• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১১ পূর্বাহ্ন

ঋণ থেকে মুক্তি পেতে নিজের সন্তানকে ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি

নিউজ রুম / ১৩৮ ভিউ টাইম
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯

তিন মাস পর উদ্ধার করলো পুলিশ

(চট্টগ্রাম) : মাথার উপর ঋণের বোঝা। ঋণ পরিশোধের চাপের মাঝেই ৫২ হাজার টাকার লোভনীয় প্রস্তাব। তাই ঋণ থেকে মুক্তি পেতে নিজের বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে এই কটা টাকার জন্য নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দিয়ে জন্মদাতা পিতা সাজিয়েছেন ছেলে নিখোঁজের নাটক। কখনো সন্তানের জন্য নিজের বউকে পাঠিয়েছেন বৈদ্য বাড়িতে। সন্তানকে বিক্রি করেই ক্ষান্ত হননি পিতা, কখনো কখনো অভিনয়ের ছলে সন্তানের জন্য ফেলেছেন চোখের পানি। ওঝার তাবিজ দোয়ায় সন্তানের খোঁজ মেলে এই আশাতেই মা দৌঁড়ঝাঁপ করেছেন এখান থেকে ওখানে। এভাবেই কেটে গেছে টানা তিনমাস। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার সমাপ্তি ঘটে তিনমাস পর পুলিশ ছেলেটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে।

বুধবার দুপুরে রাউজান থানা কার্যালয়ে সাত বছরের শিশু সন্তান রাব্বিকে যখন তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তখন সেখানে আনন্দ-অশ্রুতে ছলছল করে উঠে মায়ের চোখ।

সিনেমার গল্পকে হার মানানো এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে তিনমাস পূর্বে। শিশু রাব্বীর নিকটাত্মীয় রহিম বিন হোসেন জানান, শিশু রাব্বির পিতা কুমিল্লা নিবাসী আহসান উল্ল্যাহ পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর চাক্তাই এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। রাব্বির নানার বাড়ি মহেশখালী শাপলাপুর মিঠাখালী গ্রামে। সেখান থেকে পেশায় দিনমজুর আহসান উল্লাহর পরিচয় ঘটে রাউজানের কচুখাইন এলাকার জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তির সাথে। পরিচয়ের সূত্র ধরে জাকির হোসেন তার বউয়ের বড় বোন বাচু আকতারের জন্য একটি ছেলে সন্তান কেনার আগ্রহ দেখালে টাকার লোভে পড়ে আহসান উল্ল্যাহ নিজ সন্তানকে ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এর মাঝে পরিবারে আহসান উল্ল্যাহ তার মেয়ে নিখোঁজের কল্পকাহিনী সাজান। বাচু আকতারের সংসারে চারটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।

টানা তিনমাস সন্তানের জন্য হণ্যে হয়ে এখানে সেখানে ছুটে বেরিয়েছেন তার মা নাছিমা আকতার। দিনে দৌঁড়ঝাপ শেষে রাতে অশ্রুচোখে নিদ্রাহীন চোখে তাকিয়ে থাকতেন কখন কোলে ফিরে আসবে বুকের মানিকধন। এভাবে তিনমাস অতিক্রম হওয়ার পর জাকির হোসেন রাব্বির মায়ের কাছে তার সন্তানের খবর জানিয়ে সন্তান ফেরত নিলে ৯০ হাজার টাকা দাবি করেন। হত-দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া নাসিমা আকতার উপায়ান্তর না দেখে অবশেষে পুলিশের শরণাপন্ন হয়ে নিজে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ কেফায়েত উল্লাহর কার্যালয়ে হয়ে ঘটনার আদোপ্যন্ত খুলে বললে ওসি বিষয়টি দেখার জন্য নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ জাভেদ মিয়াকে নির্দেশ দেন। তিনি ১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ফোর্স নিয়ে রাতে নগরীর দিদার মার্কেট এলাকা থেকে শিশুকে উদ্ধার করে রাউজান থানা কার্যালয়ে নাছিমা আকতারের হাতে তার সন্তানকে তুলে দেন। এ সময় পিতা আহসান উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। মায়ের কাছে সন্তান ফিরিয়ে দেওয়ার সময় থানা চত্বরে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

টাকার জন্য সন্তান বিক্রির বিষয়ে পিতা আহসান উল্ল্যাহ বলেন, ঋণের দায়ে তিনি এই কাজটি করেছেন।

রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ কেফায়েত উল্লাহ বলেন, শিশু রাব্বিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ