বিশেষ প্রতিবেদক :
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের অপতৎপরতা মোকাবেলায় বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের দ্বীপ সেন্টমার্টিনে নিজেদের অবস্থান জোরদার করেছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি। ক্যাম্প স্থাপনের পাশাপাশি টহল ব্যবস্থাও বাড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সেন্ট মার্টিন পরিদর্শনকালে বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল সাফিনুর ইসলাম বলেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার বাহিনীর সদস্যরা সক্ষম। আর স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধি বিষয়টাকে দেশের নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। যার কারণে এখন দ্বীপবাসির মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে।
দেশের সর্ব দক্ষিণের দ্বীপ সেন্টমার্টিন নিয়ে কিছুদিন ধরে নানামুখী অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে প্রতিবেশী মিয়ানমার। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের মানচিত্রে সেন্টমার্টিনকে অন্তভূক্ত করার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তার’ই ধারাবাহিকতায় ছয় মাস আগে সেখানে একটি স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, বিজিবি। দ্বীপটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরুর পর মঙ্গলবার দুপুরে পরিদর্শনে আসেন বিজিবি প্রধান। দ্বীপের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন তিনি।
এর আগে গত ২০১৭ সালের আগষ্ট মাস থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের আগ্রাসী কর্মকান্ডে কিছুটা আতংকিত ছিলো সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা। তবে এখন বিজিবি’র অবস্থান এবং টহল জোরদার হওয়ায় স্বস্থি ফিরেছে তাদের মাঝে।
দ্বীপের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, সেন্টমার্টিনকে যখন মিয়ানমার তাদের দাবি করে তখন দ্বীপবাসীর মধ্যে একটি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সেন্টমার্টিন হচ্ছে বাংলাদেশের।
শফিক উল্লাহ বলেন, সেন্টমার্টিন পুরোদ্বীপটিকে বিজিবি নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাতে ও দিনে ২৪ ঘন্টা টহল জোরদার করেছে। যা কারণে আমাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এখন আমরা সবসময় নিজেদের নিরাপদ মনে করি।
মূলত টেকনাফ থেকে বোট কিংবা জাহাজে করেই সেন্টমার্টিন আসতে হয়। আগে থেকেই এখানে নৌ বাহিনী এবং কোস্টগার্ডের অবস্থান রয়েছে। সবশেষ পর্যায়ে বিজিবি’র অবস্থানকে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে ইতিবাচক বলছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ জানান, আগে প্রতিনিয়ত সাগরে মিয়ানমারের নৌ বাহিনীর জাহাজ আসতো এবং বাংলাদেশের সীমানার খুব কাছাকাছি টহল দিত। কিন্তু এখন বিজিবি আসার পর থেকে মিয়ানমারের নৌ বাহিনী সাগরে অনেক দূরে তাদের অভ্যন্তরে টহল দিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জলসীমার কাছাকাছি আর তাদের দেখা যায় না। এখন দ্বীপবাসী খুব নিরাপদ রয়েছে।
আর সেন্টমার্টিন পরিদর্শন শেষে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুর ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমার হয়তো অজ্ঞাতবসত এটি বলছে। আন্তর্জাতিক সীমানারেখা অনুযায়ী সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের। সীমান্তের সুরক্ষায় বিজিবি সেন্টমার্টিনে টহল জোরদার করবে। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সীমান্তের সড়কের কাজ চলছে। সীমান্ত দিয়ে কোন রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বিজিবির তৎপরতায় অনেকটা চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধ কমে এসেছে।
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার অন্তগত সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্থানীয়ভাবে ১০ হাজার লোকের বসবাস। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত এটি। বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসে