• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৭ অপরাহ্ন

চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন

নিউজ রুম / ৭৬ ভিউ টাইম
আপডেট : রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২০

ইমাম খাইর, কক্সবাজার
বর্তমান করোনা ভাইরাস আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষ। করোনা সচেতনতা তৈরী ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এ নিয়ে ঘুম নেই স্থানীয় প্রশাসনের। আর এ সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে চকরিয়ার মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চলছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
নদীর কিনারার বিস্তীর্ণ জনপদ ঘেঁষে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের কারণে বসতিগুলোও পড়েছে হুমকির মুখে। কমে যাচ্ছে নদী চরের খেতখামার। জীবন জীবিক নিয়ে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
বালুখেকোদের কাছে অসহায় মানুষগুলো পারছে না বাঁধা দিতে, না পারছে প্রতিবাদ করতে। কেউ ‘মৃদু প্রতিবাদ’ করলে তাকে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেয়।
বেশ কিছুদিন ধরে উপজেলার কাকারা ৩ নং ওয়ার্ডের লুটনী সংলগ্ন মাতামুহুরী পয়েন্ট থেকে হরদম বালু উত্তোল চলছে। ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাতভর তুলা হয় বালু। উত্তোলিত বালু পাহারা বসিয়ে ভোর সকালে ট্রাক, ডাম্পারে করে নিয়ে যাওয়া হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। অনেক বালু এখনো স্তুপ করে রাখা আছে।
প্রতিদিন সকাল ৯ টা নাগাদ দুই পয়েন্টে বালু উত্তোলন চলে।
পয়েন্ট দু’টির একটি হলো- কাকারা বটতলী থেকে সোজা দক্ষিণ। আরেক পয়েন্ট- দরগাহ রাস্তার মাথা থেকে দক্ষিণে সোজা রোডের শেষ সীমানায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা হয়। তবে, ভয়ে কেউ মুখ খোলতে না নারাজ।
গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ করা হবে না বলে আশ্বস্ত করলে এবার সামনে আসে ভুক্তভোগিরা। বলছে সব কথা। দিয়েছে অভিযোগ।
স্থানীয়দের অভিযোগ মতে, ফরিদুল আলম ও ড্রাইভার আবদুল মান্নান নামের দুই ব্যক্তি বালু উত্তোলনের সব কিছু দেখভাল করেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শ্রমিক, ট্রাক, ডাম্পার, ড্রেজারি মেশিন। যোগাযোগ রক্ষ করে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে। প্রশাসন বা ‘উপরিওয়ালার চাপ’ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ইউপি চেয়ারম্যান শওকত উসমানের। তাই পরিবেশ ও জনপদ হুমকিতে পড়লেও নিরাপদে চলছে বালু উত্তোলনের কাজ। এ পর্যন্ত তাদের ক্ষমতায় কেউ হাত দিতে পারে নি।
স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘গত ৭ এপ্রিল মাতামুহুরী নদীর লুটনী পয়েন্টে গোসল করতে নেমে ইসমা জন্নাত (১৩) আসমাউল হুসনা (১০) দুই ছাত্রীর করুণ মৃত্যু হয়েছে। মূলতঃ বালু উত্তোলনের কারণে নদীর কিনারায় সৃষ্ট গভীর গভীর গর্তে পড়ে এই দুর্ঘটনাটি ঘটলো।’
তিনি বলেন, ‘ফরিদুল আলম ও ড্রাইভার আবদুল মান্নান নামের দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগও করেছিলাম। কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে হয়তো এমন দুর্ঘটনাটি ঘটতো না।’
রবিবার (১২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে অভিযুক্ত ফরিদুল আলমের নিকট জানতে চাওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘দিনে ৫০ ট্রাক মতো বালু উত্তোলন হয়। দরদাম ঠিক হলে সেখান থেকে চাহিদা মতো বালি ডাম্পারযোগে গ্রাহকের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। চেয়ারম্যান শওকত উসমান ও তার এক ভাগ্নে সবকিছু দেখভাল করেন।’
ভাগ্নের নাম কি, বালু উত্তোলনের ইজারা নিয়েছেন কিনা? জানতে চাইলে বলেন, ‘এসব ব্যাপারে চেয়ারম্যান জানবেন।’ এতে আর কারা জড়িত? চানতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন ফরিদুল আলম। তবে, বালু উত্তোলন ও সিন্ডিকেটের স্বীকৃতির ‘ভয়েস রেকর্ড’ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
এ বিষয়ে কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত উসমানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘নিজেদের ছোটখাটো প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য বালু তুলছি। বিক্রির জন্য নয়।’
তবে, ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করেছেন শওকত উসমান।
পরক্ষণে বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগের লোকজন তাদের প্রয়োজনে বালু তুলছে। সেটি তাদের বিষয়। আমি যে বালু তুলছি তার কোন ডকুমেন্টস নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘ইজারাবিহীন কিনা দেখে বলতে হবে। তবে করোনার এই জরুরী মুহুর্তে শ্রমিক জড়ো করে বালু উত্তোলন, খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ