• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন

একটি ব্রিজের অভাবে ১০ হাজার মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ

নিউজ রুম / ১১৬ ভিউ টাইম
আপডেট : বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

শাহীন মাহমুদ রাসেল

রামু উপজেলার মিঠাছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ মিঠাছড়ি, উমখালী, চরপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার কয়েকটি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাট এবং স্থানীয় বাঁকখালী নদীর উপর ব্রিজের অভাবে অন্তত ৯/১০ হাজার গ্রামবাসী চরম বিড়ম্বনার মধ্যে রয়েছেন। স্থানীয় জনগণ শুষ্ক মৌসুমে সাঁকো এবং বর্ষায় যাতায়াতের বাহন হিসাবে একমাত্র নৌকা ব্যবহার করতে হয়।

নদী পারাপারে কোনো ব্রিজ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁকখালী নদী পারাপার হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। এ কারণে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিশু, বয়স্কসহ স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রীদের। নৌকার মাধ্যমে নদী পার হতে গিয়ে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। তাদের অভিযোগ স্বাধীনতার পর থেকে অনেক জনপ্রতিনিধি বাঁকখালী নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। বাস্তবে এখনো ব্রিজ নির্মাণ করা হয় নাই।

পার্শ্ববর্তী কলঘর হয়ে রাজারকুলের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঁকখালী নদীর ওপর নদী পারাপারের জন্য নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে যা মিঠাছড়ি ইউনিয়নের মানুষের কোন উপকারে আসছেনা। ওই ব্রিজ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে মিঠাছড়ি বাজার। ওই বাজারের মধ্য দিয়ে বাঁকখালী নদীতে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজনের।

এছাড়াও নদীর উত্তরপারে সদর ও রামু উপজেলায় শতাধিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ স্থানীয় হাট-বাজার থাকায় নদীর দক্ষিণ পারের শিক্ষার্থী ও লোকজনের একমাত্র ভরসা হল সাঁকো ও নৌকার মাধ্যমে নদী পার হওয়া। এইভাবে নদী পার হতে তাদের অনেক সময় লেগে যায়। অন্যদিকে কলঘর বাজারের ব্রিজ ঘুরে যাতায়াত করতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে। এ কারণেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকার মাধ্যমেই নদী পার হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী সহস্রাধিক শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের। এ পরিস্থিতিতে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগী স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।

সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর এপার থেকে অন্তত ১৫ জন যাত্রী ওপারের যাওয়ার জন্য নৌকায় চেপে বসেছে। এর মধ্যে শিশুসহ ১০ জন ছাত্রীও রয়েছে। এভাবেই প্রতিনিয়ত নদী পার হয়ে আসছে এ গ্রামের লোকজন।

রামু কলেজের ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মোসাম্মৎ মিলি খানম বলেন, এখানে নৌকার মাধ্যমে নদী পার হতে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা হয়। নৌকায় উঠতে গিয়ে অনেক সময় আমরা পড়ে গিয়ে আহত হই এবং সময়মতো নৌকা না পেলে আমাদের নির্ধারিত সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছি না। যে কারণে আমাদের লেখাপড়ায় অনেক সমস্যা হয়। তাই আমাদের এখানে নদী পারাপারে জন্য একটি ব্রিজের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

নদীর ওপারে রয়েছে খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, তালিমুল কোরআন মাদ্রাসা, রামু কলেজ ও খরুলিয়া বাজার অবস্থিত। তাই দক্ষিণপার হতে অন্তত ১ হাজার থেকে ১২শ’ শিক্ষার্থীকে নদী পার হয়ে উত্তর পারে আসতে হয়।

অন্যদিকে উত্তরপারে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খরুলিয়া বাজার অবস্থিত হওয়ায় আমাদের প্রতিদিনই ওপারে যেতে হয়। লিংকরোড় এবং কলঘরে অবস্থিত ব্রিজ ঘুরে যাতায়াতে আমাদের অনেক সময় লাগে এজন্য আমরা এই নৌকার মাধ্যমেই নদী পার হয়ে থাকি। ভাটির সময় নৌকা কিনারায় না আসাসহ ঝড়-বৃষ্টির সময় নৌকায় উঠতে ও নামতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। এত সব সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সাঁকো এবং নৌকার মাধ্যমে নদী পার হই।

এছাড়াও ব্যবসায়ীদের পেশার কারণেই তাদের প্রতিদিন এপার থেকে ওপারে যেতে হয়। নদী পার হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। তাই এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে উপকৃত হবে এ গ্রামের স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ হাজারো লোকজন। তাই আমরা এখানে একটি ব্রিজে নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

মিঠাছড়ি গ্রামের ব্যবসায়ী সাইদ মোঃ রোনাদ জানান, প্রতি বছর পারাপার হতে গিয়ে এই নদীতে মানুষের মৃত্যু হয়। গত বছর নদী পার হয়ে বাজারে যাওয়ার সময় আমার গ্রামের একসাথে দুজনের মৃত্যু হয়। এর পর থেকে অনেকে তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেয়। তিনি আরও জানান, গ্রামের মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে আমরা স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের কাছে ব্রিজের বিষয়ে কয়েকবার গিয়েছিলাম।

মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুচ ভুট্টু বলেন, জনসাধারণ ও ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের কষ্ট লাঘবে ব্রিজটি নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে তালিকা দেয়া হয়েছে।

এবিষয়ে সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, ইতিমধ্যে কলঘর-রাজারকুলে একটি ব্রীজের কাজ শেষ করেছি। পরবর্তীতে বরাদ্দ পেলে মিঠাছড়িতে অচিরেই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ