• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন

একজন মুসলিম যুবকের পরিচয় পর্ব – ৩

নিউজ রুম / ১০২ ভিউ টাইম
আপডেট : সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০

চ্যানেল কক্স পর্ব – ৩

আদর্শবান হওয়ার জন্য উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন করা অতি জরূরী। আর উত্তম চরিত্রের মূর্ত প্রতীক ছিলেন নবী করীম (সাঃ)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে লক্ষ্য করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী’।
অন্যত্র তিনি বলেন,
‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (আহযাব ৩৩/২১)।

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি দশ বছর যাবত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সেবা করছি। তিনি আমার প্রতি কখনো ‘উহ’ শব্দটিও উচ্চারণ করেননি। তিনি আমার কোন কাজে কখনো অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেননি যে, এটা তুমি করলে না কেন অথবা কোন কাজ ছুটে যাওয়ার কারণেও তিনি বলেননি যে, এটা তুমি কেন করলে না।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রশ্ন করা হ’ল কোন কর্মটি সবচাইতে বেশি পরিমাণে মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, আল্লাহভীতি, সদাচরণ ও উত্তম চরিত্র। আবার তাঁকে প্রশ্ন করা হ’ল কোন কাজটি সবচাইতে বেশি পরিমাণে মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, মুখ ও লজ্জাস্থান’।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বল, শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উসকানি দেয়। শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’ (ইসরা ১৭/৫৩)।

তিনি আরো বলেন,
‘মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা, ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত’ (হামীম সাজদাহ ৪১/৩৪)।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
‘তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর। মন্দ কাজের পরপরই ভাল কাজ কর, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সাথে উত্তম আচরণ কর’।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন,
‘তোমাদের মধ্যে ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলমান হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। যেসব লোক নিজেদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম, তারাই তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম’।

ব্যাভিচার থেকে বেঁচে থাকা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তোমরা যেনার নিকটবর্তীও হয়ো না। এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ’ (ইসরা ১৭/৩২)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ‘যেনাকার নারী-পুরুষ প্রত্যেককে একশ’ বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান পালনে তাদের উভয়ের প্রতি তোমাদের মনে অনুগ্রহ আনা উচিত নয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাসী হও’ (নূর ২৪/২)।

উবাদাহ ইবনু ছামেত (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা আমার নিকট হ’তে আল্লাহর বিধান গ্রহণ কর’ কথাটি রাসূল (সাঃ) দুইবার বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন অবিবাহিত নারী-পুরুষকে একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন করতে হবে। আর বিবাহিত নারী-পুরুষকে ‘রজম’ করতে হবে।

রাসূল (সাঃ) আরো বলেন,
‘যেনাকার ও যেনাকারিণী ক্বিয়ামত পর্যন্ত উলঙ্গ অবস্থায় আগুনে জ্বলতে থাকবে’।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের সাথে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদেরকে তিনি পবিত্রও করবেন না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
তারা হচ্ছে : –
(১) বৃদ্ধ যেনাকার।
(২) মিথ্যাবাদী শাসক।
(৩) অহংকারী দরিদ্র ব্যক্তি’।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
‘মানুষের দু’চোখের যেনা দেখা। দু’কানের যেনা শুনা। জিহবার যেনা কথা বলা। হাতের যেনা স্পর্শ করা। পায়ের যেনা যেনার পথে চলা। অন্তরের যেনা হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা করা। লজ্জাস্থান তার সত্য মিথ্যা প্রমাণ করে’।

ওমর (রাঃ) বলেন,
‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হ’লে তৃতীয়জন হবে শয়তান’।

রেশমী বস্ত্র, স্বর্ণালংকার এবং নারীদের সাদৃশ্যপূর্ণ পোষাক পরিহার :

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমী বস্ত্র পরিধান করবে, সে পরকালে রেশমী বস্ত্র পরিধান করবে না’।

আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই স্বর্ণালংকার এবং রেশমী বস্ত্র আমার উম্মতের পুরুষের জন্য হারাম এবং নারীর জন্য হালাল’।

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,
‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘সে সকল পুরুষদের উপর অভিসম্পাত যারা মহিলাদের বেশ ধারণ করে’।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেই পুরুষের উপর অভিশাপ করেছেন, যে মহিলাদের পোষাক পরিধান করে’।

গিঁটের নিচে কাপড় পরিধান না করা :

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরবে সে জাহান্নামী’।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
‘আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির প্রতি করুণার দৃষ্টি দিবেন না, যে অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরে’।

গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র পরিহার করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘এক শ্রেণীর লোক আছে, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে অন্ধভাবে গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ করে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’ (লোকমান ৩১/৬)।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা যেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান বাজনাকে হালাল মনে করবে’।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মদ, জুয়া ও সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন’।

নেশাদার দ্রব্য পরিহার :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের কাজ। অতএব তোমরা এগুলি থেকে বেঁচে থাক। যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও’ (মায়েদাহ ৫/৯০)।

ওসমান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা নেশাদার দ্রব্য থেকে বেঁচে থাক। কেননা নেশাদার দ্রব্য হচ্ছে অশ্লীল কর্মের মূল’।

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘সব নেশাদার দ্রব্য মদ, আর সব ধরনের মদ হারাম। যে ব্যক্তি সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পান করে তওবা বিহীন অবস্থায় মারা যাবে, সে পরকালে সুস্বাদু পানীয় পান করতে পারে না’।

আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘নেশাদার দ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না’।

আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে, তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে-
(১) বিভিন্ন এলাকার ভূমি ধসে যাবে।
(২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে।
(৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে।

ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু সম্প্রদায় রাত অতিবাহিত করবে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য-পানীয়তে ভোগ বিলাসী হয়ে এবং বিভিন্ন ধরনের বিনোদন, আমোদ-প্রমোদে। এমতাবস্থায় তাদের সকলে শূকর ও বানরের আকৃতিতে রূপান্তরিত হবে’।

অতএব হে যুবক! তোমার প্রতিফোটা রক্ত আল্লাহর দেয়া পবিত্র আমানত, এসো তা ব্যয় করি আল্লাহর পথে। যৌবনের তাড়নায় যেন আমাদের মূল্যবান সময়টা শয়তানের পথে ব্যয় না করে আল্লাহর পথে ব্যয় করি।

গিয়াস উদ্দিন
বি.বি.এ একাউন্টিং (২য় বর্ষ)
জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়। সিনিয়র শিক্ষক হিসাববিজ্ঞান, গণিত, প্রবাহ কোচিং সেন্টার কক্সবাজার।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ