কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ে নির্মিতব্য প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ও তার স্বামীর যোগসাজশে অনিয়মের মহোৎসব চলছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
সরেজমিনে জানা যায়, ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম বোয়ালখালী ফৌজুল করিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় দুই কোটি ব্যয়ে এলজিইডির অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন।
যার নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সে ভিলেন বিল্ডার। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়ীত্বরত আবদুল্লাহ আল নাঈম ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা খালেছা আক্তার যোগসাজশে তার স্বামী রেজাউল করিম অতি নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী বালি, কংক্রিট, ইট ও অন্যান্য উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার করে আসছে।যা নিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদও করে। কিন্তু এ সমস্ত নির্মাণ সামগ্রী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সরবরাহ না করে সুক্ষ্মভাবে অনিয়ম চালিয়ে যেতে প্রধান শিক্ষিকার স্বামী রেজাউল করিমকে দিয়ে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টরা। এ সুযোগে নিয়মিত অতি নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার দেখে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
গত শনিবার সরেজমিনে অতি নিম্নমানের পাহাড়ী লাল বালি,অতি নিম্ন মানের ইট ও কংক্রিটের স্তূপ দেখা যায়। এসময় স্থানীয় আবু তাহেরের নেতৃত্বে লোকজন গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে প্রধান শিক্ষিকার স্বামীর উপস্থিতিতে অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেন। এ অব্যাহত অনিয়মের জন্য তারা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান , এলজিইডির প্রকৌশলী, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ও তার স্বামীর যোগসাজশকে দায়ী করেন। এসময় দেখা যায় জনরোষের ভয়ে পাহাড়ি দুই নম্বর লাল বালি অন্য বালি দিয়ে আড়াল করে রেখেছে । এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে না পেয়ে তার স্বামী রেজাউল করিমের সাথে কথা হলে তিনি বালি,ইটসহ নির্মাণ সামগ্রী তিনি সরবরাহ করেন স্বীকার করেন। এসময় স্তুপকৃত বালি,ইট, কংক্রিট এত নিম্নমানের কেন জানতে চাইলে তিনি এসব এক নম্বর দাবি করে ঠিকাদার এবং দায়ীত্বে থাকা প্রকৌশলীর সাথে কথা বলার জন্য মোবাইল নাম্বার দেন। এসময় উপস্থিত স্থানীয় লোকজন তার কথার প্রতিবাদ করে বলেন,সে তাদের সাথে যোগসাজশ করে এসব নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করে কাজ চালাচ্ছেন । এক পর্যায়ে রেজাউল করিম অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ২/১ দিন পূর্বে এক লোককে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছেন বলে গণমাধ্যমে কর্মীদের নিকট স্বীকার করেন। এসময় নির্মাণ কাজে জড়িত শ্রমিকরাও তাদেরকে নিয়মিত প্রাপ্য মজুরী দেননা বলে দাবি করেন।যার কারণে শ্রমিকরা নিয়মিত কাজে আসতে চাইনা জানান। এসময় স্থানীয়রা জানান,ঠিকাদার, প্রকৌশলী কেউ কাজ দেখতে আসেন না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও তার স্বামীর যেমন ইচ্ছে তেমন কাজ করছেন শিডিউলের তোয়াক্কা না করে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল আবদুল্লাহ নাঈমের সাথে কথা হলে জানান,এসব নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের দায়িত্ব ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের স্বামী রেজাউল করিম নিয়েছেন স্বীকার করে বলেন,তিনি শিডিউল মতে এসব সামগ্রী সরবরাহের টাকা নেয়ার পরও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করাতে তিনি বেকায়দায় রয়েছেন।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মোঃ: সাকিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান, কাজের মান ঠিক রাখার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার স্বামী রেজাউল করিমকে এসব সামগ্রী সরবরাহে শিডিউল মত টাকা নেয়ার পরও নিম্নমানের বালি সরবরাহের কথা স্বীকার করলেও অন্য অভিযোগ গুলো এড়িয়ে যান।
বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষিকা (ভারপ্রাপ্ত) খালেছা আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি অতি সম্প্রতি কিছু বালি আর ইট নিম্নমানের স্বীকার করলেও এসবের সরবরাহকারি তার স্বামী এটা অস্বীকার করে এসব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করেন জানান।তার স্বামীই এসবরাহ করেন জানালে তিনি অস্বীকার করে ঠিকাদারকে এসব সামগ্রী কোথা থেকে আনবেন তার স্বামী তাই মাত্র দেখিয়ে দেন দাবি করে এখন থেকে এরকম হবেনা বলে নিয়মিত দেখতে যেতে বলেন।
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলামের মোবাইল কল দিলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। অপরদিকে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইলে বারবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশলী কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে নয়ছয় করে প্রধান শিক্ষিকার স্বামীকে অনিয়মে ব্যবহার করছে। তারা অবিলম্বে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক উক্ত অনিয়মে ভরা কাজ গুলো চিহ্নিত করে পুনরায় যথাযথভাবে করার দাবি জানান।