• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন

বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন: দিল্লি-কলকাতায় বিক্ষোভ চলছে, ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনের চেষ্টা

নিউজ রুম / ৯৩ ভিউ টাইম
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

কলকাতায় মিছিলের একাংশ

ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে।

রাজধানী দিল্লিতে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দিলেও কলকাতায় বিশাল মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, প্রাণ থাকতে তিনি পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হতে দেবেন না।

দিল্লি থেকে বিবিসি সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষ জানান, বিক্ষোভকারীরা দিল্লির মান্ডি হাউস এলাকায় সমবেত হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

স্বরাজ ইন্ডিয়া দলের নেতা যোগেন্দ্র যাদবসহ বিক্ষোভকারীরা অনেকেই ১৪৪ ধারা ভেঙে সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

জেএনইউ, জামিয়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও তাতে যোগ দেন।

এর আগে ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং এনআরসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য মান্ডি হাউস এলাকায় সমবেত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলো বিক্ষোভকারীরা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখান থেকে মিছিলসহ তাদের যন্তর মন্তর এলাকায় যাওয়ার কথা ছিলো। এই এলাকাটি প্রতিবাদ বিক্ষোভ আয়োজনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে সুপরিচিত।

এই আইনটির বিরুদ্ধে গত কয়েকদিন ধরেই সারা দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে, যাতে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হচ্ছে বলে বলা হচ্ছে।

মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, প্রাণ থাকতে তিনি পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হতে দেবেন না।

তবে এর আগেই পুলিশ মান্ডি হাউস এলাকায় সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে।

তারপরেও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা দুপুরের মধ্যেই ওই এলাকায় সমবেত হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পুলিশের বাধার মুখে সেখানে সমবেত হতে না পারলেও দিল্লির নানা জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে কলকাতা থেকে বিবিসির অমিতাভ ভট্টশালী জানান, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে আজও সেখানে বিশাল মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে।

মূলত গত এক সপ্তাহ ধরে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় নাগরিকত্ব আইন আর এনআরসির বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ মিছিল হচ্ছে সে ধরনেরই সমাবেশ ছিল এটি।

আজ মিছিলে সবার মুখে একটাই শ্লোগান ছিলো- “এনআরসি হবে না, সিএবি হবে না।”

আবার বিজেপি-বিরোধী শ্লোগানও শোনা গেছে হাজার হাজার মানুষের এই মিছিলে যার সামনে ছিলেন মমতা ব্যানার্জি নিজেই।

এ মিছিলে নারী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের অংশগ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মতো।

মিছিলটি যখন এগিয়ে যাচ্ছিলো তখন সড়কের দু’পাশেও ছিলো অসংখ্য মানুষ।

এরকমই একজন, শেখ রাজা।

তার কথায়, “এন আর সি আর সি এ বি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যা করছে সারা দেশে একটা অশান্তি শুরু করেছে। কিন্তু এই ভদ্রমহিলা [রাস্তার পাশে মমতা ব্যানার্জীর ছবি সম্বলিত একটা ব্যানারের দিকে দেখিয়ে] প্রথম আওয়াজ তুলেছেন এন আর সি আর সি এ বি-র বিরুদ্ধে। তার পরে বাকিরা কথা বলতে শুরু করেছে। আমার ভরসা আছে ইনি যতদিন আছেন, ততদিন মোদিজী কিছু করতে পারবেন না।”

মিছিলে যোগ দেওয়া আরেক নারী রাজদা জাভেদ বলছিলেন, আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা ভারতীয়, আমরা বাঙালী। এরমধ্যে কেন হিন্দু-মুসলমান আনা হচ্ছে!”

বিজেপিকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, “একসময়ে বলা হল আধার কার্ড না হলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে না। তার আগে হয়েছে প্যান কার্ড [আয়কর দাতাদের সচিত্র পরিচয়পত্র], আরও কত কার্ড বানালে। আর এখন তোমরা বলছ আধার কার্ড থাকলেই নাগরিক হওয়া যাবে না! তাহলে কী বিজেপির মাদুলি পরলে নাগরিক হওয়া যাবে? বিজেপি-র মাদুলি তো বিষ মাদুলি – যে গলায় পড়েছে, সে গোল্লায় গেছে।”

মিছিলে হাজির ছিলেন বাউল, ঢাকি, কাঁসি, খোলের দল, আর ধামসা-মাদল নিয়ে চিরাচরিত পোষাকে সেজে আসা আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারী পুরুষরা।

মিছিলে হাঁটতে হাঁটতেই কথা হচ্ছিল পুষ্পালি সিনহার সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, “ভারতের মতো একটা মহান দেশে হিন্দু,মুসলমান, বৌদ্ধ, শিখ, খৃষ্টান সকলেই যাতে সমানভাবে সুখ-দু:খ, আনন্দ, উৎসব একইভাবে ভাগ করে নিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছেন আমাদের মহান দেশনেতারা। এখন বিজেপির মতো একটা সাম্প্রদায়িক দল এসে ঠিক করে দেবে যে কারা এদেশে থাকবে? এটা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়!”


নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে আসছে বাংলাভাষী মুসলিম সংগঠনগুলোও

মিছিল শেষে দেয়া ভাষণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, “যতক্ষণ আমার প্রাণ আছে ততক্ষণ পশ্চিম বাংলায় এনআরসি বা সিএএ করতে দিবো না।”

এর আগে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নানা জায়গায় সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে।

হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর চব্বিশ পরগণা এবং মালদাসহ বিভিন্ন জেলায় রেল আর সড়ক অবরোধ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। হাওড়ার সাঁকরাইলে এবং মুর্শিদাবাদের একাধিক রেল স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।

হাওড়ায় অন্তত পনেরোটি সরকারি ও বেসরকারি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। বেলডাঙায় দমকলের একটি গাড়িতেও আগুন দেয়া হয়।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ