বিশেষ প্রতিবেদক : উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ২৮সদস্যের ৬ রোহিঙ্গা পরিবার গোপনে মিয়ানমার ফিরে গেছে বলে জানা গেছে। গত শনিবার রাতের কোন একসময় তারা সীমান্ত পেরিয়ে চলে যাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন রোহিঙ্গারা। মঙ্গলবার উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সুত্রে জানাগেছে, উখিয়ার বালুখালী -৯ নং ক্যাম্পের সি ব্লক থেকে ঐ রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরে গেছে । মিয়ানমার ফিরে যাওয়াদের মধ্যে মংডুর বলিবাজার এলাকার মোঃ সিরাজের ৪ সদস্যের পরিবার ও উত্তর রাখাইনের লং ডং এলাকার সাব্বির আহমদের ৫ সদস্যের পরিবারের নাম পাওয়া যায়।
অন্য চার পরিবারের নাম ঠিকানা জানা না গেলেও উক্ত ক্যাম্প ও পাশ্ববর্তী ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বালুখালী -১০ নং ক্যাম্পের মাষ্টার নুরুল কবির সহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান গোপনে মিয়ানমার ফিরে যাওয়ারা ইয়াবা গডফাদার। ক্যাম্পে তারা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারীতে ছিল। নিজেদের রক্ষার্থে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মিয়ানমার চলে গেছে। রাখাইনের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে তার সুসম্পর্ক থাকায় সে মিয়ানমার সরকারের সাথে গোপনে যোগাযোগ করে ফিরে গেছে।
অন্য বেশ কিছু রোহিঙ্গা জানান, এখানে দুই বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা কোন কূলকিনারা দেখছে না। ফিরে যাওয়ার অনেক রোহিঙ্গা আছে। কিন্তু নিরাপত্তার অভাবে মুখ খুলে বলতে পারছে না। আর প্রত্যাবাসনের যে প্রক্রিয়া তাতে সহজে মিয়ানমার ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে বলে রোহিঙ্গারা বিশ্বাস করতে পারছে না। তাই যারা সুযোগ পাচ্ছে গোপনে রাখাইনে নিজ ঘর বাড়ি বা গ্রামে ফিরে যাচ্ছে বলে তারা জানায়।
বালুখালী -৯ নং ক্যাম্পের অতিরিক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপ সচিব মোঃ হাফিজুল ইসলাম গোপনে মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার তথ্য জানা নেই বলে জানান। তবে কিছু রোহিঙ্গার সাথে মিয়ানমার আর্মির গোপন যোগাযোগ রয়েছে। ইতিপূর্বেও বেশ কিছু রোহিঙ্গা মিয়ানমার ফিরে গেছে এবং এধরনের বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কিছু রোহিঙ্গা গোপনে চলে গেলেও তা আমাদের অবহিত করে না বলে তিনি জানান।
এদিকে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে গেছে বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। এসব রোহিঙ্গার পরিচয় যাচাই চলছে বলে বৃহস্পতিবার দেশটির শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা মন্ত্রী ইউ থেইন সিউ জানিয়েছেন। থেইন সিউ জানান, ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে রাখাইনের আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে বাস করা অসুবিধাজনক ছিলো উল্লেখ করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘অপরপ্রান্তে বাস করা অসুবিধাজনক হওয়া তারা নিজেদের মতো করে ফিরে এসে। পরিচয় যাচাইয়ের পর কেবল তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র দেওয়া হবে।তিনি জানান, পরিচয় যাচাই শেষে এসব রোহিঙ্গাকে তাদের গ্রামে ফেরত পাঠানো হবে যেখানে তাদের স্বজনরা এখনো বাস করছে। ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম তারিখ ঠিক হয়েছিল। মিয়ানমারের অসহযোগিতামূলক আচরণের কারণে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনে তখন অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। সর্বশেষ ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ ছিল। তবে ওই দিনও রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনে অস্বীকৃতি জানায়।
অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দোজা বলেন, এ ধরনের কোন খবর আমাদের কাছে নেই। আর বিষয়ে কোন মন্তব্য করাও আমার পক্ষে সম্ভব না।