• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৬:২১ অপরাহ্ন

৩৫% শিক্ষার্থী ছেড়েছে স্কুল, ১৬ শতাংশের খরচ চালানো দায় সমকাল প্রতিবেদক

ডেস্ক নিউজ / ১৬ ভিউ টাইম
আপডেট : বুধবার, ১ জুন, ২০২২

করোনাকালে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় কিশোর-কিশোরীদের জীবনে নানা রকম পরিবর্তন এসেছে। ‘অ্যাডোলেসেন্ট গার্লস ভালনারাবিলিটিজ অ্যান্ড ট্রানজিশন ইন দ্য কনটেপট অব কভিড-১৯’ শীর্ষক এক গবেষণার ফলাফলে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের তিন জেলা গাইবান্ধা (চরম দারিদ্র্যের ভিত্তিতে), কুমিল্লা (অধিক পরিমাণে প্রবাসীর ভিত্তিতে) ও নড়াইলের (অধিক পরিমাণে বাল্যবিয়ের ভিত্তিতে) ২৬ উপজেলার ২ হাজার ৭৫৮টি পরিবারের ৩ হাজার ১৩৯ কিশোর-কিশোরীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জরিপটি করা হয়।
বুধবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইনে গবেষণার ফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে নানা তথ্য তুলে ধরা হয়। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং জিআইজেডের রুল অব ল প্রোগ্রাম যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিএমজেড) এবং ইউকে ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) সহায়তায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, করোনার কারণে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, মনোসামাজিক টানাপোড়েন, সহিংসতার ঝুঁকি বৃদ্ধি, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ- এমন নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে কিশোর-কিশোরীদের। করোনাকালে শিক্ষার ব্যাপারে অভিভাবক ও কিশোর-কিশোরীদের নেওয়া সিদ্ধান্ত তাদের ভবিষ্যতের পথকে প্রভাবিত করবে। শুধু তাই নয়, তাদের জীবিকা এবং প্রজনন স্বাস্থ্যেও পড়বে এর প্রভাব। মিশ্র পদ্ধতির এই গবেষণা করা হয়েছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। করোনা সংকট কিশোর-কিশোরীদের জীবনে কীভাবে পরিবর্তন এনেছে, তা বিশ্নেষণ করা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে এ দেশের নারী ও কিশোরীদের অবস্থা কেমন- বিশ্নেষণের মাধ্যমে তা বোঝা ছিল এ গবেষণার লক্ষ্য।

গবেষণা বলছে, ৩৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী মহামারির আগে তিন-পাঁচ ঘণ্টা পড়াশোনা করত। মহামারির সময়ে কিশোর-কিশোরীদের এই হার ১৪ শতাংশে নেমেছে। যদিও করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার খুব একটা বেশি নয়, তবুও অন্তত ৩৫ শতাংশ ঝরে পড়া শিক্ষার্থী জানিয়েছে, করোনার কারণে তারা লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে ১৬ শতাংশ ঝরে পড়া কিশোর-কিশোরী জানিয়েছে, তারা পড়াশোনার খরচই আর চালাতে পারছে না। করোনার আগে ও পরে ৭.৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ছেলে ১২ শতাংশ ও মেয়ে ৫ শতাংশ।

মহামারির আগে ও পরে বাল্যবিয়ের হারে সামান্য ব্যবধান হয়েছে বলেও গবেষণায় তথ্য পাওয়া যায়। গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রায় ৫০ শতাংশ মা-বাবা জানিয়েছেন, মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে করোনা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। মেয়েদের ও তাদের পরিবারের সম্মানকে সুরক্ষিত রাখতে দ্রুত বিয়ে দিতে হবে- কভিডের সময়ে প্রতিনিয়ত এমন সামাজিক চাপের মুখে ছিল কিছু পরিবার। ফলে সেসব পরিবারের মা-বাবা তাঁদের মেয়েদের বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, আমাদের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে উত্তরণ এবং একই সঙ্গে মানুষের সক্ষমতা ও সুস্থতাকে সামগ্রিকভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। আরও স্থিতিস্থাপক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা প্রণয়নে সরকার, উন্নয়ন অংশীদার এবং সুশীল সমাজ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। সে ব্যবস্থাই আমাদের লিঙ্গ ও আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিকে একটি মৌল মানবিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব (মতামত) উম্মে কুলসুম, ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেল, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মুসলেম, জার্মান দূতাবাসের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের উপপ্রধান ক্যারেন ব্লুম, জিআইজেডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. অ্যাঙ্গেলিকা ফ্লেডারমান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি) এম এম মাহমুদুল্লাহ, ব্র্যাকের সাবেক পরিচালক (শিক্ষা) ড. শফিকুল ইসলাম, ক্ল্যারিসা কান্ট্রি টেরে দেস হোমস (টিডিএইচ)-এর কো-অর্ডিনেটর ড. জিনিয়া আফরোজ প্রমুখ অংশ।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ