• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩০ অপরাহ্ন

আম্পান এখন নিম্নচাপ, ময়মনসিংহ হয়ে যাবে মেঘালয় l সি কক্স নিউজ

নিউজ রুম / ১২ ভিউ টাইম
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০

ঢাকা: দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পান তাণ্ডব চালানোর পর রাতভর বৃষ্টি ঝরিয়ে শান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ মে) সকাল ৯টার দিকে এটি পরিণত হয়েছে নিম্নচাপে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, নিম্নচাপটি এখন পাবনা অঞ্চলে আছে। এটি ধীরে ধীরে উত্তর পূর্ব দিকে এগিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের উপর দিয়ে বিকেল নাগাদ মেঘালয় পৌঁছাবে। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। শুক্রবার নাগাদ অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত হবে। পরিস্থিতি উন্নতি হবে আগামী সপ্তাহের শুরুতে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, এটি ধীরে ধীরে উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। এ সময় প্রথমে গভীর নিম্নচাপ, পরবর্তীতে নিম্নচাপ আকারে মেঘালয় পৌঁছাবে। সে সময় বাতাসে গতিবেগ থাকবে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার। নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘালয় ও আসামের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হবে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাত বাড়ায় দেশের প্রধান প্রধান নদ -নদীগুলোতে পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আসাম, মেঘালয়ে বর্ষণ বাড়লে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানির সমতল আরও বাড়বে।

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে গত ১৪ মে সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ১৬ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে রূপ নিয়ে ১৮ মে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়। সুপার সাইক্লোনের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ২২০ কিলোমিটারের বেশি হয়। আম্পানের কেন্দ্রে যা ২৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে যায়। তবে ১৯ মে শক্তি হারিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসে এটি।বুধবার (২০ মে) দুপুরে এটি পশ্চিমবঙ্গের দীঘা ও সাগরদ্বীপে আঘাত হানে, যখন এটির গতি ছিল ১৭০ কিমি পর্যন্ত। এরপর সুন্দরবন হয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা হয়ে কলকাতাতেও সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ আঘাত হানে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে আম্পান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মেহেরপুর হয়ে। সে সময় বাতাসের গতিবেগ ১৩০ কিমি পর্যন্ত উঠে যায়।

সিডরের গতি নিয়ে এটি উপকূলের দিকে এগিয়ে আসলেও আঘাত হানে ২০০৯ সালের আইলার মতো। আইলাও একই পথে আঘাত হেনেছিল। সে সময়ও জোয়ার ছিল।

বলা হচ্ছে-সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতো। তবে বাংলাদেশে অন্তত পাঁচজন এবং পশ্চিমবঙ্গে অন্তত দশ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে খবর মিলেছে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এ শতাব্দীর প্রথম কোনো সুপার সাইক্লোন। আর ভারত সাগরে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন।

আমাদের উপকূলের জেলাগুলোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা, বরগুনাসহ খুলনা অঞ্চল এবং নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালীর বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি, পরিবেশ, প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করায় এবং কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কারণে প্রাণহানি কম হয়েছে।

আম্পান সরাসরি পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানায় ভারতের রাজ্যটির বেশ কিছু জেলা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, উত্তর চব্বিশ পরগণা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা (বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী জেলা) ধ্বংস হয়ে গেছে। কারো ভবিষ্যদ্বাণী মিলল না। পুরোটা বাংলার উপর দিয়ে গেলো। এলাকার পর এলাকা ধ্বংস। পাথরপ্রতিমা, নামখানা, কাকদ্বীপ, কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর— সব জায়গায় ধ্বংসের ছবি। রাজারহাট, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, গোসাবা, হাবড়া— সব জায়গাই বিপর্যস্ত। ১৭৩৭ সালে এমন ভয়ঙ্কর ঝড় হয়েছিল। তখন অনেক মানুষের জীবনহানি হয়েছিল। এ বার লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার ফলে জীবনহানি অনেকটা কম। ১০-১২ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে আম্পান চলে যাওয়ায় সমুদ্রবন্দরগুলো থেকে মহাবিপদ সংকেতও নামিয়ে ফেলা হয়েছে।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে চার বন্দরেই ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় এলকায় ৪০ থেকে ৫০ কিমি বেগে ঝড় বয়ে যাওয়ার আভাস রয়েছে। একইসঙ্গে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৬ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের কথাও বলা হয়েছে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ