• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৬:২১ পূর্বাহ্ন

আমাকে পছন্দ না হলে ভোট দিয়েন না, মারবেন কেন: হিরো আলম

ডেস্ক নিউজ / ২৯ ভিউ টাইম
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে হামলার শিকার স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম বলেছেন, ‘আমাকে পছন্দ না হলে আমাকে ভোট দিয়েন না, এড়িয়ে যান ৷ কিন্তু আমাকে মারার অধিকার দেওয়া হয় নাই।’

আজ বৃহস্পতিবার হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা সাড়ে ৩টায় ব্যক্তিগত সহকারী শুভকে নিয়ে তিনি ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

হিরো আলম বলেন, ‘সেদিন যেভাবে আমাকে মারা হয়েছে—একমাত্র ওপর আল্লাহর জন্য আমি বেঁচে আছি। হামলাকারীরা আমাকে পাষন্ডের মতো মেরেছে। তাদের বিবেকে বাধেনি। মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরও তারা আমাকে মেরেছে।’

এই সরকারের অধীনে তিনবার নির্বাচন করার প্রসঙ্গে হিরো আলম বলেন, ‘এই সরকারের আমলে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনবার নির্বাচন করে মার খেয়েছি। প্রথমে ২০১৮ সালে, এরপর বগুড়ায় উপনির্বাচনে জিতেও ফল দেয়নি। আবার ঢাকায় উপনির্বাচন করতে এসে মার খেলাম। আমি চেষ্টা করেছি, সুষ্ঠু ভোট হোক, ভোটাররা ভোট দিতে আসুক। কিন্তু মার খেলাম। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাব না।’

হিরো আলম ডিবি কার্যালয়ের ভেতরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলাম। সেখানে ভোটের শেষ মুহূর্তে আমার ওপর হামলা হয়। সেখানে হামলায় কারা কারা ছিল তাদের শনাক্তের জন্য আমাকে ডাকা হয়েছিল। আমি ডিবির প্রতি কৃতজ্ঞ—তারা দ্রুত হামলাকারীদের ধরেছে, যা ভাবতেও পারিনি। আমি ভেবেছিলাম হামলাকারীরা ক্ষমতাশালী দলের লোক। তাদের হয়তো ধরবে না।’

হিরো আলম বলেন, ‘এই নির্বাচনে হামলায় আমি মারাও যেতে পারতাম। নির্বাচন নির্বাচন করে অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে। বউ স্বামী হারিয়েছে। যারা ক্ষমতাশালী দলের লোক তারা ঠিকই ক্ষমতা দেখায়, ক্ষমতা আদায় করে। নির্বাচন করতে এসে কোনো মায়ের যেন বুক খালি না হয়। যারা হামলা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

জড়িত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ডিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালও ঘটনার সময় বিজিবির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হিরো আলম। তিনি বলেন, ‘আমাকে যখন মারে, তখন আমি কেন্দ্রের সামনে থাকা বিজিবির গাড়ির কাছে গিয়েছিলাম। তারা কিন্তু গাড়ি থেকেই নামেনি। কেন্দ্রের ভেতরে থাকা পুলিশ সদস্যরা যখন জানলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে মারা হচ্ছে—এটা শুনেও তারা কেন বের হননি? বরং তারা আমাকে মারার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। এগুলোর তদন্ত হওয়া দরকার।’

হামলার ঘটনা জড়িতরা কারা? তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘হামলাকারীদের গায়ে নৌকার ব্যাজ দেখেছিলাম। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কিছু লোকজন ছিল, কিছু ভাড়া করা লোক ছিল। কিছু আওয়ামী লীগের ব্যাজ পরা ছিল। প্রকৃত আওয়ামী লীগের কয়জন তা জানি না, তাদের কজন পদের লোকজন ছিল জানি না।’

হামলার ঘটনা সাজানো এমনও শোনা গেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, ‘হামলায় যদি আমার লোকই থাকে, তবে তো আমার লোকই ধরত। যাদের ধরে আনা হয়েছে, তাদের তো রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডে তারা যদি বলে ওরা আমার লোক, তাহলে আমি দাদা মাথা পেতে নেব।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপনি সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো ভোট পেয়েছেন। অন্যরা অনেকে জামানত হারিয়েছেন। আপনার কি মনে হয়, একজন প্রার্থী যখন আক্রমণের শিকার হন তখন এ রকম ক্ষমতাসীন দলের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব—এমন প্রশ্নের উত্তরে হিরো আলম বলেন, ‘না, এ রকম নির্বাচন হলে…আমার মনে হয় কোনো দল নির্বাচনে আসবে, সাধারণ মানুষ হয়তো মনে করেছিল আমরা কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করব। তারা আর কেউ নির্বাচনে আসবে না।’

কারণ হিসেবে হিরো আলম উল্লেখ করে বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠে একদিকে মার খেতে হচ্ছে, টাকাপয়সার যাইতেছে। তাদেরকে আবার মামলারও শিকার হতে হচ্ছে। মানুষ যদি এত কিছুর শিকার হয়, তারা তো নির্বাচনে যাবে না। আমার মনে হয় না, আর কখনো কেউ নির্বাচনে আসতে পারে।’

পুলিশ কি সেদিন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিল—জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘আমার ওপর যখন হামলা হয় তখন পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে সত্যিই ব্যর্থ হয়েছিল। পুলিশ ইচ্ছা করলে তাদের কর্তব্য পালন করতে পারত। প্রথমে একটা ছেলে আমাকে ঘুষি মারে। আমি কিন্তু দৌড়ে গিয়ে তাকে বলেছি এই ঘুষি মারলি কেন? আমি পুলিশকে বলছি, এই লোকটি আমাকে ঘুষি মেরেছে। পুলিশ কিন্তু তাকে ধরেনি। উল্টো আমাকে ধরে রেখেছিল। পুলিশের উচিত ছিল তাকে ধরা। তাহলে আর কেউ আমার ওপরে হাত দিতে পারত না। সেদিন ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা কেন নীরবতা পালন করেছিল, সেটি আমি জানতে চেয়েছি ডিবির প্রধান হারুন সাহেবের কাছে।’

জাল ভোট সম্পর্কে হিরো আলম বলেন, ‘হ্যাঁ, সেদিন জাল ভোট পড়েছিল। আমার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে। এক হাজার করে টাকা ভোটকেন্দ্রে দেওয়া হয়েছে। একজন ৫০টা করে ভোট দিছে। ১২ বছর ১৩ বছরের ছেলে-মেয়েকে তারা ভোট দিতে পাঠাইছে, সিল মারতে পাঠাইছে। ভোটার তালিকা তাদের নামও নেই।’

১৩টি এম্বাসি ও মিশন আপনার পাশে দাঁড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যাতে সফল হয় সেটিকে ত্বরান্বিত করার জন্য তারা আপনাকে সমর্থন জানিয়েছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন—হিরো আলম বলেন, ‘এটাকে আমি সমর্থন করি এবং খুবই ভালোভাবে দেখি। এই যে অন্যায়-অত্যাচার হচ্ছে, মায়ের বুক খালি হচ্ছে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনার হয়তো চুপচাপ সহ্য করতে পারে, কিন্তু বাইরের দেশ সবাই এক না, একটা লোককে কুত্তার মতো পেটানো হয়েছে, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সবাই তো আর এক না যে নীরবতা পালন করবে। তারা দেখছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাই তারা (বিদেশিরা) কথাবার্তা বলছে ৷’

আপনি আবারও নির্বাচন করবেন কি না জানতে চাইলে—হিরো আলম বলেন, ‘না, এই সরকারের অধীনে আর আমি নির্বাচন করব না।’


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ