• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন

কক্সবাজারে মানবপাচার মামলার চার্জশিট থেকে আলোচিত আসামিকে বাদ

নিউজ রুম / ১১৪ ভিউ টাইম
আপডেট : রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

আসামিও করল পুলিশ, রক্ষাও করল পুলিশ

চ্যানেল কক্স ডেস্কঃ
কক্সবাজার শহরে আলোচিত দু’টি পতিতালয়ে অভিযানের পর দুই হোটেল মালিককে এজাহারনামীয় আসামি করেছিল পুলিশ। হাতেনাতে আটক পতিতা ও খদ্দরসহ মালিকদের পলাতক আসামি  দেখিয়ে সদর থানার এসআই রাজিব চন্দ্র পোদ্দার বাদি হয়ে মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইনে মামলা দায়ের করেছিল।

ওই মামলার অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়েছে লালদীঘির পাঁচতারা হোটেলের মালিক রমজান সিকদারকে। এজাহারনামীয় আসামি রমজান সিকদারকে বাদ দেয়া হলেও একই মামলার একই অভিযোগে অপর হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এস আই শেখ মো. সাইফুল আলম। যদিওবা আদালত এখনো অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেনি বলে কোর্ট পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। পুলিশের এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর থানার একদল পুলিশ লালদিঘীর  ‘পাঁচতারা হোটেল’ ও কলাতলী কটেজ জোন এলাকায় ‘মেঘালয়’ নামে একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালায়। হোটেল দু’টি পতিতালয় হিসেবে ব্যবহার করে পতিতা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ রয়েছে এজাহারে। ওই অভিযানে ‘পাঁচতারা’ হোটেল থেকে ২শ পিস কনডমসহ ছয়জন পতিতাকে হাতেনাতে আটক করে। আটকের পর হোটেল মালিক রমজান সিকদারকে পলাতক আসামি দেখিয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইনে মামলা দায়ের করেন পুলিশ।

একই অভিযানে ‘মেঘালয়’ হোটেল থেকে ম্যানেজার ও ছয়জন পতিতাসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছিল ৪১০ পিস কনডম। একইভাবে হোটেল মালিক ইউসুফকে পলাতক আসামি দেখিয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইনে মামলা দায়ের করেন পুলিশ।

অভিযানের পরের দিন ২৬ সেপ্টেম্বর সদর থানার এসআই রাজিব চন্দ্র পোদ্দার বাদি হয়ে দুই হোটেলের মালিকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে ১৮ নাম্বার পলাতক আসামি পাঁচতারা হোটেলের মালিক রমজান সিকদার ও ১৯ নম্বর পলাতক আসামি মেঘালয় হোটেলের মালিক ইউসুফ। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হলেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই শেখ মো. সাইফুল আলম। চলতি বছরের (২০১৯ ইং) ৫ আগস্ট এই মামলাটির অভিযোপত্র আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শেখ মো. সাইফুল আলম।

অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এজাহার নামীয় ১৯ জন আসামি থেকে অভিযোগপত্রে নাম এসেছে ১১ জনের। অভিযোগপত্রে বাদ দেয়া হয়েছে আটজনকে। এর মধ্যে পাঁচতারা হোটেল থেকে হোটেল মালিক রমজান সিকদারসহ পাঁচজনকে। মেঘালয় হোটেল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তিনজন যৌনকর্মীকে। পলাতক আসামী হিসেবে অভিযোগপত্রে হোটেল ‘মেঘালয়’ এর মালিকের নাম ভাড়াটিয়া হিসেবে অর্ন্তভুক্ত হলেও বাদ দেয়া হয়েছে একই অভিযোগে এজাহার নামীয় আসামি রমজান সিকদারকে। তবে কৌশলী অভিযোগপত্র তৈরিতে রমজান সিকদারকে বাদ দেয়া হয়। এজাহারে ইউসুফকে হোটেল মেঘালয়ের মালিক উল্লেখ করা হলেও অভিযোগপত্রে ভাড়াটিয়া হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। একই এজাহারে মালিক রমজান সিকদার তার মালিকাধীন পাঁচতারা হোটেলটিকে মিনি পতিতালয় সাজিয়ে পতিতা ব্যবসা চালিয়ে আসছে বলে উল্লেখ রয়েছে।

অভিযোগপত্রে এজাহার নামীয় আসামি রমজান সিকদারের অগোচরে অপর আসামি আবু সাহিদ পাঁচতারা হোটেলে পতিতা ব্যবসা পরিচালনা করে বলে উল্লেখ করা হয়। এজাহার থেকে খুব কৌশলে অভিযোগপত্রে নাম বাদ দেয়া হয়েছে রমজান সিকদারকে। মামলার বাদি সদর থানার এসআই রাজিব চন্দ্র পোদ্দার বলেন, আমি মামলার এজাহার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। অভিযোগপত্রে নাম না আসার বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তা ভালো জানবেন। অনেক সময় এজাহারে কিছুটা ভুল হয়ে থাকে। তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তে অনেক সময় ভুল গুলো সংশোধন হয়। আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর বাদির কিছু করণীয় আছে কিনা আমার এই মূর্হুতে জানা নেই। বিষয়টি জেনে দেখতে হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শেখ মো. সাইফুল আলম বলেন, তদন্ত করে যেটা সঠিক পেয়েছি ওইভাবে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। তদন্তে যারা জড়িত ছিল না তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আবিদুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, পাঁচতারা হোটেলে অভিযানের সময় আমিও ছিলাম। অভিযানে তিন তলা ও চার তলা থেকে কাউকে উদ্ধার করা হয়নি। পরে নেমে আসার সময় নিচে বাউন্ডারির এক পাশ থেকে কয়েকজন পতিতা ও খদ্দরসহ কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছিল। এরপর মালিক রমজানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তিনি বলেন- মামলা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, যেখান থেকে পতিতাদের আটক করা হয়েছিল ওই অংশটুকু রমজানের নয়। পাঁচতারা হোটেলটি রমজানের এবং তিনি অবৈধ ব্যবসায়ে জড়িত এমন জনশ্রুতি রয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করেছিল রমজানের মতো একজন খারাপ লোককে বাদ দেওয়া হয়েছে কেন। কিন্তু যেখান থেকে আটক করা হয়েছে ওই অংশটুকু তার বোনের। বিল্ডিংটি নিয়ে মালিকানার ঝামেলা রয়েছে। আমাদের কাছে আগে থেকে মালিকানা নিয়ে ঝামেলার বিচার ছিল। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, পতিতা ও খদ্দর আটক করার অংশটুকু রমজানের নয়। তাই তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। অনেকেই মনে করতে পারে তার থেকে সুবিধা নিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে; আসলে তেমন না। যদি রমজানের অংশ থেকে উদ্ধার করা হত তাহলে তাকে অভিযোগপত্রে অর্ন্তভুক্ত করা হত। কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল পূর্বকোণ অনলাইনকে বলেন, লালদীঘির পাড়স্থ পাঁচতারা হোটেলে যুগযুগ ধরে অবৈধভাবে পতিতা ব্যবসা চলে আসছে ওটা সবার জানা। জানে না এমন লোক কমেই আছে। আর রমজান সিকদার নিজের বির্ল্ডিংয়ে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ওটার সবার জানা। প্রতিবছর পাঁচতারা হোটেলে বেশ কয়েকবার অভিযান হয়। অভিযানে পতিতা ও খদ্দরসহ আটকও হয়। কিন্তু মালিক থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রথমবারের মতো সর্বশেষ অভিযানে আসামি হয়েছিল রমজান সিকদার। কিন্তু শের্ষ পর্যন্ত অভিযোগপত্র থেকে বাদ গেল। তিনি বলেন, হয়ত বির্ল্ডিং নিয়ে মালিকানার ঝামেলা থাকতে পারে। ঝামেলা থাকলে ওটা দীর্ঘদিনের বিষয়। কিন্তু পাঁচতারার পুরো হোটেলে অবৈধভাবে পতিতা ব্যবসা করছে রমজান; এটা সবার জানা। পুরো বির্ল্ডিং তার নিয়ন্ত্রণে। তিনি ছাড়া আর কেউ ওই হোটেলে পতিতা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে না। সঠিক তদন্ত করলে বিষয়টি পরিস্কার বের হয়ে আসবে। এমনকি পাশের বির্ল্ডিং ও মসজিদ কমিটি থেকেও জিজ্ঞাসা করলে সব সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।

সূত্রঃ দৈনিক পূর্বকোন অনলাইন।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ