• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:২৫ অপরাহ্ন

কক্সবাজার খুরুশকুল-পিএমখালীতে পাহাড় নিধনে ৫১জনের সিন্ডিকেট

নিউজ রুম / ৭৯ ভিউ টাইম
আপডেট : শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২০

নিউজ ডেক্সঃ

৩৯ টি অবৈধ পিকআপ দিনে-রাতে সাবাড় করছে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ও পিএমখালী ইউনিয়নের ২৭ টি পাহাড়। গত তিন মাস ধরে ৩৯ টি পিকআপ নিয়ে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন এসব পাহাড় নিধনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে ৫১ জনের একদল পাহাড় খেকো সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে থাকা ৩৯টি অবৈধ পিকআপ দিনে-রাতে প্রকাশ্যে চলছে পাহাড় কেটে মাটি ও বালি পরিবহনে। তারা ইতিমধ্যেই পাহাড়ের মাটি বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। রহস্যজনক কারণে প্রকাশ্যে দিনে-রাতে পাহাড়ের মাটি নিয়ে ৩৯ টি অবৈধ পিকআপ ভ্যান সড়ক ও মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করছে নির্বিঘ্নে। কিন্তু স্থানীয় বন বিভাগ সেখানে এক প্রকার অসহায়। বনকমর্ীদের বেশ কয়েক দফা ধাওয়া, গুলি করে মারার হুমকিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু বন মামলা করে তা নিয়ন্ত্রন সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে পিএমখালী ও খুরুশকুল এখন এক ভয়ংকর এলাকায় পরিণত হয়েছে। সেখানে পাহাড় খেকোদের রাজত্বে দিশেহারা সাধারণ মানুষও।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পিএমখালী ইউনিয়নের তোতকখালী, সিকদারপাড়া, সতেরকাটা, মাঝেরপাড়া, ছয়ভাইয়ের পাড়া, পুরাকাটা, সিকদারঘোনা, কাঠালিয়ামোরা, চেয়ারম্যানঘাটা, তাহেরমোহাম্মদেরঘোনা, সাতঘরিয়া পাড়া, ছনখোলা, নয়াপাড়া, ঘোনাপাড়া, মাদলিয়াপাড়া, পাহাড়তলী, খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়ার ইউছুফ ফকিরপাড়া, রুহুল্লার ডেইল, ডেইলপাড়া, আদর্শগ্রাম, তেতৈয়া, ঘোনাপাড়া, পূর্ব হামজারডেইল, মেহেদীপাড়া, নতুন ঘোনাপাড়া, ফকিরের দোকান, ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ হাজীপাড়া গ্র্রামে ২৭টি পাহাড় নিধন চলছে প্রকাশ্যে। এসব এলাকার পাহাড়গুলোতে একে একে ৩৯টি পিকআপ লাগিয়ে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কক্সবাজার শহর সহ বিভিন্ন এলাকায়। সেখানে নিচু এলাকায় অসংখ্য প্লট ভরাট করা হচ্ছে টাকার বিনিময়ে। নেয়া হচ্ছে খুরুশকুল আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায়ও। ওই সব নিচু এলাকা ভরাটে মাটি খেকোরা সব পাহাড়ই সাবাড় করে দিচ্ছে প্রকাশ্যে। কিন্তু এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনের সব বিভাগই এক প্রকার নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে শহরে প্রবেশ পথ, বাংলাবাজার থেকে পিএমখালী সড়ক এবং খুরুশকুল ব্রীজ দিয়ে প্রতিদিন প্রকাশ্যে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৯টি পিকআপ নিয়ে পাহাড় কেটে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে। খুরুশকুল ব্রীজে প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকে মাটি ভর্তি পিকআপের কারণে। এসব মাটি ভর্তি পিকআপের কারণে পথচারিরাও দূভোর্গে আছেন। এমনকি মাটি ভর্তি পিকআপের ধাক্কায় এ পর্যন্ত ৭/৮ জন মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অনেকেই। এর পরও মাটি ভর্তি পিকআপ চলছেই। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব অবৈধ কর্মযজ্ঞ চলছে অবাধে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের বড় কর্তারা অভিযান চালালেও পরে আবার ওই কাজ শুরু করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পাহাড় কেটে মাটি পরিবহনে ব্যবহ্নত ৩৯টি পিকআপ গাড়ির মালিক হচ্ছেন যথাক্রমে ঝিলংজার হাজীপাড়ার জাহেদ, শফি, মৌলভীপাড়ার মনছুর, পিএমখালীর ডিকপাড়ার মোস্তাক, তুষার, আমান উল্লাহ, নয়াপাড়ার আলম, কাদের, আবদুল্লাহ, হারুন, পরানিয়াপাড়ার ওবায়দুল, নুরুল আমিন, তোতকখালীর কায়েস, ফয়সাল, আমজাদ, জাসেদ, আক্কাছ, শাহজাহান, খুরুশকুলের কাওয়ারপাড়ার কায়ছার, মামুন, মনিরুল, কুলিয়াপাড়ার জিয়াবুল, নবাব মিয়া, রফিক, লামাজিপাড়ার নাছির, তেতৈয়ার ইউছুপ ফকিরপাড়ার বাবুল, কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার নাছির উদ্দিন রুনু, ফরিদ কোম্পানি, জয়নাল, এহছান, কলাতলী আদর্শগ্রামের সেলিম উল্লাহ সুমন, নুনিয়াছড়া মগচিতাপাড়ার লম্বা জাহাঙ্গীর অন্যতম।
এছাড়া সরকারি পাহাড় দখল করে যারা পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছেন তারা হলেন যথাক্রমে পিএমখালী ইউনিয়নের তোতকখালীর কায়েস সিকদার, আদিল সিকদার, তাহেরমোহাম্মদের ঘোনার রবি হোসেন চৌধুরী, কাঠালিয়ামোরার মুফতি ছৈয়দ করিম, মাহবুব উল্লাহ, ছনখোলার জাহাঙ্গীর আলম, মাদলিয়াপাড়ার রমজান, খুরুশকুলের জলিয়াবাপেরপাড়ার মাওলানা মোহাম্মদ ইউছুফ, পূর্ব হামজারডেইল এলাকার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, শাহিন আলম, কুলিয়াপাড়ার খোরশেদ আলম, পেঁচারঘোনার শামশুল আলম, তেতৈয়া দক্ষিণপাড়ার বেলাল সিকদার, সওদাগরপাড়ার মোহাম্মদ ইসলাম, ইউছুপ ফকিরপাড়ার আবু বক্কর ছিদ্দিক বাবুল, মুজিবুল হক, ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়ার শফিউল আলম, নাছির উদ্দিন অন্যতম।
নির্বিচারে পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিবেশবাদি স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন ‘এনভায়রণমেন্ট পিপল’ এর প্রধান নিবার্হী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘সম্প্রতি সংগঠনের একটি দল খুরুশকুল, পিএমখালী ও ঝিলংজার ২৭টি পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শন করে পাহাড় কাটার ভয়াবহ চিত্র দেখতে পায়। পাহাড় কেটে বেশ কিছু পিকআপ (ডাম্পার) যোগে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে দেদারছে। যা এক সময় ভয়ঙ্কর পরিনতি ডেকে আনবে। এভাবে পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে। এটি উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহনে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বন মামলা দিয়ে পাহাড় কাটা রোধ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে।’
প্রকাশ্যে পাহাড় নিধনের বিষয়ে জানতে চাইলে পিএমখালী রেঞ্জে’র রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ইতিমধ্যেই ৮০টি মামলা দেয়া হয়েছে। কয়েকটি গাড়িও জব্দ করা হয়েছে। এরপরও পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছেনা। উল্টো গুলি করে মারার হুমকি দিচ্ছে।’
যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। পাহাড় কাটলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আফসার বলেন, ‘পাহাড় কাটা রোধে প্রশাসন কঠোর। ইতিমধ্যেই পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনে ইউএনও এবং এসিল্যান্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, পিএমখালী ও খুরুশকুল ইউনিয়নে ২৯ টি গ্রামের ৪০ টি পাহাড়ের অধিকাংশের একাংশ কেটে ফেলা হয়েছে ইতিমধ্যেই। এর আগে গত দুই বছরে ওই এলাকায় প্রায় ৩০টি পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে। ওই সব পাহাড়ের চিহ্নও এখন সেখানে আর অবশিষ্ঠ নেই।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ