কক্সবাজারের ঈদগাঁওর একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রির দোকানে চাকরি করে সংসার চালান শেখ আহমেদ (২৮)। পার্বত্য নাইক্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের হলদ্যাশিয়া এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে শেখ আহমদের মা-বোনকে নিয়ে সংসার। যুবতী বোনের বিয়ের খরচ মেটাতে নিরুপায় আহমেদ তাদের বসবাস করা বাড়িভিটার সামনের খালি অংশের সাড়ে নয় শতক জমি একই এলাকার বিত্ত ও প্রভাবশালী নুরুল ইসলাম (৫২) নামের প্রতিবেশীর কাছে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিক্রি করেন। প্রত্যাশা ছিল সেখানে নুরুল ইসলাম বাড়ি করলেও শেখ আহমদ ও অন্য পরিবারগুলো যাতায়াতে সমস্যা হবে না।
কিন্তু জমিটি দখলে নিয়ে বছর পার না হতেই টিলাশ্রেণীর ভিটার তার কেনা সমুদয় অংশ স্কেভেটর দিয়ে পুকুরে রূপান্তর করে ফেলেছেন নুরুল ইসলাম। এতে চরম ঝুঁকিতে পড়েছেন শেখ আহমেদসহ আরো পাঁচটি বাড়িতে বসবাসকারিরা। বৃষ্টি শুরু হবার পর বানানো পুকুরে ঘরগুলো ধ্বসে পড়ার শংকায় দিনাতিপাত করছেন। এ অবস্থা দেখে স্থানীয়রা বলছেন, বিয়ের সমস্যা সমাধানে ভিটে বিক্রি করে ‘খাল কেটে কুমির এনেছে’ শেখ আহমেদ।
এ অবস্থা হতে পরিত্রাণের আশায় চলতি মাসের ৯ তারিখ বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ বরাবর ভিটের জমি ক্রেতা নুরুল ইসলামের (পিতা-মৃত নুর আহমেদ) বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন শেখ আহমেদ। সেখানে স্কেলেটর দ্বারা পাহাড়ী ভিটা খনন করে চারপাশের ঘরবাড়ির ক্ষয়-ক্ষতি করার অভিযোগ করা হয়।
শেখ আহমেদ লিখেন, আমার ভিটেটি পাহাড়ী টিলা। চারপাশে আমারসহ ৫-৬টি বসতবাড়ি রয়েছে। বোনের বিয়ের ব্যয় মেটাতে নিরূপায় হয়ে প্রতিবেশী নুরুল ইসলামকে সাড়ে ২৭ কড়া ভিটের জমি বিক্রি করেছিলাম। কেনার এক বছরের মাথায় তিনি আইনের কোনো নিয়ম-কানুন না মেনে টিলাটি কেটে পুকুরে পরিণত করে। এসময় আশেপাশের ঘরবাড়িতে যাতায়াতকারী মানুষের চলাচলের রাস্তাও খনন করে ফেলা হয়েছে। এতে বাসাবাড়ির মানুষগুলোর নিয়মিত চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এমনটি করার কারণ জানতে চাইলে উল্টো হুমকি-ধমকি দেয় ‘আমাকে কি করতে পারবে?’ বলে ভয় দেখান।
অভিযোগের বিষয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, আমার বসতঘর আছে। আমার বড় মেয়েকে এখানে ঘর করে দিতে মাটি কিছুটা কেটেছি। পুকুর করিনি।
সরকারের অনুমতি ব্যতিরেখে এভাবে পাহাড় বা টিলাকে কাটা আইনসিদ্ধ কি না? আর একটি পরিবারের অসহায়ত্বে ভিটার অংশ কিনে একাধিক পরিবারের চলাচলের পথ খনন করা কতটুতু যুক্তিযুক্ত-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ওটা আবার ভরাট করে দিয়েছি।
বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শোভন কুমার সাহা বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি কসাই। আমরা টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বাঁশ-গাছ দিয়ে ওয়াল বানিয়ে নির্দেশনা দিয়ে এসেছিল। এরপর কি হয়েছে জানি না। মাটি কাটার সময় জানলে তা রদ করা যেত।
নাইক্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, যদি এভাবে হয়ে থাকে- বিষয়টি অমানবিক। তবে, এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ আমার দপ্তরে আসেনি। এরপরও বুধবার ঘটনাস্থলে যাবো।