• সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন

সাংবাদিককে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলেন মাদকের সেই এডি

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৭৩ ভিউ টাইম
আপডেট : রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

কক্সবাজারের এক সাংবাদিককে ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ হওয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (এডি) এ.কে.এম দিদারুল আলমকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ করা হয়েছে। 

রবিবার (১৬ মার্চ) বিকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন, অর্থ ও পরিকল্পনা) মো. আবদুল ওয়াদুদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়, এ.কে.এম দিদারুল আলমকে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত রংপুরে সংযুক্ত করা হলো। ফলে বর্তমান কর্মস্থল হতে তিনি তাৎক্ষণিক অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন এবং আগামী ১৮ মার্চের মধ্যে বদলিকৃত স্থানে যোগদান করবেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধান কার্যালযের পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) মো. মাসুদ হোসেন বলেন, প্রাথমিক তদন্তের প্রেক্ষিতে এডি এ.কে.এম দিদারুল আলমকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ (তাৎক্ষণিক অবমুক্ত) করা হয়েছে। আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে। পরিবর্তীতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, সোমবার (৯ মার্চ) সকালে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজার বাংলাবাজার এলাকার এক সিএনজি চালককে লিংকরোড হতে ধরে নিয়ে যায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টিম। চালকের বউয়ের অনুরোধে মাদকটিমকে ফোন করে তাকে আটকের বিষয়ে জানতে চান সময়ের কন্ঠস্বরের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বিডি২৪ লাইভের কক্সবাজার প্রতিনিধি ও স্থানীয় দৈনিক মেহেদীর অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর শাহীন মাহমুদ রাসেল। সাংবাদিক ফোন করায় সিএনজি চালককে ইয়াবা দিয়ে চালান দেয়া হয়। এসময় সাংবাদিকদের নিয়ে বিষোদাগার করেন তিনি। সন্ধ্যার পর এ বিষয়ে আবারো ফোন করা হলে মাদকের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) এ.কে.এম দিদারুল আলম অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন সাংবাদিক শাহীন রাসেলের সাথে। এর দু’ঘন্টার মাথায় পেটে ইয়াবাসহ এক যুবককে এনে তার পেটের ইয়াবা সাংবাদিক রাসেলের বলে স্বীকারোক্তি আদায়ের বিষয়টি ফেসবুক টিভিতে প্রচার করা হয়। এরপর সেই যুবকের সাথে মাদক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয় সাংবাদিক রাসেলকে।

বিষয়টি ফেসবুকে দেখে জেলায় কর্মরত পেশাদার একদল সাংবাদিক রাতেই মাদক কার্যালয়ে যান। তারা এডি দিদারের রুমে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে, আটক তরুণকে সাংবাদিকদের সামনে আনা হয়। তখন আটক যুবক সাংবাদিক শাহীন মাহমুদ রাসেলের পুরো নাম কিংবা তার বাড়ি ও পরিচয় ঠিকমতো দিতে পারেননি। সাংবাদিক শাহীনের সঙ্গে তার কখনো কথাও হয়নি বলে স্বীকার করেন যুবক। তাহলে, লাইভে সাংবাদিক শাহীনের ইয়াবার বাহক কেন বলা হয়েছে, এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি ঐ যুবক।

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত এডি এ.কে.এম দিদারুল আলমও সদুত্তর দিতে পারেনি। কিন্তু ওই যুবকের নামে করা মাদকের মামলার এজাহারের বডিতে শাহীন মাহমুদ রাসেলের সঠিক পরিচয় উল্লেখ করে ফেসবুক টিভিতে প্রচার করা কথা-ই লেখা হয়।

এঘটনায় ১০ মার্চ দুপুরে কর্মরত সাংবাদিকরা এডির বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। তাকে কক্সবাজার হতে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করা হয়। পুরো বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে মাদকের চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাহিদ হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে চারজনের টিম মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম চালান। তদন্ত দল অভিযুক্ত এডি দিদারুল, তার টিমের অন্যান্য সদস্য, ভুক্তভোগী সাংবাদিক শাহীন মাহমুদ রাসেল এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্যগ্রহণ করে ও লিখিত জবানবন্দি নেয়। একই সঙ্গে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ভিডিও ও অন্যান্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করা হয়। যা পরে ওই রাতেই ই-মেইল যোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়।

এরপর ১৫ মার্চ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের একটি তদন্তটিম কক্সবাজার এসে ভুক্তভোগী সাংবাদিক, অভিযুক্ত এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে প্রমাণাধি পর্যবেক্ষণ করার পর তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেছেন। পরিবর্তীতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে, নিশ্চিত করে প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) মো. মাসুদ হোসেন। ###


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ