• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন

জানালা দিয়ে গুলি এসে লাগে মা-মেয়ের শরীরে

ডেস্ক নিউজ / ১২ ভিউ টাইম
আপডেট : শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২

আশপাশে অনেক বাড়ি ছিল। সেখানে নারী-শিশুসহ ছিল বিভিন্ন বয়সী লোকজন। আবাসিক এলাকায় গুলি ছোড়ার সময় একটু চিন্তাভাবনা করলে আমার শিশুসন্তান ও স্ত্রী গুলিবিদ্ধ হতো না। তারা এখনো ভালো নেই।
এতে যে ক্ষতিটা হলো, সারা জীবন তা বয়ে বেড়াতে হবে। ’
এভাবেই বলছিলেন শিশু লামিসার (৩) বাবা সফিউল ইসলাম। গতকাল শুক্রবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ২০৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন স্ত্রী রুবিনা আক্তার ও মেয়ে লামিসার পাশে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করে এসব কথা বলেন তিনি।

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের একটি ভোটকেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণার পর দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন রুবিনা ও লামিসা।

সফিউল আক্ষেপ করে বলেন, ‘মানুষ যদি ঘরেও নিরাপদ না থাকে তাহলে থাকবে কোথায়। আমার স্ত্রী-সন্তানের শরীরে ৩০টি ছররা গুলি লেগেছে। মেয়ের পেটে, বুকে এবং স্ত্রীর হাতে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলির ক্ষত রয়েছে। তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রণায় বাচ্চাটা চিৎকার করছে। ’

যেভাবে তাঁরা গুলিবিদ্ধ

সফিউল জানালেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী পৃথক এনজিওতে কাজ করেন। ভোটে হট্টগোল হতে পারে ভেবে প্রথমে ভোট দেওয়ার ইচ্ছাই ছিল না তাঁদের। তিনি বলেন, ‘সেদিন ভোট দিয়ে আমার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে কেন্দ্রের পাশেই আমার শ্বশুরবাড়িতে যায়। আমার মেয়ে ও শ্যালকের সন্তানকে নিয়ে ঘরের জানালা খুলে খাটের ওপর বসে ছিল। হঠাৎ হট্টগোলের মধ্যেই গুলি ছোড়া হয়, জানালা বন্ধ করার সময়ও পায়নি আমার স্ত্রী। এর মধ্যেই ছররা গুলি এসে লাগে আমার স্ত্রী-সন্তানের গায়ে। শ্যালকের মেয়েটি খাটের নিচে লুকিয়ে কোনো মতে রক্ষা পায়। ’

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে সফিউল জানালেন, তাঁর স্ত্রী-সন্তান আগের চেয়ে বর্তমানে কিছুটা সুস্থ। তবে দীর্ঘদিন এর জের থাকবে।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রুবিনা ও লামিসার শরীর থেকে কিছু ছররা গুলি বের করা হয়েছে। এর পরও কিছু গুলি বা খোসার অংশ থাকতে পারে। সেটার জন্য চিকিৎসা চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সন্ধ্যায় জাজিরার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রহিম উদ্দিন মালাই মৃধাকান্দি একতা যুব সংঘ কেন্দ্রে ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচন শেষে ফলাফল ঘোষণা চলছিল। এ সময় দুই প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও মতিউর রহমান সিকদারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগানের গুলি ছোড়ে। এতে রুবিনা আক্তার, লামিসা ও ইমরান হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সার্বিক বিষয়ে জাজিরা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ থামাতে ও নির্বাচনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নিরাপদ রাখতে পুলিশ ১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। তাতে তিনজন আহত হওয়ার কথা শুনেছি। এ ঘটনায় প্রিজাইডিং অফিসার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। আমরা তদন্ত করে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। ’


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ