হামিম উল কবির : প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ এগিয়ে আসছে ধীর গতিতে এটা আজ শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানতে পারে এবং বাংলাদেশের খুলনা ও সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় উঠে আসবে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ। গত ৬ ঘণ্টায় ফণী সামনের দিকে এগিয়েছে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে। উড়িষ্যা উপকূলে উঠার সময় ফণীর গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ২১০ কিলোমিটার। তবে তা খুলনা উপকূলে আসার পর গতি ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটারে নেমে আসতে পারে। আবহাওয়া অফিস মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলেছে। অপরদিকে আবহাওয়া অফিস চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের জন্য ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত জারি করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি ৯১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৮৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ফণীর কারণে ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও এর দূরবর্তী চর ও দ্বীপে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও এর দূরবর্তী চর ও দ্বীপগুলোর জন্য ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ও চরগুলো এবং দ্বীপের উপর দিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত।
কানাডা প্রবাসী আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি কম-বেশি এক লাখ ২১ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে চক্রাকারে ঘুরছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১১০০ কিলোমিটার এবং প্রস্থও ঠিক ১১০০ কিলোমিটার। তার মানে এটা বাংলাদেশ ভূখণ্ডের আয়তনের প্রায় কাছাকাছি। এত বিশাল আয়তনের হওয়ায় ফণী বাংলাদেশে আসতে থাকলে এক সময় পুরো বাংলাদেশই এর মধ্যে ঢুকে যাবে। ফলে পুরো বাংলাদেশেই যেমন এক সঙ্গে ঝড়ের কবলে পড়বে তেমনি পুরো দেশেই এক সঙ্গে বৃষ্টিপাত হবে। প্রসঙ্গত চট্টগ্রাম থেকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দূরত্ব সরল রেখায় প্রায় ৯০০ কিলোমিটার। যে মানচিত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চিহ্নিত করা হয় সে মানচিত্রের প্রতিটি ঘরের দৈর্ঘ্য ১০ ডিগ্রি এবং প্রস্থও একই রকম ১০ ডিগ্রি। প্রতি ডিগ্রিতে ১১১ কিলোমিটার নির্দেশ করা হয়।
ফণী সাগরে থেকে ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে। ফণীর বর্তমান অবস্থানে পানির গভীরতা কম এবং যেখানে রয়েছে সেখানকার পানির তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি। পানির বর্ধিত উষ্ণতা ও ঘূর্ণিঝড়ের আশপাশে থাকার আর্দ্রতা শোষণ করে এর শক্তি বেড়ে যাচ্ছে বলে মোস্তফা কামাল পলাশ জানান। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর এলাকায় পানির বাষ্পীয়ভবনের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে প্রচুর মেঘ। আর মেঘের মধ্যে থাকে সুপ্ত তাপ (লেটেন্ট হিট) এবং এ তাপ মেঘ সর্বদাই ত্যাগ করতে থাকে। মেঘের ওই সুপ্ত তাপ ঘূর্ণিঝড় শোষে নিয়ে নিজে আরো শক্তিশালী হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের পানির উপরিতলের তাপমাত্রা বেশি থাকায় ক্রমাগত পানি বাষ্পায়িত হয়ে মেঘ তৈরি করছে। আবার কিছু মেঘ সৃষ্টি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় এলাকার বাইরে। ঘূর্ণিঝড় সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে এই মেঘগুলোকেও নিজের চক্রাকার ঘূর্ণনের মধ্যে যোগ করে নেবে। এটা ঘূর্ণিঝড়কে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বৃষ্টির পরিমাণও বাড়িয়ে দেবে।
ফণী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের দিকে কিছুটা দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি-৩-এ নেমে গেলেও বিকেলের দিকে এটা আবারো শক্তিশালী হয়ে ক্যাটাগরি-৪ -এ পৌঁছেছে। এর মধ্যে গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত দাঁড়ায় বিকেল পর্যন্ত। তবে বাইরে এর গতিবেগ সামান্য কম।
কিভাবে ঘূর্ণিঝড় গঠিত হয়?
সাগর অথবা মহাসাগরের অপেক্ষাকৃত উষ্ণ পানির এলাকায় ঘূর্ণিঝড় গঠিত হয়। পানির উপরের স্তর থেকে ৬০ মিটার গভীর পর্যন্ত ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপের প্রয়োজন হয় ঘূর্ণিঝড় গঠনের জন্য। এপ্রিল থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে ভারত মহাসাগরের বঙ্গোপসাগর এলাকার কাছাকাছি অথবা বঙ্গোপসাগর এলাকায় এ রকম তাপমাত্রা থাকে। ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকার পরও ঘূর্ণিঝড় হওয়ার জন্য প্রয়োজন ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকের বায়ুপ্রবাহ (কেবল উত্তর গোলার্ধের এলাকার জন্য)। এ সময় বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ সীমান্তের বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে এবং একই সাথে উত্তর সীমান্তের বায়ু পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। এই দুটি প্রক্রিয়ার কারণে ঘূর্ণিঝড় গঠনের স্থানে বায়ু ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরতে থাকে এবং সৃষ্টি করে ঘূর্ণিঝড়ের। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর এটা উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পরে এটা বায়ুর তাপমাত্রা, বায়ুতে থাকা আর্দ্রতা ও মেঘের সাথে মিশে শক্তিশালী হতে থাকে। এপ্রিলে ঘূর্ণিঝড় উপকূল থেকে কয়েক শ’ কিলোমিটার দূরে গঠিত হয় বলে কোথাও বাধাপ্রাপ্ত না হয়ে এগিয়ে আসে এবং শক্তিশালী হয়। আবার অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে প্রশান্ত মহাসাগরে গঠিত হয় এবং বিশাল স্থলভাগ পেরিয়ে বঙ্গোপসাগরে আসতে সক্ষম হয়।
ফণীর চেয়ে ভারতে আঘাত হানা ফাইলিন ও এরও আগে বাংলাদেশে আঘাত হানা সিডর অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। সিডর সর্বোচ্চ ২৬০ কিলোমিটার বেগে আঘাত করেছিল। সিডর ও ফাইলিনের গতিবেগ বেশি থাকার পরও ক্ষয়ক্ষতি বেশি ছিল না। ২০০৮ সালে মিয়ানমারে আঘাত হানা নার্গিসের আঘাতে এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। ক্ষতি বেশি হওয়ার কারণ মিয়ানমারের কাছে আবহাওয়া পরিমাপ ও পূর্বাভাস দেয়ার কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি ছিল না। আর ছিল উদাসীনতা। কারণ নার্গিস আঘাত হেনেছিল মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে। সেখানকার বেশির ভাগই মুসলমান। তাদের ব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক রোষ থাকায় সামরিক বাহিনী প্রভাবিত সরকার এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে সেখানে ক্ষয়ক্ষতি ও মানুষ বেশি মারা গিয়েছিল সিডর ও ফাইলিনের তুলনায়।
চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মকাণ্ড বন্ধ
নূরুল মোস্তফা কাজী চট্টগ্রাম ব্যুরো থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী ধেয়ে আসার খবরে গতকাল সকাল থেকেই নড়েচড়ে বসেছিল চট্টগ্রামের বন্দর, বিমানবন্দর, সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ক্ষতি এড়াতে সকাল থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের পণ্য ওঠানামা। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সতর্কাবস্থায় থাকলেও ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ হয়নি। নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায় প্রায় ৪০০ লাইটার জাহাজসহ কয়েক শ’ ফিশিং ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকা।
এ দিকে বঙ্গোপসাগর উত্তাল। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে নগরীর বিস্তীর্ণ উপকূলজুড়ে। কিন্তু বাতাসের তীব্রতা ছিল না বললেই চলে। বাতাসে আর্দ্রতার প্রভাব ছিল তীব্র। এভাবেই ছিল দিনভর চট্টগ্রামের আবহওয়ার চিত্র।
ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুতি : চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে অ্যালার্ট-থ্রি তথা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা ধাপ জারি করা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ মূল জেটিতে নোঙররত সব জাহাজ বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দিয়েছে। সকাল ১০টা থেকে জেটি জাহাজশূন্য করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দুপুরের মধ্যে এনসিটি, সিসিটিসহ জেনারেল কার্গো বার্থের জাহাজগুলো একে একে সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। শুধু ১ নম্বর জেটিতে একটি সিমেন্ট ক্লিংকার বোঝাই জাহাজ অবস্থান করছিল। সেটিকেও বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
ফণী সামাল দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কয়েক দফা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামা বন্ধ, মেডিক্যাল টিম গঠন, নদীতে থাকা জাহাজগুলো নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক নয়া দিগন্তকে জানান, আবহাওয়া অধিদফতর ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলার পর চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে।
বন্দরে নতুন করে কোনো লরি, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তবে যেগুলো আগে ঢুকেছে সেগুলোকে পণ্য সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারোয়ার-ই জামান জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবেলা প্লান অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি। চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড়ের প্রান্তিক (পেরিফেরিয়াল) আঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে আজ শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ। আজ সকালে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি দেখে পদক্ষেপ নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি আজ রাত ৮টা পর্যন্ত ফ্লাইট অপারেশনে কোনো সমস্যা হবে না।
চসিকের কন্ট্রোলরুম চালু : ফণী চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার আশঙ্কায় নগরবাসীর যেকোনো সেবা দানের জন্য সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গতকাল সকালে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্দেশে এ কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়। ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত যে কোনো তথ্য ও সহযোগিতার প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগের জন্য চসিকের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। চসিকের কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্ব^রগুলো হলোÑ ০৩১-৬৩০৭৩৯, ০৩১-৬৩৩৪৬৯ এবং ০১৮১৯-৩৪৯০৯৩। উপকূলবাসীকে নিরাপদে সরিয়ে আনা শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি : ফণীর সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। পাঁচ লাখ লোক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ৪৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্র এবং দুই হাজার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে ২৮৪টি। স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে ছয় হাজার ৬৬০ জন। ত্রাণসামগ্রী হিসেবে মজুদ রাখা হয়েছে জি আরের আওতায় আট লাখ ৮৪ হাজার টাকা, ২২৭ টন চাল, ৭০০ বান্ডিল ঢেউটিন এবং সাড়ে ছয় হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার। ৫০ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি, ১৪০০ পিস হাইজিন কিডস প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং আরো এক লাখ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। রেড ক্রিসেন্টের ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও বিএনসিসি এবং রোবার স্কাউটদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কুমিরা গুপ্তছড়া ঘাট থেকে সন্দ্বীপ ও হাতিয়া রুটে নৌচলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
আতঙ্কিত মানুষ : চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করেন ৪০ লাখের অধিক মানুষ। তাদের জন্য সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে মাত্র এক হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে আবার ১০ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্যোগকালীন এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারেন ৭-৮ লাখ লোক। বাকি ৩২ লাখ লোকের ঠাঁই হয় না আশ্রয়কেন্দ্রে। অনেকেরই দূরের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া হয় না যানবাহনের অভাবে। তার ওপর অধিকাংশ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে মিশে গেছে সমুদ্রের সাথে। ফলে নিজেদের ঘরবাড়ি, চিংড়ি ঘেরসহ সহায় সম্পদ হারানোর ভয়ে তটস্থ থাকেন উপকূলীয় অঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষগুলো।
পটুয়াখালীর উপকূলে ৭ নম্বর বিপদসঙ্কেত
রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, ফণী যতই বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে পটুয়াখালীর সাগর উপকূলীয় রাঙ্গাবালী উপজেলা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর ততই উত্তাল হয়ে উঠছে। গতকাল আবহাওয়া অধিদফতর বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন সমুদ্র এড়িয়ায় ৭নং বিপদসঙ্কেত জারি করে লাল নিশান টাঙিয়ে দিয়েছে। রাঙ্গাবালী উপজেলার সমুদ্র এলাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) পক্ষ থেকে মাইকিং করে সতর্ক বার্তা প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়াও রাঙ্গাবালী উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলো থেকে গবাদিপশু ও মালামাল সরিয়ে আনার জন্য উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। গত বুধবার দুপুর থেকে সাগরে যাওয়া সব মাছ ধরার ট্রলার ও ছোট ছোট নৌযান তীরে আসতে শুরু করেছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাশফাকুর রহমান জানান, ফণীর আঘাত থেকে রাঙ্গাবালী উপজেলাবাসীকে রক্ষা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোতে ৫৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও পাঁচটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে এবং কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাঠে কাজ করার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কৃষকের মুখে হতাশার কালো ছায়া
শেখ জালাল উদ্দিন যশোর অফিস থেকে জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বাম্পার ফলন হয়েছে বোরো ধানের। জমিতে বাতাসে দুলছে সোনালি ফসল। কৃষকের বুক ভরা স্বপ্ন। তারপরও আনন্দের মধ্যে উদ্বিগ্নতা চাষিদের। ঝড় ফণী আসছে এ সংবাদে বোরোর বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। তাদের মুখে হতাশার কালো ছায়া।
যশোরের মাঠে দোল খাচ্ছে বোরো ধান। বোরো ধানের দোলানিতে যেন কৃষকের স্বপ্নও দোলছে। পাকা ও আধপাকা সোনালি ফসল বোরো ধান মন কাড়ছে সবার।
চাষিরা এখন বোরো ধান নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলছে ধান কাটা ও মাড়াই। এমন দৃশ্যে চাষিরা আনন্দিত। এমন স্বপ্ন প্রত্যাশায় উদ্বেলিত কৃষককুল। তবে গত কয়েকদিনের আবহাওয়ার সংবাদ তাদের করে তুলেছে অস্থির। এ অবস্থায় বেড়েছে শ্রমিকের চাহিদা ও দাম। কৃষকেরা জানান জমিতে ৭০-৭৫ শতাংশ ধান পেকে গেছে। বর্তমান আবহাওয়ায় ধান ঘরে তোলা নিয়ে তারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। এখন আকাশে মেঘের আভা আর ঝড়ো হাওয়া দেখলেই তাদের যত দুশ্চিন্তা। কারণ আসছে ঝড় ফণী। এর কবলে পড়লে তাদের স্বপ্নের সোনালি ফসল সহায় সম্বল হারিয়ে যাবে।
গতকাল সরেজমিন মনিরামপুর কেশবপুর শাহপুর, চাঁচড়া, মাহিদিয়া, ত্রিমোহনী গোপসেনাসহ কয়েকটি মাঠে গেলে চোখে পড়ে বোরো ধান কাটার দৃশ্য। ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে রাত দিন ব্যস্ত চাষিরা। কাটা বোরো ধান মেশিন দিয়ে মাড়াই করা হচ্ছে।