বন্ধ ছিল। কোনো অসুবিধার কারণে একদিন কাজে আসতে না পারলে সেদিনের বেতন কেটে নেয়া হয়। এছাড়াও তিনি ধবল রোগে আক্রান্ত একজন নারী শ্রমিক। তার পুরো শরীর ধবল রোগে খেয়ে ফেলতেছে। শরীরকে কাজের উপযোগী করে তুলতে ঔষুধ লাগে অনেক টাকার। কিন্তু সামর্থ্য নেই। কথা গুলো বলার সাথে সাথে চোখের পানিতে টলমল করছে তার দুচোখ। শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বলেন, আমার কিসের মে দিবস; হাত চললে পেটে ভাত, হাত না চললে মাথায় হাত। পৃথিবীতে কেউ কারো না, নিজের শক্তি যতক্ষণ আছে ততক্ষণ নিজের উপর ভরসা করা চলে। কাজ করতে পারলেই পেটে ভাত জোটবে অন্যথায় অনাহারে মরে গেলেও কেউ ফিরে তাকায় না। তিনি বলেন, আমার সংসারটি খুব কষ্টে চলে, তাই বাধ্য হয়ে ময়লা আবর্জনা পরিচ্ছন্নতার এ কাজ করি। দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকার বাজার খরচ লাগে পরিবারে। এ টাকা জোগান দিতে কতই না কষ্ট হয় তা বলে শেষ করতে পারবো না। অন্য কাজ পাচ্ছি না, আরেকটু বেশি বেতনে অন্য কাজ পেলে ওই কাজে নিজেকে মনোনিবেশ করতাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাসা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ দীপ্তি ধরকে প্রতি মাসে ২৫০০-৩০০০ টাকা গুণতে হয়। বর্তমানে দিন দিন বাসা ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ বাসা বেড়ে যাওয়ার ভয়ও রীতিমতো কাটছে না জীবন সংগ্রামী দীপ্তি ধরের। এক মুঠো ভাতের জন্য দিনের পর দিন কাজ করলেও শ্রমিক হিসেবে মর্যাদা পাচ্ছেন না দীপ্তি ধর। মহান মে দিবসে সব শ্রমিকদের ছুটি থাকলেও দীপ্তি ধরের মতো অসুস্থ বয়স্ক শ্রমিকদের ছুটি দেয়া হয় না। মে দিবসেও কাজ করতে হয় তাদের। এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহেনা আক্তার পাখির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দীপ্তি ধর দীর্ঘদিন পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত থাকলেও নতুন কাউন্সিলর হিসেবে তার বেতন সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। এখন জানতে পেরেছি। একজন মহিলা দীর্ঘদিন ধরে জীবিকার তাগিদে পৌরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাকে
সেবা করার দায়িত্ব আমাদের (কর্তৃপক্ষ)। আমরা পৌরবাসীর সেবা করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসেছি। পৌরবাসীর সেবা করতে গিয়ে কেউ অনাহারে থাকুক বা অভাবে থাকুক তা কখনো চাইবো না। পৌরসভার কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে দীপ্তি ধরকে মেয়রের নিকট আমি নিজে নিয়ে গিয়ে তার সকল সমস্যা সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা করবো।
উপদেষ্টা সম্পাদক : সরোয়ার আজম মানিক, সম্পাদক ও প্রকাশক : মনছুর আলম,
অফিস : হোটেল আল-আমিন কমপ্লেক্স, ৩য় তলা (দৈনিক মেহেদী ) মেইন রোড,, কক্সবাজার।
Copyright © 2025 ChannelCox.Com. All rights reserved.