কক্সবাজারের কলাতলি ডলফিন মোড়ের ওয়ার্ল্ড বীচ রিসোর্ট অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে। বারবার এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটলেও পার পেয়ে গেছে অহরহ। প্রশাসনের কর্কাব্যক্তিরা টাকা ও ক্ষমতার গরমে বরফ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ পর্যটকরা হেনস্তা ও মৃত্যুকামী হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বন্ধুর পাল্লায় পড়ে টেকনাফের হ্নীলা মৌলভীবাজারের সহজ সরল শফিক আহমেদ (৪০) নামে এক দুবাই প্রবাসীকে অপহরণ করে ফাঁদে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এসময় ওই প্রবাসীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে অপহরণকারী চক্র।
সোমবার বিকেলে কক্সবাজার কলাতলী ওয়ার্ল্ড বীচ রিসোর্টে এই ঘটনা ঘটে।

অপহরণের শিকার যুবক শফিক আহমদ বলেন, তিনি দোকানের জন্য কিছু মালামাল কিনতে আসে কক্সবাজারে। হঠাৎ তার সাথে দুবাই থাকাকালীন রাসেল নামে এক যুবকের সাথে দেখা হয়। রাসেল হঠাৎ তাকে তার বউয়ের সাথে পরিচয় করে দেওয়ার নামে সড়কের পাশে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড বীচ রিসোর্টের ৮২৩ নং ফ্ল্যাটে ঢুকিয়ে তালাবদ্ধ করে দেয়। এসময় ফ্ল্যাটে আগে থেকে উৎপেতে থাকা ৫-৬ জন অস্ত্রধারী যুবক কিছু বুঝে উঠার আগে আমাকে বেদম মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমার কাছ থেকে ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা জোরপূর্বক আদায় করে। পরে এই ঘটনা কাউকে না জানাতে আমার উলঙ্গ ছবি ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিলে আমার নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

সরেজমিনে ওয়ার্ল্ড বিচে গিয়ে জানা যায়, সিসিটিভি ফুটেজে প্রবাসী শফিক আহমদকে ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতে দেখা যায়। খোরশেদ নামে এক কেয়ারটেকার ফ্ল্যাট মালিক আজমগীর থেকে এটি ভাড়া নেয়। খোরশেদ ও রাসেল এর নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটানো হয়। ঘটনার পর থেকে লাপাত্তা কেয়ারটেকার খোরশেদ। খোরশেদ সদর উপজেলার ভারুয়াখালী চোচুলা মুরা এলাকার রাহামত ছালামের পুত্র।
ফ্ল্যাট মালিক আজমগীর জানান, আমার কাছ থেকে কেয়ারটেকার খোরশেদ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। ঘটনার পর তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাঁর খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আমি শুধু ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছি। সেখানে যায় হোক না কেন আমার দেখার বিষয় নয়।
ওয়ার্ল্ড বীচ রিসোর্টের ল্যান্ড ওনার্স ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক শাহীনুল ইসলাম ও ল্যান্ড মালিক এডভোকেট আশরাফুল আলম বলেন, এখানে কিছু ফ্ল্যাট বিভিন্ন অপরাধী নিয়ন্ত্রণ করছে। যার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হবে।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) রাজ্জাক। তিনি বলেন, আমরা যাবতীয় খোঁজখবর নিচ্ছি। জড়িতদের গ্রেফতারে তৎপরতা অব্যাহত আছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
স্থানীয়রা জানান, কলাতলীর ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টটি বহুল বিতর্কিত। এখানে জমি মালিক ও ডেভেলপার কোম্পানির মধ্যে বিরোধ চলছে।
এর আগেও ট্যুরিস্ট পুলিশ ওই হোটেলে টর্চার সেল থেকে দু'জন পর্যটক উদ্ধার করে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চিহ্নিত অপরাধীরা এখানে আস্তানা গড়ে তুলেছে। এসব অপরাধী এখানে অপহরণ, ইয়াবা পাচার, জিম্মি করে টাকা আদায়সহ নানা অপরাধ সংঘটিত করছে। এখানকার অনেক ফ্ল্যাটকে বানানো হয়েছে টর্চার সেল। যার প্রভাব পড়েছে পর্যটনে।