• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন

আজ রামু ট্রাজেডির ৭বছর

নিউজ রুম / ১২৩ ভিউ টাইম
আপডেট : রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ৭ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ (২৯ সেপ্টেম্বর)। ২০১২ আজকের এই দিনে ইতিহাসের বর্বর ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছিল ধর্মীয় সম্প্রীতির লীলাভূমি এই জনপদে। উত্তম বড়ুয়া নামের এক যুবকের ফেসবুকে কোরআন অবমাননার ছবি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে ওইদিন রাতে কক্সবাজারের রামুর প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনার পর শত বছরের সম্প্রদায়িক চেতনায় বড় ধরনের ফাটলের সৃষ্টি হয়।তবে বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে ইতোমধ্যে সেই চিড় ধরা ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আবারো জোড়া লেগেছে। হারানো সেই সব বৌদ্ধ স্থাপনা আবারো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে রামু ট্র্যাজেডির সাত বছর পূর্ণ হলে সুষ্ঠু বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশ রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ। মামলার চার্জশিট দাখিল নিয়ে রয়েছে চরম অসন্তোষ। বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাধারণ জনগণ বলছেন এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে চিহ্নিত অনেক মানুষ মামলার আসামি নন। এক্ষেত্রে তদন্তে ব্যাপক অনিয়মের কথা বলছেন তারা।

আদালত সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনার পর কক্সবাজারের ৪টি উপজেলায় ১৮টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আরও একটি মামলা করা হলেও তা পরে উঠিয়ে নেয়া হয়। পুলিশের দায়ের করা ১৮টি মামলা এখনো চলমান। চার্জশিট হলেও সাক্ষীদের অনীহার কারণে এখনো মামলাগুলো আলোর মুখ দেখছে না।

অপর দিকে পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে ২০৫ জনের মধ্যে ১ নম্বরে অভিযুক্ত করা হয় সে পোস্ট দাতা যুবক উত্তম বড়ুয়াকে।সাত বছরের মধ্যেও সেই উত্তম বড়ুয়ার আজও খোঁজ মিলেনি। তিনি কোথায় আছেন, তা কেউ জানে না। ঘটনার পর শিশুপুত্রসহ নিখোঁজ থাকলেও কয়েক মাস পর ফিরে এসে রামুতে বাস করছেন উত্তমের স্ত্রী রিতা বড়ুয়া। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে অভাব অনটনে দিন কাটছে তার।

তার স্ত্রী রিতা বড়ুয়া জানান, উত্তম বড়ুয়ার হদিস তার পরিবারের কেউ পাচ্ছে না। উত্তমের কারণে তাদের জীবনটাই এলোমেলো হয়ে গেছে।রিতা আরও বলেন, রামু ট্রাজেডির পর ক্ষতিগ্রস্তরা নানাভাবে সহযোগিতা পেলেও তার পরিবার নিগৃহীতই থেকেছে। সন্তান নিয়ে তার চরম কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।

রামুর বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ও কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সহকারী পরিচালক (আবাসিক) প্রজ্ঞানন্দ জানান, ঘটনার ৭ বছর পর বৌদ্ধরা নিরাপত্তায় রয়েছে। কিন্তু মামলার প্রক্রিয়াটি আরও যাচাই বাছাই জরুরি। এতে যে সব নিরীহ লোক হয়রানির শিকার হচ্ছে তাদের বাদ দিয়ে প্রকৃত দোষীদের আসামি করে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, বর্তমানে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ খুবই ভালো আছে। তাদের মধ্যে আবারো সেই শত বছর আগের সম্প্রীতি ফিরে এসেছে। যে ঘটনা ঘটেছে, তার ক্ষত এখন আর নেই। সবকিছু বদলে গেছে।তিনি আশা প্রকাশ করেন এ ঘটনার জড়িতদের সবার সঠিক বিচার হবে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কোরআন অবমাননার একটি ছবি পোস্টি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রামুতে সংঘটিত হয় ভয়াবহ সহিংসতা। রামুর বৌদ্ধমন্দির ও বেশকিছু বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া দুর্বৃত্তরা। এর পরের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর একই ঘটনা সংঘটিত হয় কক্সবাজারের সদর, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায়। এসব এলাকায়ও বৌদ্ধমন্দির ও বেশকিছু বসতি পুড়িয়ে দেয়া হয়।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ