• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন

নৌকা প্রতীকের মিছিলে ভূমিদস্যুর হামলা ও নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের অভিযোগ

Md Nazim Uddin / ২৩ ভিউ টাইম
আপডেট : রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী নৌকা প্রতীকের টিপু সুলতানের কর্মী সভা ও কর্মীদের উপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে আরেক স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী সাবেক শিবির ক্যাডার ও চিহ্নিত ভূমিদস্যু চশমা প্রতীকের শফিকুল ইসলাম শফিকের বিরুদ্ধে।

স্বতন্ত্র চশমা প্রতীকের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিকের নেতৃত্বে হামলা ও উস্কানিমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান টিপু সুলতান।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী চশমা প্রতীকের শফিক ভোটারদের কাছ থেকে ভোট চাওয়ার পরিবর্তে এখন হামলা, হুমকি ও উস্কানিমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে নির্বাচনের শান্ত ও সুষ্ঠু পরিবেশকে বিঘ্ন সৃষ্টি করছেন। ভূমিদস্যু শফিকের নেতৃত্বে শনিবার (৬ নভেম্বর) রাতে ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া খামারপাড়া ও মেহেরআলী পাড়ায় নৌকা প্রতীকের সমর্থনে আয়োজিত কর্মী সভায় হামলা করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাবাজার এলাকায় নৌকা প্রতীকের কর্মী খালেকের উপর হামলা চালিয়ে আহত করা হয়েছে।’

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী টিপু সুলতান আরও বলেন, ‘ঝিলংজায় নৌকা প্রতীকের জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী হামলা চালিয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করতে উঠেপড়ে লেগেছে। যেকোন মূল্যে তারা নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতে চায়।’ এ পরিস্থিতিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী টিপু সুলতান নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, সাংবাদিক, সচেতন মহল ও ঝিলংজা ইউনিয়নের সকল ভোটারের সহায়তা কামনা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিলংজার খরুলিয়ায় হঠাৎ করে উদয় হয়েছে শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক নামে এক ‘ভূমিদস্যু’র। যার টাকার বাহাদুরিতে প্রশাসনসহ নগ্নভাবে ব্যবহার হচ্ছে তার ভূমিদস্যূতায়। শফিকের দাবিকৃত জমি কেউ ছেড়ে না দিলে অসহায় মানুষদের বিনা মামলায় বসতবাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়! এই যেন চলছে দুর্বলের উপর ‘শক্তিমানের খেলা’।

ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়াসহ পুরো কক্সবাজারে একের পর এক জমি দখল করে নিচ্ছে বিদেশ ফেরত ‘প্রভাবশালী ভূমিদস্যু’ শফিক। সুযোগ পেলেই ওই ব্যক্তি মসজিদ মাদ্রাসার নামে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন, পৈত্রিক সম্পত্তি, রাস্তা ও নদীর পাশাপাশি জমিও দখল করে নিচ্ছে।

সূত্র মতে, এই শফিকের করালগ্রাসী থাবায় যেন সবকিছু দখল হয়ে যাচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না প্রতিবন্ধী, সরকারি জমি, বিধবা, অসহায় নারী পুরুষের বসতভিটাও। অভিযোগ উঠেছে, অনেক রাজনৈতিক নেতারাও শফিকের ‘ক্ষমতা’র কাছে অসহায়। তার কথায় পুলিশ ‘ওঠে আর বসে’-এমন প্রচারও আছে। প্রশ্ন উঠেছে, শফিকের ক্ষমতার উৎস্য কোথায়? অসংখ্য নিরীহ মানুষের ভিটেমাটি কেড়ে নিলেও তার বিরুদ্ধে কেন প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না?

অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েক বছর আগে রামুর আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুচ রানা চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ঘাটপাড়া এলাকার জমি রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে দখল করে দেয়াল নির্মাণ করে ‘চিহ্নিত ভূমিদস্যু’ শফিক। সরকারী দলের নেতা হয়েও নিজের জমির দখল ঠেকাতে পারেননি ইউনুছ রানা। ভূমিদস্যু শফিক এতই ক্ষমতাধর যে, পরে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ছাড়া প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় পর্যন্ত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি তিনি। সম্প্রতি আদালতের দেয়া ১৪৪ ধারা অমান্য করে খরুলিয়া মাষ্টার পাড়া এলাকায় মানসিক প্রতিবন্ধী পরিবার আবু বক্কর ছিদ্দিকের ৪০ বছরের ভোগদখলীয় বসতভিটার ২৯ শতক জমি দখলের জন্য একাধিকবার হামলা চালায় ওই প্রতিবন্ধী পরিবারের উপর।

আরেকটি সূত্র জানান, গত কয়েক বছরের মধ্যে সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া মুন্সিবিলের প্রবাসী রফিক ও মৃত ছৈয়দ নুরের স্ত্রীর মার্কেটসহ জায়গা দখল করে নেয় ‘ভূমিখেকো’ শফিক। কয়েকদিন আগে ঘাট পাড়ার মৃত মনিরুজ্জামানের বসতভিটে দখল করে নেয় শফিক। পরে কিছুদিন যেতে না যেতে মাদ্রাসা নির্মাণের নামে একই এলাকার আয়াছ সওদাগরসহ আরোও কয়েকজনের কৃষি জমি জোরপূর্বক বালি ভরাট করে দখল করে রাখে। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে কিছু অংশ ছেড়ে দেয়। শুধু তা নয়, ভূমিদস্যু শফিক নিজ চাচা ভুলুর জমি দখল করতে পর্যন্ত দ্বিধা করেনি, যার কারণে তিনি স্টোক করে মারা যান। জমি ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানালে এরশাদ নামে এক মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে বেদড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। একই এলাকার আবুল হাশেম ও তার অসহায় পরিবারের জমি দখল করে নেয়া হয়।

কেউ জমি ফেরত চাইলে তার বাড়িতে গিয়ে শফিকের সন্ত্রাসীরা হত্যার হুমকি দিয়ে আসে। ভূমিদস্যু শফিকের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। বর্তমানে খরুলিয়াসহ সদরের বিভিন্ন এলাকায় তার কারণে সাধারণ লোকজন আতঙ্কের মধ্যে জীবনযাপন করছেন।

জানা গেছে,, ভূমিদস্যু শফিক জামায়াত শিবিরের একসময়ের দূর্ধর্ষ ক্যাডার। মধ্যখানে বিদেশে অবৈধ টাকার পাহাড় বানিয়ে দেশে ফিরে সরকার দলীয় এক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় চলছেন। নিজের স্বার্থে দখল-বেদখল জমির পাহাড় বানিয়ে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তবে সেই অপকর্ম ঢাকতে জনপ্রতিনিধি হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন চিহ্নিত ভূমিদস্যু শফিক। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠ গরম করছেন তিনি। জনপ্রিয়তা না থাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে স্থানীয়দের সিম্পৃতি কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।

ভুক্তভোগি ও সাধারণ মানুষ জানান, শফিকের লালিত সন্ত্রাসী বাহিনী আইনের কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে এলাকায় এখন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। তারা এ সমস্ত সন্ত্রাসীদের আগ্রাসন থেকে বাঁচার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

খরুলিয়া মাস্টার পাড়ার বাসিন্দা সাবেকুন্নাহার নামে এক ভুক্তভোগী জানান, কয়েক বছর আগে এলাকায় বেশকিছু জমি কিনে শফিকুল ইসলাম। কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের বসতভিটার উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তার। তাদের বাবা আবু বক্কর মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় মা সাজেদা বেগম সন্তানদের নিয়ে কোন রকম খেয়ে-পরে জীবনযাপন করছেন। ইতোমধ্যে নামমাত্র মূল্যে তার ভিটাটি বিক্রি করতে নানাভাবে হয়রানি শুরু করে ভূমিদস্যু শফিক। কিন্তু প্রস্তাবে বসতভিটা বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করায় তার লালিত ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করে হয়রানি শুরু করে শফিক।

এরকম ঘটনা একটি নয়, ঘটছে অহরহ। জুলুমবাজি থেকে পরিত্রাণ চায় ভুক্তভোগিরা।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ