• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৪৫ অপরাহ্ন

ইমিগ্রেশন পুলিশের এসআই বরখাস্ত, সোমবার দেশে ফেরার কথা সেই পাইলটের

নিউজ রুম / ৪৭৩ ভিউ টাইম
আপডেট : রবিবার, ৯ জুন, ২০১৯

অনলাইন :  সিনিয়র পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ এর পাসপোর্ট না দেখেই কাতার যাওয়ার জন্য বর্হিগমন ছাড়পত্র দেয়ার অভিযোগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের উপ-পরিদর্শক কামরুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শনিবার ইমিগ্রেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ) মো. ইসমাইল হোসেন নয়া দিগন্তকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্রীমলাইনার উড়োজাহাজের (বোয়িং-৭৮৭) অন্যতম সিনিয়র পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ এর পাসপোর্ট কেলেংকারীর নেপথ্যে কি রহস্য থাকতে পারে না কি নিছক ভুলক্রমেই ঘটনাটি ঘটে গেছে তা উদঘাটনে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান শুরু করেছে। পাইলট ফজল মাহমুদ ইমিগ্রেশনের কাউন্টার থেকে শুরু করে যেসব (বর্হিগমন) পথ ব্যবহার করে উড়োজাহাজে গিয়ে বসেছিলেন সেই সব এলাকার ভিডিও ফুটেজ এবং ওই দিনের কর্তব্যরতদের জবাববন্দীও তদন্তকারী সংস্থার সদস্যরা সংগ্রহ করছেন বলে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।

এদিকে ভিভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনার তালিকা থেকে বাদ পড়ে কাতারের রাজধানী দোহার হোটেলে অবস্থান করা পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ সোমবার ভোরে ড্রীমলাইনার ফ্লাইটটি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি দেশে আসার পর বিমানবন্দরে তদন্ত কমিটির জেরার মুখে পড়তে পারেন বলে জানা গেছে।

শনিবার সন্ধা সাড়ে ৭ টায় হজরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ) মো. ইসমাইল হোসেন নয়া দিগন্তকে সাব ইন্সপেক্টর কামরুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানিয়ে বলেন, ইমিগ্রেশনের ওইদিনের কর্তব্যরত সাব ইন্সপেক্টর কামরুজ্জামান পাসপোর্টটা দেখাানোর জন্য ক্রুকে বলেছিলেন। সে বললো (পাইলট) এটা (পাসপোর্ট) ব্যাগে আছে। পরে ক্রুও দেননি, আর সে-ও পাসপোর্ট দেখার বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। তারপরও আমরা বিষয়টাকে আমলে নিয়ে তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
জেনারেল ডিক্লারেশন (জিডি) ফরম সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ক্রু এবং পাইলট যারা, তাদের ইমিগ্রেশন কিন্তু পাসপোর্ট দিয়ে হয় না। তাদের ইমিগ্রেশন করানোর জন্য এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে একটা (জেনারেল ডিক্লারেশন) চিঠি দেন। ওটা হচ্ছে ক্রু-পাইলটদের ট্রাভেল ডকুমেন্টস। ওখানে তার ক্রু আইডিসহ ট্রাভেল সংক্রান্ত সমস্ত ডকুমন্টে থাকে। আমাদের ইমিগ্রেশন অফিসার সে তার ক্রু আইডিটা ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে ইনপুট দিলে সকল তথ্য চলে আসে। সেটার বিপরীতে ইমিগ্রেশন করেছেন, প্লাস তার পাসপোর্টটাও চেয়েছেন। উনি বলছেন, ব্যাগে আছে। পরবর্তীতে উনিও দেখেননি আর এটাও নিশ্চিত করেননি। যেহেতু উনি সিনিয়র পাইলট। সব সময় আসা যাওয়া করে, চিনে ! কিন্তু তার (ইমিগ্রেশন কর্মকতা) উচিত ছিলো পাসপোর্টটা দেখা। এটা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। দুজনেরই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে আর কি- যোগ করেন তিনি।

দুটি তদন্ত কমিটি কার্যক্রম শুরু করেছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সাথে কথা হয়নি। আমার সিনিয়র স্যারদের সাথে হলেও হতে পারে। গতমাসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আরেক পাইলট ক্যাপ্টেন রেজওয়ান তার নিজের পাসপোর্ট না নিয়ে তার স্ত্রীর পাসপোর্ট নিয়ে ফ্লাইটে চলে গিয়েছিলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না, না এটা আমার নলেজে নাই।

উল্লেখ্য গত ৫ জুন পাসপোর্ট ছাড়াই নতুন প্রজন্মের অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ (বোয়িং-৭৮৭) ড্রীমলাইনার নিয়ে কাতারে চলে যান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। তিনি বিদেশ সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনার জন্য ৫ জুন দোহায় গিয়েছিলেন। কিন্তু দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার আগেই তার মনে পড়ে, তিনি তার পাসপোর্ট বিমানের অপারেশন বিভাগের নিজের লকারের মধ্যে তালাবদ্ধ করে এসেছেন। পরে তিনি ইমিগ্রেশন পয়েন্টে না গিয়ে বিমানের স্টেশনের ম্যানেজারের সহায়তায় এয়ারপোর্টের ট্রানজিট পয়েন্টের একটি হোটেলে অবস্থান নেন। পরদিন ঢাকা থেকে তার প্সাপোর্ট রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে পাঠানো হলে তারপর তিনি স্বাভাবিকভাবে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে দোহায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট-কেবিন ক্রুদের জন্য নিধারিত হোটেলে গিয়ে উঠেন। এ ঘটনার পর ঢাকায় স্বরাষ্ট্র ও মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

শনিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর বলাকা ভবন সুত্রে জানা গেছে, ভিভিআইপি ফ্লাইট থেকে বিমান কর্তৃপক্ষ পাইলট ফজল মাহমুদকে বাদ দিয়ে শুক্রবার রাতের ফ্লাইটে বিমানের আরেক সিনিয়র পাইলট (ট্রেনিং) আমিনুল ইসলামকে দোহায় পাঠানো হয়।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে দোহা থেকে ছেড়ে আসা ভিভিআইপি ফ্লাইটটি নিরাপদে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। রোববার রাতে ঢাকা থেকে বোয়িং-৭৮৭ ফ্লাইটটি দোহার উদ্দেশ্য ছেড়ে যাবে। পরদিন সোমবার সকালের ফিরতি ফ্লাইট আলোচিত সমালোচিত পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ এর নেতৃত্বে ঢাকার পথে উড়াল দেবে বলে শনিবার পর্যন্ত বিমানের শিডিউল তৈরী রয়েছে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ