• শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৪ অপরাহ্ন

হাজার কোটির ১১ ঋণখেলাপিও পাচ্ছেন নবায়নের সুবিধা

বার্তা কক্ষ / ১৮৬ ভিউ টাইম
আপডেট : শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৯
চ্যানেল কক্স

আশরাফুল ইসলাম :

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে দেয়া বড় অঙ্কের ঋণের বেশির ভাগই কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে কিছু শিল্প গ্রুপের হাতে। ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের একটি বড় অংশই হাতেগোনা কয়েকটি শিল্প গ্রুপের হাতে আটকে রয়েছে। বিশেষ সুবিধায় নবায়ন করা ১১টি শিল্প গ্রুপও তাদের ঋণ পরিশোধ করছে না। এতে ব্যাংকিং খাতে পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর লোকসানের পাল্লা।

এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাত থেকে খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে চার বছরের মাথায় আবারো তাদের নতুন করে ঋণ নবায়নের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে তারাও ১২ বছরের জন্য ঋণ নবায়নের সুযোগ পাচ্ছেন। ঋণখেলাপিদের জন্য নতুন করে সুবিধা দেয়ার জন্য যে নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে তাতে এই ১১ শিল্প গ্রুপকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য ২০১৫ সালে ঋণ পুনর্গঠনের নীতিমালা জারি করা হয়। যেসব শিল্প গ্রুপের ৫০০ কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ ছিল তাদেরকে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এবং যেসব শিল্প গ্রুপের ১ হাজার কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ ছিল তাদের ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়নের সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

উদ্দেশ্য ছিল বিশেষ সুবিধা নিয়ে ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে শিল্প গ্রুপগুলোর লোকসান কাটিয়ে উঠবে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রেখে আয় উপার্জনের মাধ্যমে ঋণের অর্থ পরিশোধ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সুবিধা নিয়ে ওই সময় ১১টি শিল্প গ্রুপ ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করেছিল। ফলে ওই সময় রাতারাতি খেলাপি ঋণ কমে যায়।

কিন্তু পুনর্গঠনের সুবিধা নিয়ে এসব শিল্প গ্রুপ ঋণ নবায়ন করলেও পরবর্তিতে ওইসব খেলাপি ঋণ যথাযথভাবে পরিশোধ করেনি। উপরন্তু যে পরিমাণ ঋণ পুনর্গঠন করেছিল তার কিস্তি পরিশোধ না করায় সুদে আসলে তা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, উচ্চ আদালত থেকে খেলাপি ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ নিয়ে বড় গ্রুপগুলো অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২৪টি ব্যাংক থেকে এ সুবিধা নিয়েছিল শিল্প গ্রুপগুলো। ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংকগুলো এখন চরম বেকায়দায় পড়ে গেছে। ব্যাংকগুলোর পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।

এতে ব্যাংকের মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে ব্যাংকের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, অবলোপন বাদেই শুধু সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঋণ পুনর্গঠন করা ২৪ ব্যাংকের একটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে প্রভাবশালী এ শিল্প গ্রুপগুলোর বিশেষ সুবিধায় ঋণ নবায়ন করা হয়েছিল।

সাধারণত ঋণ নবায়ন করতে পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণের ১৫ শতাংশ নগদে ডাউন পেমেন্ট দিতে হয়। কিন্তু ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে ১ ও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ও ঋণ মঞ্জুরির সময় ধার্যকৃত সুদে বিশেষ ছাড় দিয়ে ঋণ নবায়ন করা হয়েছিল। ওই সময় ব্যাংকের প্রকৃতপক্ষে ক্ষতি হলেও আশা করা হয়েছিল বিশেষ সুবিধা নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করবে।

কিন্তু বাস্তবে ঠিক উল্টোটি হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বিশেষ সুবিধা নিয়ে ঋণ পুনর্গঠন করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছে না। উল্টো তাদেরকে খেলাপিও বলা যাবে না। কেউ কেউ উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়েছেন। উচ্চ আদালত থেকে রিট নিয়ে আবার অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন।

অথচ, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ঋণখেলাপি গ্রাহক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন না। অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবার তারা খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই ব্যাংকিং খাতকে তারা জিম্মি করে ফেলছেন।

এর পরেও নতুন করে আবারও তাদের সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ওই সূত্র আরো জানিয়েছে, খেলাপিদের সুবিধা দেয়ার জন্য নতুন যে নীতিমালা করা হচ্ছে তাতে অর্থমন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি প্রথমে ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা পাওয়া এই ১১ শিল্প গ্রুপকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়নি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন এ নীতিমালার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে ইতিবাচক মতামত দেয়া হয়।

এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনায় বলা হয়, যেসব বৃহৎ শিল্প গ্রুপ ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা গ্রহণ করেছে তাদের অধিকাংশই শর্তানুযায়ী ঋণ পরিশোধে সমর্থ হচ্ছেন না। ফলে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন নীতিমালায় আন্তর্ভুক্ত করা যায়। এ সুবিধা পেলে অন্য খেলাপিদের সাথে এরাও ১২ বছরের জন্য মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়নের সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি ঋণের সুদহারও কমে ৯ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ হবে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ