• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:০২ পূর্বাহ্ন

বেকারত্ব দূর করতে পাঠাও বাইক চালক দু’বারে উপজেলা চেয়ারম্যান রাজু

নিউজ রুম / ১৮৯ ভিউ টাইম
আপডেট : শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৯

 

নিজস্ব প্রতিদেক

কক্সবাজার: বেকারত্ব দূর করা, যে কোনও পেশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং সমাজ ও দেশের উন্নয়নে নতুন প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবারে মোটর সাইকেল চালাচ্ছেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুইবার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান যদি ভাড়ায়চালিত মোটর সাইকেল চালিয়ে উপার্জনের পথ বেছে নিতে পারে, তাহলে আমি কেন বসে থাকবো’। মূলত যুব সমাজের মাঝে এ রকম ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করতেই বাইক চালানোর সিদ্ধান্ত নেই। পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার বিষয়টি তো আছেই। তবে কেবলমাত্র জীবিকা নির্বাহের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেইনি।

সম্প্রতি ‘চট্টগ্রাম শহরে অ্যাপসভিত্তিক মোটর সাইকেল সার্ভিস উবার, পাঠাও-এর মোটর বাইক চালাচ্ছেন পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু’ শিরোনামে তার দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়ায় তিনি জীবনের আরও অনেক বিষয় তুলে ধরেন তিনি।

শাফায়াত আজিজ রাজু বলেন, কাজ-কর্মহীন দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকলে মন মানসিকতা ভাল থাকে না। তাই আপাতত মোটর সাইকেল চালানোকে পেশা হিসেবে নিয়েছি। তবে খারাপ লাগছে না। বিষয়টি আমি ভালোই উপভোগ করছি। আমি চাই, কাজের প্রতি যুব সমাজ আমাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হোক।

রাজু বলেন, কখনো উবার কখনো পাঠাও-যেখান থেকেই অনুরোধ আসে সুযোগ থাকলে গ্রহণ করি। তাদের পৌঁছে দিই চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন গন্তব্যে। হেলমেট পরার কারণে অনেকে চিনতে পারেন না। কেউ চিনে ফেললে একটু বিষ্মিত হয়। তবে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর বিষয়টি বেশি জানাজানি হয়ে যায়।

জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান এবং প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়াত আজিজ রাজু। পরপর দুইবার তিনি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবা ছিলেন পেকুয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল করিম চৌধুরী। বর্তমানে রাজু পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় তিনি নির্বাচন করেননি। তিনি গত চার মাস ধরে চট্টগ্রাম শহরে ভাড়া বাসায় থাকছেন।

ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘পাঠাও, উবার, সহজ, ওভাই-প্রতিটি অ্যাপসভিত্তিক শেয়ারিং রাইড। যে বাইক বা কারটি এতদিন আপনাদের কাছে সৌখিন যানবাহন হিসাবে ছিল, কোম্পানির কারণে সেটি এখন আপনার রুটি রুজির অংশ। স্বাধীন পেশা, প্রয়োজনের তাগিদে উপার্জনের মাধ্যম। নচেৎ সৌখিনতার অংশ’।

‘শিক্ষার হার যেমন বাড়ছে, তেমনি উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। অংকের সংখ্যা হেরফের করে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি উচ্চসূচকে দেখানো যায় কিন্তু দেশের বেকারত্বের হারকে কাস্টমাইজ করা যায় না’।

রাজু ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরও লিখেন, ‘এই সময়ে অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং যুব সমাজের কাছে খুবই জনপ্রিয় মাধ্যম। বাইকে একটু খাটুনি দিলে দিনে হাজার টাকা আয় করা যায়, যেখানে পুঁজি এক লক্ষ হলেই চলে। সঙ্গে বৈধ কাগজপত্র। মাসে ত্রিশ হাজার টাকার একটি চাকরির জন্য আমরা কত কিছুইনা করি। জমি-জমা বিক্রি করে নেতার পিছু পিছু ২/৪/৫/১০/২০ লাখ টাকা দিয়েও চাকরি হয়ে যায় সোনার হরিণের মত অধরা। অন্যদিকে অনেকে এ প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হয়ে টাকা ফেরত না পেয়ে আত্মহত্যা, মাদকাসক্ত, দেশান্তরী থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই জড়িয়ে পড়ছে’।

তিনি সবার কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অন্তত যতদিন পর্যন্ত আপনার যোগ্যতানুযায়ী কিছু করতে পারছেন না, ততদিন পর্যন্ত এই পেশা চালিয়ে যান। কথায় আছে, অভাব দরজা দিয়ে ঢুকলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। সুতরাং ঘরের মানুষের কাছে বোঝা এবং বাইরের মানুষের কাছে মজা না হতে চাইলে এখনই সিদ্ধান্ত নিন আপনি কি করবেন। মনে রাখবেন-ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তোলে মহাসাগর। তাই বড় কিছু পেতে চাইলে ছোট দিয়েই শুরু করুন’।

আসলেই কি আপনি নিয়মিত অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল চালাবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত দশ বছর চেয়ারম্যান থাকাকালে আমি কোনও ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য করিনি। নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে নিরলসভাবে জনগণের সেবা করার চেষ্টা করেছি। পারিবারিক সহায়-সম্পত্তি যা ছিল, আর সরকারের কাছ থেকে পাওয়া সম্মানী ভাতা নিয়েই কোন রকম চলে গেছি।

রাজু বলেন, বর্তমানে তো আমি চেয়ারম্যান নই। সম্মানী ভাতা এখন পাই না। গত চারমাস ধরে ঘরে বসেই দিন পার করেছি, বেকার। চকরিয়ার মগনামায় একটি ঠিকাদারী কাজে আমার ১৫-২০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বর্তমানে আমার পুঁজি শূন্য।

‘বাবা মারা যাওয়ার পর পারিবারিক সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ওই সম্পত্তি থেকে বছরে এক লাখ টাকা  পাই। হিসাব করলে মাসে আট-নয় হাজার টাকা পড়ে। কিন্তু ওই টাকায় তো আর একটি পরিবার চলতে পারে না’।

সাবেক এই জনপ্রতিনিধি বলেন, বর্তমানে আমি রাজনীতিতে সক্রিয় নই, আবার চেয়ারম্যানও নাই। এভাবে তো আর চলা যায় না। তাছাড়া দীর্ঘদিন বসে থাকলে মন মানসিকতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই মোটর সাইকেল একটা আছে যখন, চিন্তা করলাম উবার রেজিস্ট্রেশনটা করে রাইড শেয়ার করি। অন্তত আয়ের একটা পথ বের হবে। এখন এদিক থেকে কিছু আয় হচ্ছে।

রাজুর ধারণা, তাঁকে দেখে যুব সমাজ উদ্বুদ্ধ হবে। যেকোনও পেশা নিয়ে যুব সমাজের মাঝে একটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ আমার এই কাজকে ভালোভাবেই গ্রহণ করবেন।

আলাপচারিতায় নিজের ব্যক্তিগত সমস্যার কথাও তুলে ধরেন সাবেক এই জনপ্রতিনিধি। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন একটা দায়িত্ব পালন করার পর হঠাৎ দায়িত্ব ছাড়া হলে পরবর্তীতে খুব সমস্যা পোহাতে হয়। নিজের স্ট্যাটাসের কারণে তখন সবাকিছু করাও যায় না। আর আমাদের মত লোকজন পড়ে যায় বেশি বেকায়দায়। এ দুঃখ কাকে বুঝাই? চিন্তা করলাম, সমাজের গতানুগতিক নিয়ম ভেঙে কিছু একটা করি। অবশেষে মোটর সাইকেলটাকে করে নিলাম রাজপথের সঙ্গী।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ