• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৭ অপরাহ্ন

ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

Md Nazim Uddin / ৩৪ ভিউ টাইম
আপডেট : সোমবার, ৬ জুন, ২০২২

কক্সবাজারের আলোচিত বেসরকারি হাসপাতাল ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালে আবারও ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতি রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রবিবার (৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে নিহতের স্বজনরা ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতাল অবরুদ্ধ করে রাখলে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসে বলেন আপনারা উপরে আসেন সমঝোতা হবে বলে শান্তনা দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনি ঝামেলা এড়াতে তিনদিনপর পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা করবেন বলে জানা গেছে।

মৃত প্রসূতি রোগী ফারজানা আক্তার (২৭) টেকনাফ পৌরসভার নাইক্ষ্যংপাড়া এলাকার মেয়ে, সেন্টমার্টিনের জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতি রোগীর মৃত্যুর খবর যখন ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় তখন সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ ওই হাসপাতালে ভিড় করলে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসে বিচার হবে আপনারা উপরে আসেন বলে শান্তনা দেন।

রোগীর স্থানীয় স্বজনসহ কয়েকজন সাংবাদিক নিয়ে ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালে ওই চিকিৎসক’র কাছে মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনদিনপরে এ বিষয়ে বসবো।

নিহতের স্বামী জিয়াউর রহমান জানান, শনিবার ৪ জুন রাত১১টায় আমার স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ ফাতিমা জান্নাত জানান আপনার স্ত্রীকে সিজার করতে হবে ওনার সময় হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, রাত সাড়ে ১১ টায় স্ত্রী ফারজানাকে ফুয়াদ আল্ খতীব হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্বামী জিয়াউর রহমান বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট অনুযায়ী আমার স্ত্রীর আরো ১-২ সপ্তাহ সময় ছিলো। কিন্তু চিকিৎসক নিশ্চিত করে জানালেন এখনই সিজার করতে হবে। অন্যথায় বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তখন বাজে রাত ১১:৪০ মিনিট, এত রাত্রে সিজার করতে টাকা পাব কই? আমি আমার আত্বীয়-স্বজনদের কাছে টাকা জোগাড় করতে তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয়। আমার এক চাচার কাছে গিয়ে টাকা নিয়ে প্রায় রাত সাড়ে ১২টার সময় হাসপাতালে এসে দেখি আমার স্ত্রী নেই? হাসাপাতলের একজন দায়িত্বরত স্টাফ আমাকে বলল আপনার স্ত্রীকে সিজার করতে ডাক্তার ভেতরে নিয়েগেছে।

নিহতের স্বামী জানান, প্রায় ৩ ঘন্টা পর আমাদেরকে ডাক্তার এসে বলল! আপনার সন্তান নেন। আপনার স্ত্রীর অবস্থা ভালনা। তখন ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম কি সমস্যা হয়েছে? ডাক্তার উত্তর না দিয়ে চলে গেছেন। আমাদেরকে রেফার করলেন জেলা সদর হাসপাতালের আইসিইউতে।

নিহতের বড় ভাই সাংবাদিক কায়সারুল হক জুয়েলের অভিযোগ, তাদের না জানিয়েই এবং তাদের অনুপস্থিতিতে কেন তার বোনকে সিজার করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, তার বোন ফারজানা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। ভুল চিকিৎসায় তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালে প্রায় সময় ভুল চিকিৎসায় মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে প্রচার করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন অপরাধকান্ডে জড়িত এক শ্রেনীর দালাল জড়িত আছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ডাঃ ফাতেমা জান্নাত এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগীর ব্যাথা আরম্ভ হওয়ায় অপারেশন রুমে নিয়ে সিজার করলে প্রথমে রোগী সুস্থ ছিল। কিছুক্ষণ পর রোগী হার্ট ফেল করে পরবর্তীতে রোগী রক্তজমাট না বাধায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে দীর্ঘক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগীতায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। রোগী অভিভাবক ছাড়া কেন রোগীকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হল সে প্রশ্নের সৎ উত্তর দিতে পারে নাই।

ফুয়াদ আল্ খতীব হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন খালিদ জানান, আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ বোর্ড গঠন করে চেষ্টা করেছি। হয়ত তার হায়াত এতটুকুই ছিল?

ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সুজন জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অভিযুক্ত ডাক্তারসহ মৃত রোগীর অভিভাবকদের নিয়ে এক সাথে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার (ওসি) তদন্ত মোঃ সেলিম উদ্দিন জানান, ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় এখনও রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে রোগীর চিকিৎসার সব কাগজপত্র দেখা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ