• মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৬ অপরাহ্ন

পুলিশের প্রেম

বার্তা কক্ষ / ৩৩৯ ভিউ টাইম
আপডেট : শনিবার, ১ জুন, ২০১৯

বাহাদুর আলমের টাইম লাইন থেকে : চট্টগ্রামের একটা আলোচিত ঘটনা দিয়ে লেখালেখিটা শুরু করতে চাই। গণমাধ্যমের বদৌলতে ঘটনাটি সবার মুখেমুখে।
৭ জানুয়ারি-২০১৯, রাত আটটা। কনকনে শীত। চট্টগ্রাম মহানগরের আগ্রাবাদ জাতিতাত্বিক জাদুঘরের সামনের ফুটপাতে ময়লা পানিতে ভরপুর ছোট্ট নালা। সেই নালার পাশে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী। আশপাশে বহু মানুষ দাঁড়িয়ে ওই নারীর আর্তনাদ দেখছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যু যন্ত্রণা উপেক্ষা করে ওই নারী ফুটপাতে জন্ম দিলেন ফুটফুটে এক শিশু। মায়ের নাড়িতে জড়িয়ে থাকা নবজাতকটি (শিশুটি) ফুটপাতের ধুলোবালিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। ততক্ষণেও কোনো লোক এগিয়ে এলো না। বাড়িয়ে দেননি কেউ সহযোগিতার হাত, ওই অসহায় মানসিক ভারসাম্যহীন প্রসূতি মা ও তাঁর পিতৃপরিচয়হীন শিশু সন্তানটির প্রতি। অনেকটা সবাই হা করে শিশুটির ভুবন ফাটানো কান্না আর মায়ের আত্মচিৎকার উপভোগ করছিলেন।
এরকম পরিস্থিতিতে কোনো বিবেকবান মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে ? মোটেও না।
মুহুর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলে ছুটে এলেন একজন মানুষ। তিনি দ্রুত মা ও শিশুটিকে নিয়ে গেলেন পাশের হাসপাতালে। পকেটের টাকা খরচ করে প্রাণে বাঁচলেন মা ও শিশুকে।
যিনি মা ও শিশুটিকে রক্ষা করলেন তাঁর নাম মাসুদুর রহমান। তিনি পুলিশের একজন গর্বিত সদস্য। তিনি ডবলমুরিং থানা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মাসুদুর রহমান। মানবিক ভুমিকা পালনের জন্য এসআই মাসুদুর রহমানের সুনাম আজ দেশব্যাপী। মুমুর্ষ মানব সন্তানকে প্রাণে বাঁচিয়ে তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জল করেছেন।
পুুলিশ শুধু খারাপ কাজটি করে, তা কিন্তু না। এসআই মাসুদুর রহমানের মতো অনেক মানবিক পুলিশ দেশে আছেন। এরকম মানবিক কাজের উদাহরণ অনেক দেয়া যায়। পুলিশের জন্মও সম্ভবত একারণে।
ইংরেজি ‘Police’ শব্দের অর্থ তা ই প্রমাণ করে।
যেমনঃ-
P-Polite (ভদ্র)
O-Obedient (বাধ্য)
L-Loyet (অনুগত্য, বিশ্বস্ত)
I-Intelligent (বুদ্ধিমান, মেধাসম্পন্ন)
C-Courageous (নির্ভিক,সাহসী)
E-Efficient (দক্ষ)
অর্থাৎ পুলিশের আচরণ হবে সুন্দর ও মানবিক। একজন পুলিশ সদস্য সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করেন, মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে দুরে রাখতে পারেন। মানুষ যেটা পারেনা, পুলিশ সেই কাজটা করে দেখিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। একজন আদর্শবান পুলিশ দেশ ও জাতির সম্পদ। একজন পুলিশ সরকারের আইন প্রয়োগকারী, আইন রক্ষাকারী ও মানুষকে বিভিন্ন আইনি সহায়তা দিয়ে থাকেন। তবে কিছু পুলিশ সদস্য তাঁর মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভিন্ন খারাপকাজ অথবা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ঘুষ-দুর্নীতি অথবা অন্যায়ভাবে আয়রোজগার করেন। তাঁরা মানুষের কাছে মানবিক পুলিশ হতে পারেন না। পুলিশের মতো সকল পেশায় এরকম কিছু দুষ্টবুদ্ধি-খারাপ প্রকৃতির মানুষ থাকেন। তারা তাদের দায়িত্ব আদর্শ এবং দায়বদ্ধতা থেকে বিচ্যুত হয়ে যান। অন্যদিকে একজন মানবিক, সৎ, বুদ্ধিসম্পন্ন ও সাহসী পুলিশই পাওে, পুলিশ বাহিনীর সুনাম ধরে রাখতে, দেশের আইনশৃংখলা ঠিক রাখতে। জনগণের বন্ধু হতে।
বাংলাদেশ পুলিশের কাজ অনেক। আইনশৃংখলা রক্ষা, অপরাধ দমন, অপরাধীদের গেস্খপ্তার, মামলা গস্খহণ, বিচারে সহায়তা, সড়কের শৃংখলারক্ষা, ভিআইপি নিরাপত্তা-প্রটৌকলসহ অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয় পুলিশকে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগও পুলিশের নিতে হয়। বলতে গেলে এক পুলিশের অনেক কাজ।
দেশে এখন পুলিশের মোট জনবল ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫২০ জন। জাতিসংঘের মান অনুযায়ী শান্তির সময় নাগরিক এবং পুলিশের আদর্শ অনুপাত হলো ৪০০:১। কিন্তু বাংলাদেশে এই অনুপাত বর্তমানে ৮২২: ১। আর বাংলাদেশ পুলিশের মোট জনবলের শতকরা ৭ ভাগ এখন নারী। ১৯৮৯ সন থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরাও ধারাবাহিকভাবে অংশ নিচ্ছেন। মিশনে নারী পুলিশ যুক্ত হয়েছে ২০১০ সন থেকে। শান্তি মিশনে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্য অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে জাতিসংঘের নয়টি মিশনে ১ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। এরমধ্যে নারী পুলিশ সদস্যের সংখ্যা তিন শতাধিক। আগে অধিকাংশ পুলিশ সদস্যের হাতে মানুষ লাঠি দেখতো। এখন লাঠি তুলে নিয়ে পুলিশ সদস্যের হাতে দেয়া হচ্ছে পদপর্যাদা অনুপাতে আগ্নেয়াস্ত্র। যে কারণে পুলিশ সদস্যরা এখন অনেক দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছেন। রাজধানীর হোলি আর্টিজান হামলা তার দৃষ্টান্ত হতে পারে। পুলিশ অতিদক্ষতার সাথে সেই দিনের জঙ্গিহামলার ভয়াবহতম ঘটনাটি দমন করতে পেরেছিল।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে দেশ থেকে জঙ্গি ও মাদক নির্মৃল করতে হবে।
দেশের মানুষকে রক্ষা করতে পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনী টেকনাফ, কক্সবাজারসহ সারাদেশে মাদকের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান শুরু করেছে। টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে। ইয়াবামুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আইনশৃংখলা বাহিনীর এই অভিযান চলবে। এক্ষেত্রে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা ছাড়া পুলিশ অথবা কোনো বাহিনীর একার পক্ষে মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ পুলিশ আর্ন্তজাতিক পুলিশি সংস্থা-ইন্টারপোল এর সদস্য। পুলিশ সদর দপ্তরে আছে ইন্টারপোল ডেস্ক। এই ডেস্কের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় ছাড়াও নানা ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এর বাইরে বাংলাদেশ পুলিশে এখন ফরেনসিক, সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, পোস্ট ব্লাস্ট ইনভেস্টিগেশন, ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন, বেসিক ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ও কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে পুলিশ অনেক আধুনিক ও দায়িত্বশীল। দিনদিন পুলিশকে মানবিক হতে বাধ্য করছে।
বাংলাদেশের পর্যটন জেলা কক্সবাজার। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ, প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ উল্লেখযোগ্য দর্শণীয় স্থান সমূহের অবস্থানও কক্সবাজারে। প্রতিবছর অন্তত ২০-২৫ লাখ দেশিবিদেশি পর্যটক কক্সবাজারে ছুটে আসছেন প্রাকৃতির লীলাখেলা দর্শণে। তাঁরা মুগ্ধ হন সমুদ্রে উত্তাল রূপ আর সবুজ পাহাড়ের ঝরণা দেখে। স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি পর্যটকেরাও


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ