• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন

‘ভারইত্যারা মোগো মধ্যে ঢুইক্কা মাছ ধইরা লইয়া যায়’

নিউজ রুম / ১০৮ ভিউ টাইম
আপডেট : রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৯

    

  
মাছ ধরার জাল বুনছেন জেলেরা

‘সরকার ২২ দিনের অবরোধ (নিষেধাজ্ঞা) দেছে, হ্যা মোরা মানি। অবরোধের লইগ্গা (জন্য) গাঙ্গে না যাইয়া বইয়া রইছি। কিন্তু, ভারইত্যারা (ভারতীয়রা) এই অবরোধের সময় মোগো মধ্যে ঢুইক্কা মাছ ধইরা লইয়া যায়।’ বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে চট্টগ্রামের জেলে আউয়াল জোমাদ্দার বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এই আক্ষেপ করেন।

জেলেদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার সময়ে ভারতের জেলেরা বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকার তো করেই, নিষেধাজ্ঞা শেষে দাপিয়ে বেড়ায়। আর বাংলাদেশের জেলেরা মাছ শিকারে গেলে ভারতের ট্রলারের জেলেসহ সাগরে মাছ ধরতে আসা অন্য দেশের ট্রলারের জেলেরাও এদেশের জেলেদের মাছ ধরতে দেয় না। অনেক সময় ট্রলার ভেঙেও দেয়। এছাড়া ট্রলারের ইঞ্জিন, সার্চ লাইট ও গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ নিয়ে যায় ভারতীয় ট্রলারের জেলেরা।

পাথরঘাটায় পিরোজপুরের জেলে গনি মিয়া বলেন, ‘ভারতীয় জেলেরা আমাদের জন্য একটি আতঙ্কের নাম। বাংলাদেশের সরকার বাহাদুরের কাছে অনুরোধ থাকবে, এই আতঙ্কের হাত থেকে বাংলাদেশি জেলেদের রক্ষা করুন।’

পাথরঘাটার জেলে আলম মোল্লা বলেন, ‘সরকারের নিষেধাজ্ঞা মোরা মানি। কিন্তু, ভারতীয় জেলেরা এখন আমাদের মধ্যে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, এটা ফেরাবে কে? বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের (২০ মে থেকে ২৩ জুলা) নিষেধাজ্ঞার সময় দেখছি কতগুলো ভারতীয় জেলে আটক করে আবার ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু, আমরা ভুল করেও ভারতের সীমানার মধ্যে প্রবেশ করলে আমাদের ওপর করা হয় অমানবিক নির্যাতন।’


নিষেধাজ্ঞা থাকায় পড়ে রয়েছে জেলেদের নৌকা

বাংলাদেশ ফিশিং বোট মালিক ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘এখন আমাদের দেশে নিষেধাজ্ঞা চলছে। কিন্তু, ভারতীয় জেলেরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ করতে হলে হিরণ পয়েন্টসহ গভীর সমুদ্রে নৌবাহিনীর টহল বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে ভারত বাংলাদেশ যৌথভাবে সমন্বয় করে একই সময় নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারলে এই নিষেধাজ্ঞার সুফল বাংলাদেশের জেলেরা ভোগ করতে পারবেন।’

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গভীর সমুদ্রে কারা মাছ শিকার করছে, সেটি আমাদের পক্ষে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। জেলেরাও যে অভিযোগগুলো করছে সবটাই অনুমান নির্ভর। তারপরও জেলেদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়গুলো আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ইতোমধ্যে তারা এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন। নিষেধাজ্ঞার সময় পাশের দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করার বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।’

বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুরসহ উপকূলীয় জেলেদের জীবিকা চলে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকার করে।

ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ভারতের সঙ্গে সমন্বয় করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বরগুনাসহ উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। তাদের অভিযোগ, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলেরা ইলিশ শিকার থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু,ভারতীয় জেলেরা এই সুযোগে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে নির্বিঘ্নে ইলিশ ধরেন। সেজন্য ভারতের সঙ্গে সমন্বয় করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি তাদের।  


জাল বুনছেন এক জেলে

জেলেরা জানান, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন (৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর), বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন (২০ মে থেকে ২৩ জুলাই) সব ধরনের মাছ ধরা ও উপকূলের নদ-নদীতে আট মাস (নভেম্বর থেকে জুন) জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে। এই তিন সময়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলেরা মাছ শিকার থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু, এসময় ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জেলেরা বাংলাদেশের সীমানাসহ বঙ্গোপসাগরজুড়ে মাছ শিকারে মেতে ওঠেন।

সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ