• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:১০ পূর্বাহ্ন

করোনায় লবণশিল্প খাতে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি

নিউজ রুম / ১১৭ ভিউ টাইম
আপডেট : বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০

ইমাম খাইর, কক্সবাজার,
করোনা পরিস্থিতির কারণে লবণশিল্প খাতে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেকটা বেকার সময় কাটাচ্ছে লবণ চাষীরা। উৎপাদিত লবণের দামও নেই। খোলা মাঠে পড়ে আছে রক্ত-ঘামে মিশ্রিত ‘সাদা সোনা’ নামের দেশীয় এই সম্পদ। আর দালাল ফঁড়িয়াদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে প্রান্তিক চাষীরা। নামেমাত্র দামে লবণ বিক্রি করেও মাসের পর মাস ঘুরাচ্ছে টাকা নিয়ে। সব মিলিয়ে বর্তমান লবণ শিল্প চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে।
বাংলাদেশে শুধুমাত্র সমগ্র কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম জেলার বাশঁখালী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলে লবণ উৎপাদন হয়। যা দিয়ে সারা দেশের লবণের চাহিদা পুরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুম। আবহাওয়া লবণ উৎপাদনে সর্ম্পূণ অনুকূলে আছে।
গত ৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার লবণ চাষী ১০.৩৫ লক্ষ মে:টন লবণ উৎপাদন করেছে। যা গত মৌসুমের এসময়ের চেয়ে ০.৬০ লক্ষ মে:টন বেশী। আবহাওয়ার এ অবস্থা বিরাজ করলে এবারও বাম্পার ফলন হবে।
কিন্তু বিশ্বজুড়ে আঘাত করা করোনাভাইরাসের কারণে দেশের বিভিন্ন শিল্প খাতের ন্যায় লবণশিল্প খাতও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। সারাদেশ লকডাউনের কারণে সরকার তথা স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক লবণ চাষীদের ঘরে অবস্থান করে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশী সময় দিতে হচ্ছে। কিন্তু মাঠে লবণ রেখে তা সঠিক ভাবে পালন করা সম্ভব হচ্ছে না।
আবার প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসরণ করার ফলে যানবাহন না চলায় বিভিন্ন গুদি/লবণ ক্রয়-বিক্রয় স্পটে লবণ ক্রেতা না আসতে পারায় ঠিকমত লবণ বিক্রয়ও সম্ভব হচ্ছেনা, উৎপাদিত লবণ মাঠেই পড়ে আছে। ফলে লবণ মাঠ গত ৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৮ লক্ষ মে:টন লবণ অবিক্রিত অবস্থায় অরক্ষিতভাবে পড়ে আছে।
যে কোন সময় কোন বড় ধরণের বৃষ্টিপাত বা ঘূর্ণিঝড় হলে মজুদকৃত লবণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই শংকার ফলে লবণ চাষীরা তাদের উৎপাদিত লবণ ক্রেতা পেলেই অনেক ক্ষতিতে অর্থাৎ উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় (উৎপাদন খরচ ২৪৫টাকা/প্রতিমণ, বর্তমান বাজার মুল্য ১৫১ টাকা= ২৪৫-১৫১= ৯৪ টাকা কমে বিক্রয় করে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক) কক্সবাজারের উপ-মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজ-১ এর আওয়াতায় ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে ক্ষুদ্র লবণ চাষীদের এই বিশাল ক্ষতির হাত হতে রক্ষা করার জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটেল হিসেবে উৎপাদিত লবণ সরক্ষণ করার জন্য আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
যদি এই ক্ষুদ্র লবণ চাষীদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা সম্ভব না হয় তাহলে এই ক্ষতির কারণে চাষীগ লবণ উৎপাদনে নিরুসাৎহিত হবে।
ফলে বিকল্প বিহিন দেশীয় ভোগ্য পণ্য আমদাণী নিভর হয়ে যাবে। তখন এই পণ্যের বাজার সাধারণ মানুষের হাতের নাগলে ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, লবণ চাষীদের উৎপাদিত লবণে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকার প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজ থেকে প্রণোদনা প্রদান করে দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কিছু অংশসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার চাষযোগ্য লবণজমির পরিমাণ ৬০ হাজার ৫৯৬ একর। গত বছর থেকে দাম না পাওয়ায় এ বছর বেশ কিছু জমিতে লবণচাষ হচ্ছে না।
এ বছর লবণের চাহিদা ১৮.৪৯ লক্ষ মে. টন। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮.৫০ মে. টন।
গত মৌসুমে ১৬ দশমিক ৫৭ লাখ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে লবণের উৎপাদন ছিল ১৮ দশমিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন। জেলায় বর্তমানে মাঠে লবণ উৎপাদনে জড়িত ৪৪ হাজারের বেশি চাষি পরিবার। নভেম্বর থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ছয় মাস লবণ উৎপাদন মৌসুম।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ