কক্সবাজার শহরে বসবাস করছে একটি ‘ভিআইপি সিন্ডিকেট’ যারা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শপিংমহলে মোবাইল চুরি করে বেড়ায়। সিন্ডিকেটের প্রতিটি সদস্যের বাসা কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন জায়গায় হলেও তারা মোবাইল চুরি করে কক্সবাজার জেলার বাইরে। নির্দিষ্ট অভিযোগ বা সঠিক নজরদারী না থাকায় এই সিন্ডিকেটটি আইনের আওতায়ও আসছে না।
বরাবরের মতো তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দেশের বিভিন্ন স্থানে শপিং মল থেকে মোবাইল চুরির ভিডিওতে সিন্ডিকেটের সদস্যদের সনাক্ত করা হয়েছে। ওই সিন্ডিকেটে প্রায় ৮ থেকে ১০ জন সদস্য রয়েছে। তাদের বাড়ি কক্সবাজার শহরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোবাইল চুরি সিন্ডিকেটের সদস্যরা কক্সবাজারের বাইরে কোন একটি মোবাইল মার্কেটে হানা দেয়। সংখ্যায় তারা সবসময় ৮ থেকে ১০ জন থাকে। মোবাইল মার্কেটে তারা প্রথমে একটি দোকানকে টার্গেট করে । এরপর মোবাইল কেনার কথা বলে প্রথমে দুইজন সদস্য একটি দোকানে ঢুকে। দোকানদার তাদের বিভিন্ন মডেলের মোবাইল দেখাতে থাকে। ওই সময়ে বাকি কয়েকজন সদস্য ক্রেতা সেজে দোকানের সামনে ঘুরাঘুরি করতে থাকে। আর কয়েকজন একবার দোকানে ঢুকে আবার বের হয়। মানে একটি দোকানকে লক্ষ্য করে ৮ থেকে ১০ জন চোর দোকানদারকে বিভিন্নভাবে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে। যাকে অন্য কোনো কাস্টমার ওই দোকানে ঢুকতে না পারে। দোকানের সামনে বা ভিতরে চোর সিন্ডিকেটে সদস্যরা একে আরেকজনের অপরিচিত ভাব দেখায়। ওই সময় যদি দোকানদার কোন কারণে মোবাইল বা অন্য কোনো মালামাল দেখাতে ব্যস্ত থাকে, ঠিক তখনিই কৌশলে একটি মোবাইল নিয়ে একজন সটকে পড়ে। এরপর মোবাইল পছন্দ হয়নি বা দাম বেশি কিংবা কোন অজুহাত দিয়ে বাকি সদস্যরা আস্তে আস্তে ওই মার্কেট ত্যাগ করে। পরে দোকানদার যদি মোবাইল খোঁজে না পেয়ে সিসিটিভি ক্যামরা চেক করে। এমন কিছু মোবাইল চুরির ভিডিও ভাইরাল হয়। বেশ কয়েকটি চুরির ভিডিওতে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা সনাক্ত হয়।
ভিডিও চিত্রে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা হলো; কক্সবাজার বাস টার্মিনালের পশ্চিম পাশে লারপাড়া এলাকার মৃত সোনা আলীর ছেলে ইমরান, শহরের ঘোনার পাড়া এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ইমন, আব্দুল্লাহ, আব্দু সোবাহান, বাংলা বাজার এলাকার আমান উল্লাহর ছেলে জাহাঙ্গীর, কলাতলী হাইওয়ে রেষ্ট হাউজের সামনে মৃত আব্দুল গফ্ফরের ছেলে আব্দুর রহিম, খুরুশকুলের বদিউল আলমের ছেলে সাদ্দাম, কলাতলী চন্দ্রিমার মাঠ এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে মো. নেজাম উদ্দিন ও টেকনাফ হ্নীলা জাদিরাম এলাকার মো. সোনা আলীর ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক। তবে একটি অস্ত্র মামলায় সম্প্রতি কারাগারে যান নেজাম উদ্দিন ও রফিকুল ইসলাম। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ না থাকলেও অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা মোবাইল চুরি করে কক্সবাজার জেলার বাইরে। মোবাইল চুরির ভিডিওতে যদি তাদের দেখাও যায় তাহলে অন্য জেলার লোকজন তাদের পরিচয় সর্ম্পকে জানবে না। তাদের ঠিকানাও জানার কথা নয়। ওই কারণে তারা আইনের আওতায় আসছে না। এমনকি ওই চোর সিন্ডিকেটের প্রতিজন সদস্যদের দেখলে বুঝা যাবে না তারা চোর নাকি কোন ভিআইপি কাস্টমার।
ভিআইপি স্টাইলে তাদের চলাফেরা। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরো জানা গেছে, নিজ এলাকায় তারা মাসে দুই থেকে তিন দিন অবস্থান করে। মাসের বেশির ভাগ সময় তারা নিজ এলাকার বাইরে থাকে। যখন এলাকায় আসে তখন তাদের হাতে নামি-দামি মোবাইল সেট দেখা যায়। এলাকায় তাদের দৃশ্যমান কোন কাজও নেই। কোথাও চাকরিও করে না তারা। এমনকি তারা চুরি করা মোবাইল সেট গুলো নিজ এলাকায় বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রিও করে। এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বেশি কয়েকটি ভিডিওতে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে মোবাইল চুরি করছে এটা পরিস্কার। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। হয়ত কক্সবাজারের বাইরে মোবাইল চুরি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দোকানদাররা তাদের পরিচয়ের বিষয়ে অবগত নন। নিজ জেলার বাইরে মোবাইল চুরি এটি চোরদের একটি কৌশল। যাতে সহজে আইনের আওতায় না পড়ে। তারপরও এটি একটি বড় অপরাধ। যে কোনো ভাবে তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে। ইতিমধ্যে প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কক্সবাজার ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া বলেন, ওই ভিআইপি চোর সিন্ডিকেটটি খুব কৌশলী। তারা ব্যবহৃরিত মোবাইল চুরি করে না। তারা জেলার বাইরে বড় বড় শপিং মহলে গিয়ে কাস্টমার সেজে নতুন মোবাইল চুরি করে । এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা নজরদারীতে রয়েছে।
সূত্রঃ দৈনিক পূর্বকোণ।