পর্যটন শহর কক্সবাজারের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ একটি এলাকা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দাই সচ্ছল জীবনযাপন করে। কিন্তু এই কলাতলীর ‘ইয়াবা সম্রাট’ রাসেল ও তার বাহিনীর মাদক ব্যবসার ছোবল নিয়ে চরমভাবে উদ্বিগ্ন এখানকার বাসিন্দারা। ‘ইয়াবা সিন্ডিকেটে’র হোতা রাসেল এলাকায় ‘বড় ভাই’ নামে পরিচিত। রাসেলের ইয়াবার আস্তানাগুলোতে প্রকাশ্যেই চলে মাদক সেবন ও বিক্রি। অথচ পুলিশসহ প্রশাসন এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। আর ‘ইয়াবা সম্রাট’ রাসেল ও তার বাহিনীর মাদক ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ, জমি দখল, ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় এবং চাঁদাবাজিসহ সব অপরাধমূলক কাজের নেপথ্যে রয়েছেন তার আপন মামা জামাল ওরফে ইয়াবা জামাল।
একের পর এক অপরাধের পরও রাসেল ও তার বাহিনীর সদস্যদের পুলিশ গ্রেফতার না করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণ ক্ষুব্ধ। এলাকার যুবক, তরুণসহ নিজেদের সন্তানদের মাদকের ছোবল থেকে রক্ষায় দ্রুত রাসেল ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা না হয় যে, রাসেল পালিয়ে গেছে। এর আগেও তার নানা অপকর্মের খবর একাধিক জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকাতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। তারপরও স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার ইশারায় সে প্রতিবার রেহাই পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
স্থানীয়রা বলেন, রাসেল শুধু সন্ত্রাসীই নয়, সে মাদক সম্রাটও বটে। তার মাদক ব্যবসা এবং অপকর্মের প্রতিবাদে বক্তব্য দেয়ায় আমাদের অনেকের ওপরও হামলা করেছে। যার কোনো বিচার পাইনি থানা পুলিশের কাছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে প্রকাশ্যে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি ও সেবনের আসর বসায় রাসেল ও তার বাহিনীর সদস্যরা। রাসেল বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে তার মামা জামাল ওরফে ইয়াবা জামাল, দেলোয়ার, আমির হোসেন, রফিক ও শামসু। এর মধ্যে মাদক মামলায় আমির হোসেন কারাগারে আছে।
এছাড়া রাসেলের ঘনিষ্ঠ জামালকে ইয়াবাসহ একাধিকবার আটক করেছিল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু রাসেল তাকে ঘটনাস্থল থেকেই ছাড়িয়ে নেয়। জামাল এখনও বহাল তবিয়তে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। জমজম হ্যচারী সংলগ্ন জামালের বাড়িতে মাদক বিক্রি ও সেবন করা হয়। এছাড়া খরুলিয়ার সাদ্দাম ও তার ভাই ওসমান, ছিনতাইসহ একাধিক মামলার আসামি দেলোয়ারের সঙ্গে সখ্য রেখে চলেছে রাসেল।
কলাতীর সমাজ কমিটির নেতারা বলেন, রাসেলের মামা জামালের বাসায় সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল নিয়ে অসংখ্য অচেনা মুখ যাতায়াত করে। তারা ওখানে বসে মাদক সেবন করে। তাদের সন্দেহজনক চলাফেরায় গ্রামবাসীও বিব্রত। এ অবস্থার প্রতিকার দরকার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সবাই সবকিছু জানার পরও থানা-পুলিশ কখনও এসব আস্তানায় অভিযান চালায়নি। বিষয়টিকে রহস্যময় বলছেন তারা। অন্যদিকে রাসেল ও তার বাহিনীর সদস্যরা প্রকাশ্যেই বলে বেড়ায়, থানা-পুলিশ ও প্রশাসন তাদের খাতিরের জায়গা। আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না।
এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাসেল বাহিনী ছেড়ে আসা এক যুবক বলেন, কলাতলীর রাসেল ও তার বাহিনীর মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে আছেন তার মামা জামাল।
এলাকার সুধীমহল বলছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাসেলের বর্তমান সম্পত্তির অনুসন্ধান করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে পারে।
এলাকাবাসী বলছেন, সদর থানা পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকাই রাসেলকে আজকের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।