• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০১ অপরাহ্ন

রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদনেও ক্ষতির মুখে চাষিরা

নিউজ রুম / ৩০৩ ভিউ টাইম
আপডেট : শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৯

জসীম উদ্দীন: এবার চলতি মৌসুম শেষ হবার আগেই লবণ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে।বর্তমানে লবণ উৎপাদন ১৮ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থার (বিসিক) এর তথ্যমতে বাংলাদেশে এক মাত্র লবণ শিল্প এলাকা কক্সবাজারে বাণিজ্যিকভাবে লবণ উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬০ সালে। সেই থেকে গত ৫৮ বছরে এটিই লবণ উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

বিসিক সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার সদর, জেলার চকরিয়া,পেকুয়া,মহেশখালী
কুতুবদিয়া ও টেকনাফে প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হয়েছে। এবার লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিল ১৬লাখ মেট্রিক টন। যা ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। এবং আরো অন্তত এক সপ্তাহ চলতি মৌসুমের সময় থাকায় অারো অধিক লবণ উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

তীব্র দাবদাহের কারণেই লবণ উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে বলে মনে করেন( বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) দিলদার আহমদ চৌধুরী।তিনি বলেন,চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদিত হয়েছে। যা পরিমাণে ১৮ লাখ ৫০০ মেট্রিক টন, যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এদিকে মাঠের প্রান্তিক চাষিরা রের্কড পরিমাণ লবণ উৎপাদনে উৎসাহী হলেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় খুশি নন তারা। এতে চাষিদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
চাষিদের তথ্যমতে এক মণ লবণ উৎপাদনের পেছনে খরচ হচ্ছে ২০০টাকা,তার বিপরীতে লবণের মূল্য পাচ্ছেন মণ প্রতি ১৮০থেকে ১৯০টাকা।

চাষিদের দাবি বিগত ২০১৫ ষোলো সালে তুলনামূলক লবণ উৎপাদন কম হলেও লবণের চওড়া দাম থাকার কারনে সন্তুুষ্টজনক লাভবান হয়েছিল মাঠ পর্যায়ের লবণ চাষিরা। তব সময়ের ব্যবধানে কানি প্রতি লবণের মাঠের দাম বেড়ে প্রায় চারগুণ এবং একজন চাষির বেতন ৫গুণ বেড়েগেছে। এতে করে লবণ বেশি পেলেও
উৎপাদন খরচ তাদের উঠছেনা।

চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার জন্য গত কয়েক বছর যাবত বিদেশ থেকে লবণ আমদানিকে দায়ি করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে লবণ আমদানির কথা শুনা না গেলেও গত দুই মাস যাবত চায়না থেকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে সোডিয়াম সালফেট এনে সোডিয়াম ক্লোরাইড হিসাবে বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছে।এরই প্রেক্ষিতে
লবণের দাম থমকে আছে বলে মনে করেন
অনেকেই।

কক্সবাজারে বিভিন্ন উপজেলা শতাধিক চাষির সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের
চাষিদের অভিযোগ পরিকল্পিত ভাবে সিন্ডিকেট করে মিল মালিকরা লবণের দাম কম দিচ্ছে। তাদের দাবি বেশি মুনাফার লোভে তারা গরীব চাষিদের ছুরি দিয়ে গলাকাটছে।

কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীর বাদশা মিয়া নামের এক চাষি বলেন, সুদি টাকা দিয়ে পলিথিন ক্রয় করে লবণের চাষ করেছি, লবণ বেশি পেলেও পর্যাপ্ত দাম না পাওয়ায় লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না তিনি।

মহেশখালী লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী ওয়াসিম সিকদার বলেন,এবার মৌসুমের শুরু থেকে যেখানেই লবণ নিয়ে যাচ্ছি সবখানে মিল মালিকদের এক অজুহাত, বিদেশ থেকে লবণ আসার আশংকা আছে তাই দাম কম।

একই ভাবে চকরিয়ার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী আনিসুল হক অভিযোগ করে বলেন,বিদেশের লবণ আসছে এমন হুমকি দিয়ে চাষিদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করছেন মিল মালিকদের সংঙ্ঘবদ্ধ একটি সিন্ডিকেট।

লবণের ন্যায্যমূল্য চাই” সংগঠনের নেতা আবদুল গফ্ফর চৌধুরী বলেন,সরকারী ভাবে কোন ধরনের লবণ নীতি না থাকায় যুগের পর যুগ লবণ চাষিরা শতভাগ অধিকার থেকে বঞ্চিত।তিনি বলেন, লবণ চাষ করার এখন বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে,
তাই অভিলম্বে সরকারের এ বিষয়ে নজর দেয়া জরুরী বলে মনে করেন তিনি।

শুরু থেকে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির বিপক্ষ্যে অবস্থান নেয়া ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সভাপতি শামশুল ইসলাম আজাদ বলেন, লবণের বেশি উৎপাদনের সঙ্গে দাম কমে যাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। মূলত লবণ আমদানির হুমকির কারনে লবণের দাম বাড়ছেনা। বিশেষ করে চায়না থেকে সোডিয়াম সালফেট নামের এক ধরনের লবণ এনে সোডিয়াম ক্লোরাইড হিসেবে বাজারজাত করার চেষ্টা চলছে। একারনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের লবণ চাষিরা। হুমকি মুখে পড়েছে কক্সবাজারের লবণ সংশ্লিষ্ট প্রায় ৫লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ।
লবণ নীতি গঠন করে ভবিষ্যৎ লবণ শিল্পের মান উন্নয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়াও সরকারের কাছে আপদকালীন লবণ মজুদ করার তাগিদও দেন শামশুল ইসলাম আজাদ।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ