• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন

অভুক্ত গরিব, চাল চোর আর এন-৯৫ কাহিনি

নিউজ রুম / ৬৭ ভিউ টাইম
আপডেট : মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০
ত্রাণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের বিক্ষোভ।

চ্যানেল কক্স ডেস্ক:

ঘরে খাবার নেই। মানুষ না খেয়ে আছেন। তালিকায় ৮০ বছরের বৃদ্ধ আছেন, ৫০ বছরের মা আছেন, ২ বছরের শিশুও আছে। সংখ্যা কত, তা অজানা। ব্র্যাকের একটি জরিপ বলছে ১৪ শতাংশ। কেউ বলছেন দুই কোটি, কেউ কেউ বলছেন পাঁচ বা ছয় কোটি। সরকার বলছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। কেউ না খেয়ে থাকবে না। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র একটি টেলিভিশনের আলোচনায় বললেন, সিলেটে ত্রাণের চালের চাহিদা ৬০০ মেট্রিক টন। পেয়েছি ১০০ মেট্রিক টন।

তার মানে কত মানুষের খাবারের কষ্ট দূর করা গেছে, আর কত মানুষ খাবারের কষ্টে আছেন? সহজ অঙ্ক, যে কেউ করে দেখতে পারেন। চাহিদা অনুযায়ী ত্রাণ পাওয়ার প্রায় একই রকমের চিত্রের কথা জানালেন খুলনা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রও।

যারা ত্রাণের জন্যে হাত পাততে পারেন না, তাদের তালিকা করে খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে, সরকারের কর্তারা বারবার বলছেন। ‘তালিকা করা হবে’, ‘তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’— খাবার নেই এখন, আর তালিকা হবে তারপর খাবার পাবেন!

করোনাভাইরাস খেকে বাঁচার জন্যে ঘরে খাবার না থাকা মানুষদের ঘরে থাকতে হবে। ঘরে থাকতে হবে শুধু তাদের বাঁচার জন্যে নয়, সরকারের বড় কর্তা, আপনার-আমার সবার বাঁচার জন্যে। নিজেরা ঘরে থাকলেই চলবে না, তাদেরও ঘরে রাখতে হবে। না খেয়েও তাকে ঘরে থাকতে হবে!

যাদের ঘর নেই, তারা কোথায় থাকবেন? না না, ঘর নেই দেশে এখন এমন মানুষ আছে নাকি? সবারই ঘর আছে। এমন যুক্তি দেওয়া মানুষের সংখ্যা কম হলেও, তারা খুব সরব। এদের একেকজন কথা দিয়ে পাঁচ-ছয় কোটি মানুষের ক্ষুধা উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

কোথাও কোথাও অভুক্ত মানুষ খাবারের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। কোথাও রাস্তায় শুয়ে ত্রাণের ট্রাক আটকে দিয়েছেন। একটি জায়গায় ট্রাক আটকে খাবার নিয়ে গেছেন কয়েক শ অভুক্ত মানুষ। সরকারি ও গণমাধ্যমের ভাষায় নাম দেওয়া হয়েছে— ‘ত্রাণ লুট‘। পুলিশ তাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। গরিবের এই ত্রাণ লুটের চেয়ে, সংবাদমাধ্যমে বেশি স্থান দখল করে আছে ‘চাল চোর’। এদের দলীয় পরিচয়ও আছে। বরখাস্ত করা হয়েছে বেশ কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে।

আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত দলীয় নেতা-কর্মী, ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের চাল চুরির সংবাদে প্রথমে মানুষ মর্মাহত হয়েছে। তারপর হাসি-রসিকতার বিষয়ে পরিণত করেছে।

করোনা রোগীর চেয়ে চাল চোরের সংখ্যা বেশি, কয়েক কোটি অনাহারে থাকা মানুষের খাবার ‘চাল চুরি’ নিয়ে আমরা রসিকতা করছি। আর গরিব মানুষ কেন ঘরে থাকছে না, আহাজারি করছি।

২.

বাংলাদেশ অনেক কিছুতেই পৃথিবীতে ব্যতিক্রম। করোনা সংকট মোকাবিলাতেও। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাতেও ব্যবস্থাপনা ও ডাক্তারদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামের (পিপিই) সংকটের সংবাদ জানা যাচ্ছে। কিন্তু, পিপিই কেনা নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনা পৃথিবীর আর কোনো দেশে ঘটেছে, জানা যায়নি। পৃথিবীর আর কোনো দেশ এন-৯৫ মাস্কের প্যাকেটে অত্যন্ত নিম্নমানের মাস্ক ডাক্তারদের সরবরাহ করেছে, তাও জানা যায়নি। জানা যায়নি, আর কোন দেশ রেইনকোটকে পিপিই হিসেবে ডাক্তারদের দিয়েছে। কিন্তু, বাংলাদেশে ঘটনাগুলো ঘটছে।

কানাডা, ইংল্যান্ডসহ বহু উন্নত দেশ বলছে তাদের পিপিই’র সংকট আছে। বিশেষ ব্যবস্থায় তারা চীন থেকে পিপিই কিনছে। কানাডা চীনে গোডাউন ভাড়া করেছে। পিপিই-কিটসহ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট কিনে জমা করছে। বিশেষ উড়োজাহাজে করে কানাডায় নিয়ে আসছে। এটা ইউরোপ, উত্তর আমেরিকার পিপিই সংকটের চিত্র। ডাক্তার-নার্সরা পিপিই পাচ্ছেন না, এমন ঘটনা ঘটছে না। এ প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ডাক্তার গোলাম রাহাত খানের সঙ্গে। তিনি কোভিড-১৯ রোগীদের আইসিইউতে কাজ করছেন। বলছিলেন, ‘ইংল্যান্ডে পিপিই সংকট আছে। তবে বাংলাদেশের সংকটের সঙ্গে তা মেলানো যাবে না। এখানে আমরা মানসম্পন্ন পিপিই ব্যবহার করছি, এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহার করছি। একবার ব্যবহার করে ফেলে দিচ্ছি।’

বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে দেশে পিপিই’র কোনো সংকট নেই, পর্যাপ্ত মজুদ আছে। অথচ, প্রধানমন্ত্রী যখন নারায়ণগঞ্জের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললেন,তখন স্পষ্ট হয়ে গেল পিপিই’র সংকট কতটা তীব্র। সবচেয়ে বড়ভাবে যে বিষয়টি স্পষ্ট হলো, অসত্য তথ্য দিয়ে কথা বলছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ডাক্তারদের নিম্নমানের মাস্ক দেওয়া হয়েছে, এর উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানালেন, ডাক্তারদের এন-৯৫ মাস্ক আমেরিকা তৈরি করে। তারা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু, এন -৯৫ মানের মাস্ক অন্যান্য দেশ থেকে আনা হচ্ছে।

প্রথমত, এন-৯৫ মাস্ক একটি স্ট্যান্ডার্ড। এই মানের মাস্ক চীন, কোরিয়া, জাপান তৈরি করে। চীন এই মানের মাস্ক এখনো রপ্তানি করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক যেদিন বলেছেন এন-৯৫ মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না, তার একদিন পরেই গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম উড়োজাহাজ ভর্তি করে এন-৯৫ মাস্ক চীন থেকে নিয়ে এসেছেন।

অথচ পাওয়া যাচ্ছে না বলে এন-৯৫ মাস্কের নামে অত্যন্ত নিম্নমানের মাস্ক ডাক্তারদের দেওয়া হয়েছে। এই মাস্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে নানা গুঞ্জন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একটি কোম্পানি আমদানির নামে দেশে নিম্নমানের মাস্ক তৈরি করে এন-৯৫ মাস্কের প্যাকেটে সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, ‘জেএমআই গ্রুপ নামের প্রতিষ্ঠানটি ‘এন-৯৫’র প্যাকেটে সাধারণ মাস্ক দিয়েছে ভুলবশত। এজন্য কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পক্ষ থেকে জেএমআইকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে।’ (ইত্তেফাক, ১৮ এপ্রিল ২০২০)।

এখানে দুটি বিষয় লক্ষণীয়।

এক. ইত্তেফাকের রিপোর্টে বলা হয়েছে ‘জেএমআই’ জামায়াতের প্রতিষ্ঠান।

এই তথ্য সত্যি হলে, জামায়াতের প্রতিষ্ঠানের থেকে পিপিই-মাস্ক কিনছে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

দুই. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক বলছেন ‘জেএমআই ভুলবশত’ এন-৯৫ মাস্কের প্যাকেটে সাধারণ মাস্ক দিয়েছে।

প্রশ্ন হলো, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘জালিয়াতি’ বা ‘প্রতারণা’ করে নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করলো, না ‘ভুলবশত’ করলো, তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানবেন কোন প্রক্রিয়ায়? নিশ্চিতই বা হলেন কীভাবে? কোনো তদন্ত তো করেননি। কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠিয়েই নিশ্চিত হয়ে গেলেন?

তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে আজ। কমিটিতে আছেন— স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. সাঈদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল-১ শাখার উপপরিচালক মো. আমিনুর রহমান ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব (ক্রয় ও সংগ্রহ) হাসান মাহমুদ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক যেখানে ‘ভুলবশত’ বলছেন, সেখানে তার নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা যে তদন্ত করবেন, তা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে?

গত ২০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে আবারও পিপিই, এন-৯৫ মাস্ক প্রসঙ্গ এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি আমাদের মন্ত্রীর কাছে কিছু ছবি পাঠিয়েছি। যারা সাপ্লাই দেয় তারা কি সঠিকভাবে সঠিক জিনিসটি দিচ্ছে কি না। মহানগর হাসপাতালে কিছু জিনিস গেছে পিপিই’র। নাম দিচ্ছে বেশ ভালো। কিন্তু জিনিসগুলো বোধ হয় ঠিকমতো যায়নি। এটা একটু আপনাদের খোঁজ করে দেখা উচিত। মন্ত্রীর কাছে এটা পাঠিয়ে দিয়েছি যাচাই করে দেখার জন্যে।…..এন-৯৫ লেখা বক্স, ভেতরে যে জিনিসটা সেটা সঠিক থাকে কি না, এটা একটু আপনাদের দেখা দরকার। এটায় একটু নজর দেন। লেখা আছে এন-৯৫, কিন্তু ভেতরে জিনিস সব সময় সঠিকটা যাচ্ছে না।’

‘কেউ যদি এরকম কিছু করে থাকে বা সাপ্লায়ার কে? মহানগর হাসপাতালে এটা গেছে। বাবু বাজারে যে হাসপাতালটা আমাদের, ওটা তো করোনাভাইরাসের জন্যে ডেডিকেটেড হাসপাতাল।’

‘এরকম যদি কিছু কিছু জায়গায় হয়, এটা তো ঠিক না। আপনারা যাদেরকে এনগেজ করেন, যারা ব্যবসাটা নেয় বা যারা সাপ্লাই দেয়, তারা সঠিকটা দিল কি না। বক্স তো ঠিক আছে। ভেতরে জিনিস ঠিক আছে কি না। আমার মনে হয় নজরদারিটা বাড়ানো দরকার। যিনি রিসিভ করবেন, উনি যেন দেখে-শুনে রিসিভ করেন।’

এই মহানগর হাসপাতালের ডাক্তারদের দেওয়া নিম্নমানের মাস্ক-হ্যান্ড গ্লাভসের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল।

প্রধানমন্ত্রীর কথার মাঝে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিএমএসডির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোহাম্মদ শহীদউল্লাহ কিছু কথা বলেন। তিনি অন্যান্য কথার সঙ্গে এও বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে চাহিদা মেটানোর জন্যে আমাদের কিছু ভুল হয়ে থাকতে পারে।’

এরপর তিনি করোনা ব্রিফিংয়ে জানালেন, ‘দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশীয় কোনো এক কোম্পানির মাস্ক নিয়ে বিভ্রান্ত, বানোয়াট এবং অসত্য তথ্য আমাদের মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে জড়িয়ে প্রকাশ হচ্ছে। আমরা এর আগে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রেস রিলিজ দিয়েছি এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার জন্য। এ ধরনের অসত্য তথ্য যদি কেউ প্রকাশ করে থাকেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।….মাস্কের মান নির্ধারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি কমিটি রয়েছে। কমিটি মাস্কের মান নির্ধারণের পরই আমরা মাস্কগুলো ক্রয় করে থাকি। যার কারণে এগুলো নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই।’

তো কমিটি যদি যাচাই করে, তবে ‘ভুলবশত’ নিম্নমানের মাস্ক ডাক্তারদের কাছে পাঠালেন কেন?

যে গুঞ্জন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছিল, প্রধানমন্ত্রীও তো সেই ঘটনাটির কথা বললেন। তাহলে এসব সংবাদ ভিত্তিহীন বা বানোয়াট বা অসত্য, তা বলা যায়?

পিপিই কিনতে সরকারের যে প্রায় ১৭৬ কোটি টাকার তথ্য জানালেন, তার মধ্যে তো এন-৯৫’র প্যাকেটে নিম্নমানের মাস্কের টাকাও অন্তর্ভুক্ত। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে নিশ্চয়ই এন-৯৫ মাস্কের মূল্যই দেওয়া হয়েছে? ক্রয়ের যাবতীয় তথ্য ওয়েবসাইটে দিয়ে দিলে তো অনেক প্রশ্নের অবসান ঘটে। তা কী করবেন?

করোনায় মৃত্যুবরণকারী ডাক্তার মঈন উদ্দিনের ভায়রা যিনি নিজেও ডাক্তার, তিনি যে অভিযোগ করলেন, পিপিই বলে তাদের যা দেওয়া হয়েছে তা আসলে রেইনকোট। চীনের যে কোম্পানি থেকে কেনা হয়েছে, তারা এগুলো রেইনকোট হিসেবেই বিক্রি করে, পিপিই হিসেবে নয়। তিনি তো এ অভিযোগ করেছেন প্রকাশ্যে, টেলিভিশনে। তদন্ত করে দেখেছেন? এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিটির ভূমিকা কী ছিল? তদন্ত করেছেন? তা না করে, সংবাদ প্রকাশ করলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন!

নিম্নমানের মাস্কের অভিযোগ তো প্রধানমন্ত্রীও করলেন। তো একজন ডাক্তারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলো কেন? তার অপরাধ কী? নিম্নমানের মাস্ক দেওয়ায় তিনি স্বাস্থ্য সচিবের সমালোচনা করেছেন। যারা নিম্নমানের মাস্ক দিল, তাদের কাজটি ‘ভুলবশত’, আর যিনি সেই নিম্নমানের মাস্ক পেয়ে সমালোচনা করলেন সেটা ‘অপরাধ’? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতির সিন্ডিকেটের কথা কে না জানেন? ঠিকাদারের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী মেডিকেল সরঞ্জাম কেনা, অপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনা, বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে কেনার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ কত সংবাদ গত কয়েক বছরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বদরুদ্দৌজা বাবুর মাছরাঙ্গা টেলিভিশনে প্রচারিত রিপোর্টগুলো তো এখনো ইউটিউবে আছে। 

তদন্ত করে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন? সেই মন্ত্রণালয়ের সচিবের সমালোচনা করলেই কারণ দর্শানোর নোটিশ?

এন-৯৫ মাস্কের প্যাকেটে নিম্মমানের মাস্ক ঢুকে যাওয়ায় ধরে নেওয়া যায়, আসল এন-৯৫ মাস্ক কেনা হয়েছে। সেগুলো কোথায় গেল? তাহলে কেন বলা হলো যে, এন-৯৫ মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না? এত রকমের কথার মধ্যে সত্য কোনটা? এখন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার কার বিরুদ্ধে? সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে? প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা বা জালিয়াতিকে ‘ভুলবশত’ বলে যিনি বা যারা জাস্টিফাই করছেন, তার বা তাদের বিরুদ্ধে? মাস্ক-পিপিই নিম্নমানের, একথা যিনি বা যারা বলছেন তাদের বিরুদ্ধে? সেই তথ্য যারা প্রচার করছেন, সেই গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে? যারা অসত্য তথ্য সরবরাহ করছেন, তাদের বিষয় কে দেখবেন?

করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারদের থাকার জন্যে প্রস্তাবিত চার তারকা, পাঁচ তারকা হোটেলের নাম প্রকাশ করা হলো। পৃথিবীর বহু দেশ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের এমন সিদ্ধান্ত সর্বমহলে প্রশংসিত হলো। দুইদিন পর দ্য ডেইলি স্টার সংবাদ প্রকাশ করে জানালো, এমন কোনো ঘটনা হোটেল কর্তৃপক্ষ জানেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হোটেলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। করছি, করব পর্যায়ে আছে।

এক সপ্তাহ পর একটি টেলিভিশনের এ বিষয়ক প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, ‘আপনারা ভাই অন্য কাজ করেন তো, ডাক্তার কোথায় থাকে এটা দেখার দরকার নাই। মানুষ রাস্তায় বেরোবে না ওইগুলো দেখেন। ডাক্তারের বিষয় আমরা দেখছি।’

প্রায় ১৫ দিন পরেও হোটেল বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। তাহলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রস্তাবিত হোটেলের নাম প্রকাশ করলেন কেন?

কাজ না করে কথা দিয়ে সব সমস্যার সমাধান ও পাশ কাটানোর রেওয়াজ, এই কঠিন সময়েও চলতেই থাকবে?

৩.

ভুল আর অপরাধ, দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। আপনারা যাকে ‘ভুলবশত’ বলছেন, তার পরিণতিতে ডাক্তাররা আক্রান্ত হচ্ছেন। একজন ডাক্তারের মারা যাওয়ার দায়ও এড়ানো যাচ্ছে না। সেদিকে নিরব থেকে তথ্য যারা প্রকাশ করছেন, যারা সমালোচনা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন-নিতে চাইছেন। মানুষ না জানলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?

সূত্র: ডেইলি স্টার।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ