• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন

অভিযোগ যখন পুলিশের বিরুদ্ধেঃ আ‌রিফ ইকবাল বনাম দিদারঃ সং‌শোধন হতে হবে

নিউজ রুম / ১৯৭ ভিউ টাইম
আপডেট : মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯

সম্পাদকীয়ঃ

মাদকের বিস্তার রোধে পুলিশ ভূমিকা রাখবে-এমনটিই হওয়ার কথা। কিন্তু সেই পুলিশই যখন মাদক কারবারীদের সহায়ক হন এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে।

গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে কক্সবাজার সদ‌র খরু‌লিয়া এলাকার মৃত দানু মিয়ার পুত্র কক্সবাজার আওয়ামী মটর শ্র‌মিক লী‌গের সভাপ‌তি দিদারুল আলম দিদার ইয়াবা ও অস্ত্র সহ কক্সবাজার সদর ম‌ডেল থানার পু‌লি‌শের হা‌তে আটক হ‌য়ে‌ছে। ধন্যবাদ পু‌লিশ প্রশাসন‌কে একজন চি‌হ্নিত মাদক ব্যবসায়ী‌কে আটক কর‌তে সক্ষম হ‌য়ে‌ছেন।

ত‌বে দুঃখ প্রকাশ কর‌ছি এইটা ভে‌বে যে, কক্সবাজা‌রে মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে বিশেষ চরিত্রের বিশেষ কিছু পুলিশ । ঘটনাসু‌ত্রে, উক্ত মাদক ব্যবসায়ী দিদা‌রের বিরু‌দ্ধে আমার সম্পাদনায় প্রকা‌শিত দৈ‌নিক আ‌লো‌কিত উ‌খিয়া প‌ত্রিকায় ধারাবা‌হিক সংবাদ প্রকা‌শিত হয়। ইয়াবা কারবারী দিদার ম‌ডেল থানার পু‌লিশ আ‌রিফ ইকবা‌লের পরাম‌র্শে সম্পাদক সহ প‌ত্রিকায় সং‌শ্লিষ্ট সম্পাদক মন্ডলীও সাংবা‌দিক‌দের বিরু‌দ্ধে কক্সবাজার জু‌ডি‌সিয়াল ম্যা‌জি‌ষ্ট্রেট ও সাইবার ট্রাইবুনাল ঢাকায় ২টি পৃথক পৃথক ১০ লক্ষ টাকার মানহা‌নি ও চাদাবাজী মামলা দা‌য়ের ক‌রেন। এবং উক্ত মামলার তদন্তবার সদর থানার পু‌লিশ আ‌রিফ ইকবাল নি‌জেই তদার‌কি ক‌রে দিদা‌রের নিকট থে‌কে নগদ ৩ লক্ষ টাকা নি‌য়ে আমা‌দের হলুদ সাংবা‌দিক আখ্যা দি‌য়ে ইয়াবা কারবারী দিদার‌কে তুলশী পাতায় দৌত ক‌রে মহৎ সৎ ফে‌রেস্তা সা‌জি‌য়ে বাংলা‌দেশ আওয়ামীলী‌গের বি‌শিষ্ট নেতা বা‌নি‌য়ে সাইব‌ার ট্রাইবুনা‌লে তদন্ত রি‌পোর্ট দা‌খিল ক‌রেন। ট্রাইবুনা‌ল আমা‌দের জা‌মি‌নে মু‌ক্তি দি‌য়ে‌ছেন ত‌বে মামলা‌টি এখ‌নো বিচারাধীন র‌য়ে‌ছে। এখা‌নে উ‌ল্লেখ্য‌ যে, দিদা‌রের বিরু‌দ্ধে সদর ম‌ডেল থানায় ডাকা‌তি চু‌রি সন্ত্রাসী ও চাদাবাজী সহ ৫ টি মামলা নতীভুক্ত আ‌ছে। আশ্চ‌র্যের বিষয় মাননীয় পু‌লিশ আ‌রিফ ইকবাল এক‌টি মামলারও হ‌দিস খু‌জে পান‌নি! যাহা বাংলা‌দেশ পু‌লি‌শের সি‌ডিএমএস পি‌সি‌পিআর সার্চ দি‌লে দৃশ্যমান।

গত ৩০ ডি‌সেম্বর ইয়াবা ও অস্ত্রসহ দিদার ম‌ডেল থানার পু‌লিশ এস আই প্রদী‌পের হা‌তে আটক হয়। আ‌মি প্র‌ত্রিকার পক্ষ থে‌কে এস আই প্রদীপ সহ পু‌লিশ প্রশাস‌নের সৎ সাহসী কর্মকর্তা‌দের শ্রদ্ধার স‌হিত সম্মান জানাই। আ‌রিফ ইকবাল‌দের মত পু‌লি‌শের কর্মকা‌ন্ডে আজ পু‌লিশ প্রশাসন প্রশ্ন‌বিদ্ধ। আ‌মি ধিক্কার জানাই সে সমস্ত পু‌লিশ‌দের যারা মাদক কারবারী‌দের আশ্রয় প্রশ্রয় দি‌য়ে অ‌নৈ‌তিক সু‌বিধা গ্রহণ ক‌রে মাদক কারবারী‌দের ঝিঁ‌য়ে রে‌খে‌ছে।

আ‌মি সদর থানার পু‌লিশ আ‌রিফ ইকব‌া‌লের কা‌ছে ও‌পেন চে‌লেঞ্জ কর‌ছি আ‌মি সহ আমার কোন সাংবা‌দিক‌দের বিরু‌দ্ধে ইয়াবা কারবারী দিদা‌রের কাছ থে‌কে চাদা চে‌য়ে‌ছে এমন প্রমান দি‌তে পা‌রেন আমরা সাংবা‌দিকতা ছে‌ড়ে দিব। এবং আপনার কা‌ছে আমার প্রশ্ন, একজন চি‌হ্নিত ডাকাত চুর সন্ত্রাসী চাদাবাজ যার বিরু‌দ্ধে প্র‌ত্যেক‌টি অপরা‌ধের মামলা বিদ্যমান থা‌কে কিভা‌বে সৎ মহৎ ফে‌রেস্তা রুপী বি‌শিষ্ট ব্যবসায়ীর সনদ দি‌লেন ?

আওয়ামী মটর শ্রমীক লীগ না‌মে কোন সংগঠন বাংলা‌দেশ আওয়ামীলী‌গে বিদ্যমান নেই, একজন মাদককারবারী‌কে কিভা‌বে আপ‌নি সাইবার ট্রাইবুনা‌লে বি‌শিষ্ট আওয়ামী নেতা বানা‌নো চেষ্টা কর‌লেন? জাতীর কা‌ছে আপ‌নি প্র‌শ্নের উত্তর গু‌লো দি‌য়ে যা‌বেন। আপনা‌দের মত পু‌লিশদের কার‌নে আজ গুটা দেশ অতপর সাংবা‌দিক সমাজ বিব্রত।

আমার অনু‌রোধ, মাদকের বিস্তার রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। রক্ষকের ভক্ষক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা। বিশেষ করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তার দেশজুড়ে। সত্যি বলতে কি দেশের এমন কোনো এলাকা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকের থাবা নেই। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন মাদককারবারের সাথে জড়িত। তারা বিভিন্ন কলাকৌশলের আশ্রয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। সত্যি বলতে কি দেশজুড়ে এক বিশাল জাল বিস্তার করে আছে এই মরণ নেশার ভয়াবহ সিন্ডিকেট। আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্র মাফিয়াদের সঙ্গে রয়েছে এদের শক্ত ও গভীর যোগাযোগ। মাদকের রয়েছে বিভিন্ন রুট। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর, সীমান্ত এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি। এর কিছু ধরা পড়ে। বাকিটা চলে যায় মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের কাছে। টেকনাফ কক্সবাজরেও মাদকব্যবসা রমরমা। মাদকের জগতে এক সময় ‘হেরোইন’ নামক মরণ নেশা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল। এ পদার্থটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ করে অবধারিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এটি খুব দামি বলে পরবর্তী সময়ে এর স্থান দখল করে নেয় ফেনসিডিল ও ইয়াবা। বর্তমান নেশাআসক্ত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এ দুটি নেশাদ্রব্য বেশি জনপ্রিয়। একে ঘিরে দেশব্যাপী গড়ে উঠেছে বিশাল নেটওয়ার্ক। ফেনসিডিলের চেয়ে ইয়াবাই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

‘মাদকের সর্বনাশা দিক নিয়ে আমরা সম্পাদকীয় স্তম্ভে অনেকবারই লিখেছি। কিন্তু অবস্থার কোনো হেরফের হয়নি। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে মাদক সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতারও কোনো বিকল্প নেই।’

শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। তার বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও অমিত সম্ভাবনা। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অবক্ষয়, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা, হতাশা এবং মূল্যবোধের অভাবের সুযোগ নিয়ে মাদক তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তরুণ সমাজের প্রতি। বেকারত্বও মাদকের বিস্তারে সহায়ক-এমন কথাও বলছেন বিশ্লেষকরা। এই মরণ নেশার বিস্তারে সমাজে একদিকে যেমন অপরাধ বাড়ছে, তেমনিভাবে নষ্ট হচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলা। এই অবস্থা চলতে থাকলে একটি সমাজের অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি সহজলভ্য যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যে কোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে মাদকের অনুপ্রবেশ। দেশেও যাতে মাদকদ্রব্য উৎপাদন হতে না পারে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে, মাঝে-মধ্যে ছোটখাট মাদক কারবারী ও মাদকের চালান ধরা পড়লেও তাদের মূল কুশীলবরা থেকে যায় ধরাছোয়ার বাইরে। অভিযোগ রয়েছে, সমাজের প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তিবর্গ এসব সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকায় তাদের টিকিটি স্পর্শ করতে পারে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি।

মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে মাদক সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতারও কোনো বিকল্প নেই। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। যারা ইতোমধ্যেই মাদকাসক্ত হয়েছে তাদেরও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বাড়াতে হবে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যাও। সর্বোপরি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে যার যার অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে।

সূত্রঃ আলোকিত উখিয়া।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ