তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে কুরআন শিক্ষা দিচ্ছে কামরাঙ্গীরচরের মাদরাসাকামরাঙ্গীচরের মাদরাসাটিতে এখন প্রতিদিন ২০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নিয়মিত কুরআন শিক্ষা নিচ্ছেন
ঢাকার কামরাঙ্গীচরের লোহার ব্রিজ পার হয়ে কিছুদূর এগোতেই চোখে পড়বে তিনতলা একটি ভবন। ভবনের সামনেই বড় ব্যানারে ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদরাসা’ লেখা থাকায় চিনতে অসুবিধা হয় না নন্দিত প্রতিষ্ঠানটিকে।
ভবনের নিচতলায় একটি খাবার হোটেলের দোকান। দোকানের পাশেই ভবনে ঢোকার ফটক। এই ফটকের কাছেও ছোট দুটি ব্যানারে মাদরাসার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই জানা গেল; ভবনটির তিনতলায় এ মাদরাসার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
তিনতলায় উঠতেই মাদরাসার নাম লেখা বড় ব্যানার, তার সঙ্গে দরজা। ভেতরে ঢোকার অনুমতি চাইতেই মাদরাসার সহকারী প্রধান শিক্ষক মাওলানা মাহমুদ আল হাসান দরজায় চলে এলেন। মাদরাসা কক্ষে ঢুকে দেখা গেলো সাজানো-গোছানো পড়ার ব্যবস্থা। সামনে বড় হোয়াইট বোর্ড। কক্ষের এক কোণায় রয়েছে ইসলামী বইয়ের বড় দুইটি শেল্ফ, যেখানে শত শত ধর্মীয় বই রয়েছে। এর পাশেই প্রায় শতাধিক রেহেলও (বই রাখার জন্য) রয়েছে। আর সেই কক্ষে প্রবেশের বাঁ পাশে রয়েছে অজুখানা ও ওয়াশরুম।
দেশের তৃতীয় লিঙ্গ তথা হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য প্রথম গড়ে ওঠা এই মাদরাসার ব্যবস্থাপনা যে কাউকেই সন্তুষ্ট করবে। সেই তৃপ্তি দেখা যায় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের চোখেমুখেও।
সরকারের সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপ বলছে, দেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। আর বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের হিসাবে এই সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। গত বছরের ৬ নভেম্বর মাদরাসাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। তখন থেকেই মাদরাসাটির কার্যক্রম চলমান আছে।
আর চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি নতুন বর্ষের সবক প্রদান অনুষ্ঠান হয়। এ অনুষ্ঠানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিরা (টিম লিডার) উপস্থিত ছিলেন। আগামী ২৬ মার্চ এ মাদরাসা থেকে গত কয়েকমাসে তৃতীয় লিঙ্গের এই শিক্ষার্থীরা কী শিখলেন বা কেমন শিখছেন সে বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এই মাদরাসার কয়েকটি শাখা রয়েছে। প্রতিদিন ঢাকার এ মাদরাসাগুলোতে প্রায় ২০০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করেন। ঢাকার মধ্যে জুরাইন, মতিঝিল, কমলাপুর, গোপীবাগ, মান্ডাসহ ১৪টি এলাকায় মাদরাসাটির কার্যক্রম চলছে।