• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫৫ অপরাহ্ন

৩ ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার এবং অপহরণ চক্রের মূলহোতাসহ দুইজন গ্রেফতার

ইব্রাহিম খলিল / ২৮ ভিউ টাইম
আপডেট : শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩

গত ২৮ এপ্রিল ২০২৩ খ্রিঃ কক্সবাজার চৌফলদন্ডী উত্তরপাড়ার মোঃ আলমের ছেলে জমির হোসেন রুবেল (৩৫) টেকনাফে পাত্রী দেখতে গিয়ে টেকনাফ উপজেলাধীন রাজারছড়া এলাকা হতে তার দুই বন্ধু ইমরান ও ইউসুফসহ অস্ত্রের মুখে অপহরণের শিকার হয়। পরদিন রুবেলের মোবাইল থেকে অপহরণকারীরা ভিকটিমদের পরিবারের নিকট ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবীসহ অপহৃতদের নিযার্তনের ভিডিও প্রেরণ করে। ঘটনাটি জানার সাথে সাথে র‌্যাব-১৫ এর আভিযানিক দল ভিকটিমদের উদ্ধারসহ অপহরণকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে। উক্ত ঘটনাটি ফেইসবুক ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হলে কক্সবাজারসহ দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। র‌্যাব বর্ণিত ভিকটিমদের নির্যাতনের উক্ত ফুটেজে অপহরণকারী চক্রের একজনের চেহারার সামান্য অংশ দেখতে পায়। এপ্রেক্ষিতে ভিডিও ফুটেজে দেখা ব্যক্তিকে সনাক্তকরণসহ অপহৃত ভিকটিমদের উদ্ধারের লক্ষ্যে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের নিমিত্তে র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি ও র‌্যাবের আভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাবের একাধিক আভিযানিক দল ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্তসহ ভিকটিমদের উদ্ধারের লক্ষ্যে একাধিকবার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। গত ২৪ মে ২০২৩ খ্রিঃ র‌্যাবের আভিযানিক দল গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারে যে, উক্ত অপহরণ চক্রের মূলহোতা সৈয়দ হোসেন প্রঃ সোনালী ডাকাত সহ সহযোগীরা হাবিরছড়া দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৪ মে ২০২৩ খ্রিঃ র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার এর একটি আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহরণ চক্রের মূলহোতা সোনালী ডাকাত কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তার সাথে থাকা অন্যান্য সহযোগীরা র‌্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে কৌশলে পালিয়ে যায়।

অপহৃত ভিকটিমদের ব্যাপারে আসামীরা জানায়, ভিকটিমদেরকে গুলি করে হত্যা করতঃ পাহাড়ের উপর থেকে ফেলে দেয় এবং লাশগুলো আগুনে পুঁড়ে আলামত ধ্বংস করে ফেলত। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধৃত অপহরণকারীকে সঙ্গে নিয়ে র‌্যাবের একাধিক দল দীর্ঘ ০৫ ঘন্টা দূর্গম পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে অপহরণকারী চক্রের আস্তানার সন্ধান পায় এবং আস্তনার পাশে একটি স্থানে দুইটি গলিত লাশ ও উক্ত স্থান হতে কিছুটা দূরবর্তী স্থানে আরেকজনের গলিত লাশ পাওয়া যায়। উক্ত লাশগুলো অপহৃত তিনজনের লাশ বলে জানায় ধৃত সোনালী ডাকাত। সে আরও জানায়, বিভিন্ন সময় অপহৃত ভিকটিমদেরকে এই আস্তানায় নিয়ে এসে নির্যাতন করা হত এবং পরিবারের নিকট হতে মুক্তিপণের দাবীকৃত টাকা না পেলে হত্যা করে পাহাড়ী এলাকায় ফেলে দিত। পরবর্তীতে অপহৃত ভিকটিমদের লাশ প্রাপ্তির বিষয়ে জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা এসে বর্ণিত ঘটনাস্থল হতে ভিকটিমদের লাশ উদ্ধার করে।

গ্রেফতারকৃত সোনালী ডাকাতকে অপহরণ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের ব্যাপারে সে জানায় যে, অপহরণ চক্রের সাথে জড়িত অপর একজন নৌকাপথে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার জন্য টেকনাফ থানাধীন তুলাতলীঘাট এলাকায় অবস্থান করিতেছে। একই তারিখ গভীর রাতে র‌্যাবের আভিযানিক দল উক্ত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এমরুল করিম প্রঃ ফইর নামে অপহরণ চক্রের সাথে জড়িত অপর একজন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উল্লেখ্য যে, ভিকটিমদের নির্যাতনের ভিডিওতে ধৃত এমরুল করিম প্রঃ ফইর এর চেহারার কিছু অংশ দেখতে পাওয়া যায়।

গ্রেফতারকৃত অপহরণকারীদ্বয়ের বিস্তারিত পরিচয় ১। সৈয়দ হোসেন প্রঃ সোনালী ডাকাত (৩৫) (এফডিএমএন), পিতা-আবু সামাদ, মোচনী ক্যাম্প, ব্লক-ই এবং ২। এমরুল করিম প্রঃ ফইর (৩০), পিতা-মৃত আব্দুল করিম, সাং-গোদারবিল, ০৬নং ওয়ার্ড, উভয় থানা-টেকনাফ, জেলা-কক্সবাজার বলে জানা যায়।

অপরাধীরা আরো জানায় যে, তারা টেকনাফের দূর্গম পাহাড়ে তাদের তৈরীকৃত আস্তানায় অবস্থান করে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। অপহরণকারীরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনদের অপহরণ করে তাদের গোপন আস্তানায় নিয়ে যেত এবং বারংবার স্থান পরিবর্তন করে অপহৃত ব্যক্তিদের থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে অপহৃত ব্যক্তির উপর চালানো হত পৈশাচিক নির্যাতন। ধৃত অপহরণকারীদ্বয় অপহরণ চক্রের সাথে জড়িত একাধিক ব্যক্তির নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। অপহরণ চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাবের আভিযান অব্যাহত আছে।

গ্রেফতারকৃত অপহরণকারীদ্বয়ের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ